Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শ্রীনগরে বিদ্যালয় সভাপতির বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৩০ পিএম

শ্রীনগরে উপজেলার বাঘড়া স্বরুপ চন্দ্র পাইলট উ”চ বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্বসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরজমিনে বিদ্যালয় সহ বাঘড়া এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, বাঘড়া বিদ্যালয়টির সভাপতি শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান পিন্টু। তিনি প্রায় দেড় যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এই সময় কালের মধ্যে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ মে বিদ্যালয়ের ৩৩ নং ভাউচারে বিদ্যালয়ের পুরাতন অফিস কক্ষের জল ছাদ দেওয়ার জন্য উত্তোলন করা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা। বাস্তবে কোন জল ছাদের কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ১৮ জুলাই বিদ্যালয়ের পুকুর পাড় ভরাটের জন্য ১০ নং ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয় ৯৫ হাজার টাকা। একই কাজের জন্য ২০২০ সালের ২ ফেব্রæয়ারী ২ নং ভাউচারে ২ লাখ ৬৫ হাজার ও ৩ নং ভাউচারে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ¯’ানীয়রা জানায়, পুকুরে ১ টাকার মাটিও ভড়াট করা হয়নি। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাঘড়া বাজারের মেসার্স আবীর এন্টারপ্রাইজের ভাউচারে মাধ্যমে বিদ্যালয়টির ৩ টন রড,২৫০ বস্তা সিমেন্ট ও ২৭ হাজার ইট ক্রয় বাবদ ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বিক্রেতার স্বাক্ষরের ¯’ানে মোঃ শান্ত নামের একজনের স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ ওই প্রতিষ্টানে গিয়ে জানা যায় এতো টাকার রড সিমেন্ট তিনি কখনোই স্কুলে বিক্রি করেননি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নুরুন্নবী বলেন ২৭ হাজার ইট বিক্রির বিষয়টি পুরোপুরি ভুয়া, আর শান্ত নামে এই প্রতিষ্ঠানে কেউ কখনো ছিল না। ২০২২ সালের ১০ ফেব্রæয়ারী একই বাজারের আলমাস স্টিলের ১৭৭৩ ভাউচারে স্কুলের দরজা,জানলা তৈরি ও মেরামত বাবদ পরিশোধ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিষ্টানটিতে গিয়ে ওই ভাইচারের মালিক পক্ষের কপিটি পুরোই সাদা দেখা যায়। এই বিষয়ে মালিক আলমাছ খান বলেন, এই বছর তিনি স্কুলের কাজ করেননি,আর ভাউচারের স্বাক্ষরটিও তার নয়। ২০১৯ সালে ২৪ মে দোহার উপজেলার ফুলতলা বাজারের রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ থেকে টাইলস ক্রয় বাবদ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। কিন্তু রাইয়ান এন্টারপাইজে খোজ নিয়ে জানা যায় তারা বিদ্যালয়ে কোন টাইলস বিক্রি করেননি। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পানির পাইপ লাইন মেরামতের মজুরি বাবদ উত্তোলন করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ টাকা । সরজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ১ গজ পানির পাইপ লাইন টানতেই এই টাকা খরচ করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির সন্মুখের গেটটি ২০১৭-১৮ সালের এল,জি,এস,পি-৩ প্রকল্পের অধীনে নির্মান করা হয়। এই গেটটি নির্মাণ বাবদ উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এভাবে বিভিন্ন ভূয়া ভাউচারে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

অপর একটি সূত্র জানায়, ৪টি নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির সভাপতি প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এই বিষয়ে বিদ্যালয়টির হিসাব রক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা তার অধীনে চাকুরী করি তাই আমাদের করার কি আছে? আর ভাউচারের স্বাক্ষর আমার নয়। তা জালিয়াতি করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।

বিদ্যালয়ের ক্রয় কমিটির সদস্য শিক্ষিকা হালিমা বলেন, এসব ভাউচারের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, সভাপতি যখন যেভাবে টাকা তুলতে বলেছে সেভাবেই তাকে টাকা তুলে দিয়েছি। কিন্তু সভাপতি বলেছেন ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্তে প্রধান শিক্ষক টাকা তুলে তছরুপ করেছেন এমন কথায় প্রধান শিক্ষক জানান, আমি এমন করে থাকলে সভাপতি হিসাবে ভাউচারে স্বাক্ষর দিল কে? আর আমার বিরুদ্ধে তিনি কেন ব্যবস্থা নিলেন না?

বিদ্যালয়ের সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে সাক্ষর নিয়ে টাকা তুলে তছরুপ করেছে। কিন্তু সভাপতি হিসাবে আপনি কেন ব্যবস্থা নেননি এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ