Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে দক্ষিণ উপক’লে চরম দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া

প্রবল বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত উদ্ধারকাজে ৭৫ হাজার সেচ্ছাসেবক

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৫:০৩ পিএম | আপডেট : ৬:৪৬ পিএম, ২৪ অক্টোবর, ২০২২

গভীর নি¤œচাপ ‘সিত্রাং’ গতিপথ পরির্বতন করে দেশের দক্ষিণ উপক’লের খেপুপাড়া হয়ে বরিশালের দিকে এগুচ্ছে। মঙ্গলবার শেষ রাতে ঝড়টি উপক’লে আঘাত হানার কথা খাকলেও রোববার মধ্য রাত থেকেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। সোমবার সন্ধায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জনপদ প্লাবিত হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। বরিশাল বিমান বন্দরে সব ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নৌ যোগাযোগও বন্ধ। বৃষ্টির সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারের পানিতে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ তার ৯টি গেজ স্টেশন থেকে তিন ঘন্টা অন্তর নদ-নদীল উচ্চতা পর্যবেক্ষন করছে।

ঘূর্ণিঝড়েরর অগ্রবর্তি অংশ, অমাবশ্যার ভরা কোটাল ও বায়ুচাপ পার্থকের আধিক্যের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় জেলাসমুহে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭Ñ১০ ফুট উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাশে প্লাবিত হবার আশংকার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বায়ু তাড়িত মেঘমালার কারণে উপক’লীয় এলাকায় ভারি থেকে আরো অতি ভারি বর্ষণের কথাও বলা হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরগুলোকেও ৪ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের সব নৌ পথগুলোতে যেকোন ধরনের নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উপক’ল সহ ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তি এলাকায় সাগর যথেষ্ঠ উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটার পর্যূন্ত বলে জানান হয়েছে। ফলে খুব বড় বিপর্যয়ের আশংকা না থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় ৭ লাখ হেক্টর আমন ধান নিয়ে শংকিত কৃষি যোদ্ধাগন। পাশাপাশি শংকাও বাড়ছে উপক’ল সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনমানুষের। সম্ভাব্য সব ক্ষতি মোকাবেলায় প্রশাসনের তরফ থেকে প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরেও নিয়ন্ত্রন কক্ষ চালু করে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে সকাল ৭টার মধ্যেও ঝড়টি আঘাত হানলেও এর তীব্রতা কিছুটা কম হবার সম্ভবনা রয়েছে ঐ সময়ে উপক’লীয় এলাকায় ভাটার কারণে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটর ঘূর্ণীঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর প্রায় ৭৫ হাজার সেচ্ছা সেবকগন উপক’লীয় বেড়ী বাঁধের বাইরের লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতেও শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে রাংগাবালী, দশমিনা, তালতলীর বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমুহের অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটতে শুরু করেছে। পটুয়াখালীতে ৭০৩টি ও পিরোজপুরে ২৬০টি সহ দক্ষিণাঞ্চরে ণপ্রায় ৩ হাজারন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তুত রয়েছে।
রোববার সকাল থেকে উপক’ল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে হালকা থেকে ভারী বর্ষণে মেঘলা আকাশে সূর্যের দেখা নেই। বরিশালে রোববার সন্ধা ৬টা পর্যন্ত ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও সন্ধা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩৬ মিলিমিটার । কিন্তু সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশালে আরো প্রায় ৭০ মিলিমিটার এবং সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৩২মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সব মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারসমুহকে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। ২২ দিনের ইলিশ আহরনে নিষেধাজ্ঞায় সাগর উপক’ল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায়ই মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলে পল্লী গুলোতে নিরবতার সাথে নৌকা ও ট্রলার নিরাপদে মৎস্য বন্দরে রয়েছে। দুবলার চরেও কোন জেলে নেই বলে রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, পূর্বÑমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভ’ত হয়ে রোববার ঘূর্ণীঝড় ‘সিত্রাং’এ পরিনত হয়। ঘূর্ণীঝড়টি রোববার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধা ৬টার মধ্যে আরো ২০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থান করলেও এটি ক্রমশ ঘনিভ’ত হয়ে বরিশাল ও খেপুপাড়া উপকুলের দিকে এগুচ্ছে। ফলে তা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বরিশাল ও ভোলা উপক’লীয় এলাকায় আঘাত হানার সম্ভবনা রয়েছে বলেও মনে করছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগন।
এ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ৭লাখ হেক্টর জমির আমন ফসল চরম ঝুকির কবলে পড়ল। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দেশে সাড়ে ১৫ লাখ টন আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের অভাবের সাথে কয়েক দফায় ফুসে ওঠা সাগরের প্লাবন সহ অতি বর্ষণে আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪% ঘাটতি ছিল। এখন সিত্রাং-এর প্রভাবে ফসলের ক্ষতি কোন পর্যায়ে যায়, তা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষক। গত মে মাসের ঘূর্নিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবেও এ অঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ