রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাইচাইল গ্রামে গত ১ মাসে খালের ভাঙনে প্রায় ৩৩ বসত ভিটা বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে গত ২ থেকে ৩ দিনে ভাঙনের তিব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০ পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়। এনিয়ে উৎকণ্ঠায় আছে ওই এলাকার বেশ কিছু পরিবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাইচাইল গ্রামে ভাঙন চলছে। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তালতলী-গৌরগঞ্জ খালে তীব্র স্রোত বইছে। আর স্রোতের মধ্যেই চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেড। স্রোত আর বাল্কহেডে উৎপন্ন ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসত ভিটা। ইতোমধ্যে ওই গ্রামের ১৫টি পরিবারের ৩৩টি বসত ভিটা ওই খালের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ১৫টি পরিবারের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তালতলা গৌরগঞ্জ খালটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গৌরগঞ্জ এলাকার পদ্মা নদী হতে পাশের টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলা হয়ে সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা এলাকার ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও খালটি মরা খালের মতো থাকলেও অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে এ খাল হতে মাটি কাটায় এবং এই খাল দিয়ে অসংখ্য বাল্কহেড চলাচল করায় বিগত কয়েক বছর ধরে এ খালের লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর টঙ্গিবাড়ী উপজেলার শিলিমপুর এলকার বেশ কিছু বসতভিটা এই খালে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর শিলিমপুরের পাশের গ্রাম কাইচাইলে এই ভাঙন চলছে। এলাকবাসীর অভিযোগ খাল হতে অবৈধভাবে বালু কর্তন আর অবাধে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, গত এক মাসে কাইচাইল গ্রামের মনির হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, ইমরান খান, মোতালেব বেপারী, শাহালম, আলমগীর, জাহাঙ্গীর, হাসমত আলী বেপারী, খালেক সেখ, বারেক সেখ, আব্দুল মালেক সেখ, সানাউল্লাহ বেপারী, আহসান উল্লাহ বেপারী, জসিম বেপারীসহ অন্যান্যদের ৩৩টি বসত ভিটা ওই খালে বিলীন হয়ে গেছে।
বাপ ও চাচাদের মিলে মাত্র ৪ শতাংশ বসত ভিটা ছিল ওই গ্রামের দুই ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইমরান হোসেনের। দুই ভাইয়ের পরিবার ও মা তাসলিমা বেগমকে নিয়ে ওই ৪ শতাংশের মধ্যেই বসবাস করতো তারা। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে খালের পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে দুই ভাইয়ের বসতভিটা। এখনো পাশের এক বাড়িতে টিন ও কাঠ দিয়ে নির্মিত তাদের ঘর দু’টি রাখলেও নতুন করে নির্মাণের মত স্থান পাচ্ছেন না। এর মধ্যে ইমরানের অপরের বাড়িতে ঠাই মিললেও মা তাসলিমা বেগম ছেলে জাহাঙ্গীর তার স্ত্রী রুপা বেগম এর ঠাই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ভুক্তভোগী বৃদ্ধা মা তাসলিমা বেগম (৬৫) কান্নায় জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের জায়গা নেই, বাসা নেই। আমরা এখোন অনেক অসহায় পরে আছি। কোথায় যাবো জানিনা। ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, আমাদের ৪ শতাংশ বাড়ি ছিল ভাইঙ্গা গেছেগা। কোথায় হতে কোথায়ও যাওয়ার মতো যায়গা নাই। খাওন বলতে কিছু নাই। গাছ তলায় বসে থাকি। গাছের তলায়ই খাওয়া দাওয়া করি। পাশের এক বাড়ি হতে ভাত দিয়ে যায়। দিয়ে গেলে খাই না দিয়ে গেলে না খেয়ে থাকি।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ৭দিন ধরে আমাদের ঘর ভাইঙ্গা গেছে। বাড়ি ভাইঙা যাওয়ার পর পাশের বাড়ির এক ভাই বলতেছে আমাগো এখানে এখনো চকি বিছাইয়া আপতত থাক দেখি কি করতে পারি। এখোন আমাদের থাকার কোন যায়গা নাই। আমরা খুব অসহায় আছি রাইতে খোলা আকাশের নিচে বাচ্চা লইয়া থাকি।
ওই এলাকার হাসমত আলী বেপারী স্ত্রী সালেহা বেগম (৭৫) ঘরের দরজায় বসে বিলাপ করছিলেন। পাশেই চলছে তার ছেলে আলমগীরের পাকা ভবন ভাঙনের কাজ। এর আগে খালের ভাঙনে বিলীন হয়েছে তার অপর তিন ছেলে জাহাঙ্গীর, মোতালেব ও শাহ আলম এর বসতভিটা। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, বিয়ের পর স্বামী আমারে এই বাড়িতে এনে তুলছে। আজ সেই বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। আমার ছেলে নাতি নাতকুরদের নিয়ে কোথায় যাইবো।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য নবী হোসেন বলেন, খালের ওই পারে সম্রাট কোল্ডস্টোর। সম্রাট কোল্ডস্টোরের মালিকেরা ওরা খালে ড্রেজার বসিয়ে এ পারের খালের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। এতে এপারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অসহায় মানুষের বাড়িঘর ট্রয়লেড যা যা ছিল সব ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। এমোন মানুষ আছে যাদের আর এক শতাংশ জমিও নাই ঘর উঠাইবো কোথায় এখোন মানুষগুলোর যাওয়ার মতো যায়গা নাই। আমি সরকারে কাছে সাহয্যের প্রার্থনা করছি।
এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা ওই এলাকার চেয়ারম্যানের কাছ হতে একটা লিস্ট পেয়েছি। ভাঙন চলমান। সরকারিভাবে ভাঙন কবলিতদের যে ধরনের সহয়তা পাওয়ার কথা তার সব ব্যবস্থাই আমরা করবো। একটি পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে তাকে অবহিত করলে তিনি বলেন আমি অবশ্যই তার বসবাসের ব্যবস্থা করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।