বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উপকূলের কোটি মানুষকে সোমবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দূর্যোগ দূর্ভাবনায় রেখে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ ভোলা ও হাতিয়াÑস্বন্দীপের মধ্যবর্তি মেঘনা উপক’ল হয়ে স্থলভাগ অতিক্রমের মধ্যেই দূর্বল হয়ে পড়েছে। প্রায় ৬০Ñ৭৫ কিলোমিটোর বেগের ঝড়ো হাওয়ায় গাছ চাপা পড়ে ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাশনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গত দুদিনের প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর জমির আমন ধান এখন পানির তলায়। প্লাবিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর পুকুর দীঘি ও ঘেরের মাছ। দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার প্রায় ৩ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে কম-বেশী ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় গ্রহন করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীÑসিপিপি’র প্রায় ৭৬ হাজার সেচ্ছাসেবক সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দক্ষিণ উপক’লে সতর্ক বার্তা প্রচার সহ লাখ লাখ মানুষ সহ লক্ষাধিক গবাধিপশু নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে ব্যাপক তৎপড় ছিল।
‘সিত্রাং’ সোমবার বিকেলের দিকে গতিপথ আরো পরিবর্তন করে পূর্ব ও উত্তরÑপূর্ব দিকে ভোলা ও হাতিয়াÑস্বন্দীপের মধ্যবর্তি মেঘনা উপক’লে এগুতে থাকলে বরিশাল, পটুযাখালী, বরগুনা ও বাগেরহাট এলাকার আবাহওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। পাশাপাশি মেঘনায় ভোলা ও স্বন্দীপ উপক’লে আঘাত হানার সাথেই মাঝারী মাত্রার এ ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ দূর্বল হতে শুরু করে।
ভোলা সহ উপক’লের কিছু এলাকায় ফলে সোমবার রাতটিকে যেভাবে ভয়াল আতংকের বলে আশংকা করা হয়েছিল সন্ধার পরেই সে চিত্র পরিবর্তন হতে শুরু করে। রাত দেড়টায় আবহাওয়া বিভাগের ১২ নম্বর বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড়টি উপক’ল অতিক্রমের কথা জানিয়ে তা ক্রমশ দূর্বল হচ্ছে বলেও জানান হয়। পাশাপাশি পায়রা সহ সব সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সংকেত ৩ নম্বরে নামিয়ে আনা হয়। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরগুলোতেও সতর্ক সংকতে দুই নম্বরে হ্রাস করা হয়েছে। ফলে ৬৫ ফুট উর্ধের নৌযান চলাচলে এখন কোন বাধা নেই।
বরিশাল,পটুযাখালী,পিরোজপুর ও ঝালকাঠীতে সোমবার রাত ৮টার মধ্যেই বৃষ্টিপাত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সারা রাত আর তেমন ঝড়-বাদল না হলেও দক্ষিনাঞ্চলের বেশীরভাগ একাই ছিল বিদ্যুৎ বিহীন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে সোয়া ৩শ মিলিমিটার এবং সাগর পাড়ের খেপুপাড়ায় ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বরিশঅল মহানগরীল প্রায় ৫ভাগ এরাকা এখওনো পানির তলায়অ। তবে দক্সিনাঞ্চলের সবগুরো নদীল পানি এখন বিপদ সীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিন দিন পরে আজ(মঙ্গলবার) সকাল ৮টা দু মিনিটে বরিশাল মহানগরীতে সূর্য হাসি মেললেও মাঝে মাঝেই মেঘ তাকে আড়াল করলেও দূর্যোগের আতংক কাটিয়ে একটি সুন্দর দিনের সূচনায় দক্ষিণাঞ্চলবাসী অনেকটাই প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
তবে গত দুদিনের প্রবল বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৭লাখ হেক্টর জমির আমন ধান এখন পানির তলায়। অতি দ্রুত পানি সড়ে না গেলে এবার দক্ষিণাঞ্চল থেকে যে ১৫ লাখ টন আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছিল কৃষি মন্ত্রনালয়, তা দুরাশায় পরিনত হতে পারে বলেও শংকিত কৃষিবীদগন। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীদের দ্রুত এলাকায় খোজ খবর নেয়া সহ কৃষকদের সব ধরনের কারিগড়ি পরামর্শ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপর দিকে দক্ষিনাঞ্চলের ৪২টি উপজেলার প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার পুুকুর ও দীঘি সহ বিপুর সংখ্যক ঘের প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ মাছ ও পোনা ভেসে গেছে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন মৎস্যজীবীগন। মৎস্য অধিদপ্তর খোজ খবর নিতে শুরু করেছেন। মাছে উদ্বত্ত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৫৪.৬০ লাখ হেক্টর জলাশয়ে বছরে ৮ লাক্ষাধিক টন মাছ উৎপাদন হয় বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে।
এদিকে সোমবার দিনভরই বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকলেও সন্ধার পরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে। রাতভর চেষ্টা করেও অনেক এলাকায় আলো দিতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। সকাল সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকাই ছিল বিদ্যুৎ বিহীন।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, পূর্বÑমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভ’ত হয়ে রোববার ঘূর্ণীঝড় ‘সিত্রাং’এ পরিনত হয়। ঘূর্ণীঝড়টি রোববার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার সন্ধা ৬টার মধ্যে প্রায় ৬শ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে বায়ে রেখে রাত ৯টার মধ্যেই মেঘনায় হয়ে ভোলা ও স্বন্দীপ উপক’লে আঘাত হানে। তবে আগে ঝড়টি বরিশাল ও খেপুপাড়া উপকুলের দিকে এগুচ্ছে। ফলে তা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বরিশাল ও ভোলা উপক’লীয় এলাকায় আঘাত হানার সম্ভবনা থাকলে সোমবার সন্ধার আগেই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।