Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাজারের উত্তাপ কমেনি

খোলা চিনির কেজি ১০০ টাকা, বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

এক মাসের ব্যবধানে দুবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবু চিনির দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশিতে চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বিক্রেতাদের গৎবাঁধা উত্তর, বেশি দামে কেনা তাই বিক্রিও বেশিতে। অথচ এক সপ্তাহ আগে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম সমান (প্রতি কেজি ৯৫ টাকা) হয়ে গিয়েছিল। এখন খোলা চিনি আরও ৫ টাকা বেশি, কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে খোলা চিনির সরবরাহ কম। আর প্যাকেটজাত চিনি সবখানে মেলেও না। সরকার নির্ধারিত নতুন দাম অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে বাজার পরিস্থিতি ভিন্ন। এর আগে আরও একবার চিনির দাম বেঁধে দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে এখন খোলা চিনি প্রতি কেজি ১০০ টাকার নিচে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারিতে যাঁরা এই চিনি বস্তা ধরে কিনছেন, তারাও ৫০ কেজির বস্তা কিনছেন ৪ হাজার ৯০০ টাকার ওপরে। সামান্য লাভ রেখে কেজি ১০০ টাকার ওপরে তা বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা চিনির সরবরাহ কম বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
মৌলভীবাজারের পাইকারি এক চিনি ব্যবসায়ী বলেন, মিল (রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান) থেকে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী চিনি দেয়া হচ্ছে না। আর দামও রাখা হচ্ছে বেশি। তাতে সরকার নির্ধারিত দামে কোনোভাবেই চিনি বিক্রি করা সম্ভব নয়। এ জন্য চিনির বিক্রিই বন্ধ রেখেছি। তবে মিল থেকে চিনি সরবরাহ ঠিক আছে বলে জানিয়েছেন মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক এস এম মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, মিল থেকে খোলা চিনি সরবরাহ বন্ধ করা হয়নি। আর প্যাকেটজাত চিনির বিক্রি খুব বেশি নয়। তবে কয়েক মাস ধরে চিনির দাম বাড়তি। এখন সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণ, প্যাকেটজাত চিনির দাম রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়। এই সুযোগে অনেকে প্যাকেট চিনি ভেঙে আধা কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছেন রিপন মিয়া। তিনি বলেন, অল্প একটু চিনি নেব বলে এসেছিলাম। খোলা চিনি ১০০ টাকা নিল। যা অবস্থা তাতে চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে। এদিকে সব মুদি দোকানেও মিলছে না চিনি। অল্প কিছু দোকানে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ দোকানেই নেই প্যাকেটজাত চিনি। এর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে চিনি কিনে বিক্রি করলে ম্যাজিস্ট্রেট এসে জরিমানা করে। কিন্তু কোম্পানি থেকে বেশি দামে বিক্রি করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
মতিঝিলের মুদি দোকানি আরাফাতেরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, আমরা চিনি কিনতে গেলে পাচ্ছি না। বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। আমরা বেশি করে চাইলেও পাচ্ছি না। বেশি দামে কিনে এনে বেশিতে বিক্রি করলেও দোষ। ক্ষোভের সঙ্গে এই দোকানি বলেন, বাজারে অনেকেই চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আমিও দেব ভাবছি। এ বিষয়ে আমিন ব্রাদার্সের ডিলার আমিনুল জানান, গ্যাস ও বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে পণ্যের উৎপাদন কম বলে জানাচ্ছে কোম্পানি। এ কারণে কোম্পানি পণ্য চাহিদামত দিতে পারছে না। অর্ডার করলে ৭-৮ দিন পরে আসছে এক ট্রাক পণ্য যেটা আগে একদিনেই মিলত। এই কারণে তারা খুচরা বা পাইকারি দোকানগুলোতে বেধে দেয়া দামে পণ্য দিতে পারছেন না। গত ৩ অক্টোবর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৭৮ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। আগে এই তেল বিক্রি হচ্ছিল ১৯২ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯৪৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা কমিয়ে করা হয় ৮৮০ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৭ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা করা হয়। যদিও এখনও ঠিক হয়নি তেলের বাজার। একেক স্থানে একেক দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কারওয়ান বাজারে দুই ধরনের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ ও ৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ ও ৫০ টাকা। তবে অন্য বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি ছিল। মতিঝিল রেলওয়ে কলোনি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ টাকা। ছোট বাজারগুলোতে ৫৫ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। গত সপ্তাহেও এর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
যদিও পেঁয়াজের দামই বাড়েনি। আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে পাকিস্তানি কক ও লাল লেয়ার মুরগির দাম। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, এর আগে তা বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকায়। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে পাকিস্তানি কক ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোনালী মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। এটি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে গত সপ্তাহে। তবে ঠিক আছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এটি কেজিতে ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, গরুর গোশত বিক্রি ৭০০ টাকা, খাসির গোশত ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহের চেয়ে কোনো সবজির দাম বাড়েনি, বরং কমেছে দুই-একটির। বিক্রেতা রবিউল আউয়াল জানান, আগের থেকে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে করলা ও সিম। প্রতি কেজি সিম বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি করলা, ঝিঙে, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়স, পটল, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়াও টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, শশা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ