Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৫০ বছরেও সেতুর স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি

পানগুছি নদীতে ব্রিজ হলে পর্যটন আকর্ষণ বাড়বে সুন্দরবনে

ফাহাদ হোসেন, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সুন্দরবনের কোল ছুঁয়ে যাওয়া পানগুছি নদীতে একটি সেতুর জন্য বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরনখোলা উপজেলার মানুষ দীর্ঘ ৫০ বছর অপেক্ষা করছে। এই নদীতে সেতু না থাকায় মোরেলগঞ্জ, শরনখোলার মানুষের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নির্বাচনকালে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কেউ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হননি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই আসনের এমপি ও সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেতু নির্মাণের দাবি জানান, পরবর্তীতে সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ২০২০ সালে সেতু নির্মাণ কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা হয় সে লক্ষে বর্তমান এমপি এড. আমিরুল আলম মিলন তদবির শুরু করেন, তার নির্বাচনী একটি ইশতেহার ছিল পানগুছি নদীতে সেতু নির্মাণ। তার একান্ত প্রচেষ্টায় গত বছর একনেক সভায় সেতুটি নির্মাণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সেতু মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, মোরেলগঞ্জ-শরনখোলা সড়কে পানগুছি নদীর ওপরে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ৯১২ কোটি ৩৩ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যায়ে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ মেয়াদে একনেক কর্তৃক অনুমোদনের নিমিত্ত প্রকল্পসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে (ডিপিপি) তে অনুমোদন হয়, ডিজাইন সম্পন্ন হয়, সর্বশেষ কনসান্টেন্ট নিয়োগের প্রসেস চলছে, মুল কাজ কবে শুরু হবে সেই অপেক্ষায় এ অঞ্চলের মানুষ। সেতু হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরিই হলো নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেই ফেরি পার হতেও সাধারণ মানুষকে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দীর্ঘ যানযট নদীর দুইপারের এখন নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা, সেতু না হওয়া পর্যন্ত জনদুর্ভোগ যেন কমছে না। ২ উপজেলার লাখো মানুষের প্রাণের দাবি কবে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

অবহেলিত মোরেলগঞ্জের এ পানগুছি নদীর উপর সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সূচিত হবে। কয়েকযুগ আগেও দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় দিনরাত মুখরিত থাকতো এ অঞ্চল। সে সময় রাস্তা-ঘাট ততটা উন্নত ছিল না তাই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নদী পথে লঞ্চ, স্টিমার ও বড় বড় নৌকা। কালের বিবর্তনে এবং দেশের স্থলপথের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। বছরের পর বছর চরম অবহেলিত এ অঞ্চলের হাজার হাজার পেশাজীবী মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ফেরি, নৌকা ও ট্রলার যোগে এই পানগুছি নদী পার হয়ে অন্যত্র যাতায়ত করছেন, নদী তীরবর্তী এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দূরবর্তী হওয়ায় স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই নদী পার হয়ে মোরেলগঞ্জ শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করছেন। বিভিন্ন সময় নৌকাডুবির মত মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটছে এ নদীতে তাই, অবহেলিত এ অঞ্চলের লোকজনের দাবি পানগুছি নদীর উপর একটি সেতু। সেতুটি নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিপ্লব ঘটবে, নদীর পারে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান ফলে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, শুধু তাই নয় সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মহাসড়কের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ হবে। একটি মাত্র সেতু নির্মাণের ফলে সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সহজে যোগাযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এড. শাহ-ই আলম বাচ্চু বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেতুর বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে, আশা করছি খুব দ্রুতই সেতুটি নির্মাণ হবে।

সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে মোরেলগঞ্জ মেয়র বলেন, পানগুছি নদীতে একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী ও শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি’র এক অনন্য উপহার।

এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট জেলা সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, পানগুছি নদীতে সেতুর নির্মাণ একটি বড় প্রকল্প, ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে, কনসাল্টেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, খুব দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে, আশা করি ৭/৮ মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ