Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হাজীগঞ্জের কুচির বিল ও বলাখালের শত শত কৃষক বিপাকে

স্থায়ী বাঁধ দেয়ায় ডাকাতিয়ায় নামতে পারছে না পানি

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমির পানি আটকে থাকার কারণে বীজতলা বা চাষের জমি তৈরি করতে পারছে না কৃষককুল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি আটকে থাকার বিষয়টি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ ঘূর্নিঝড় নাডাকে দায়ী করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের দায়হীনতার জন্য পানি জমে থাকার কথাটি সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা ইনকিলাকে নিশ্চিত করেছেন। সরজমিনে দেখা যায় উপজেলার দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নের খোদাইবিলের উত্তর অংশ ব্রাক্ষনগাঁও এলাকার পানি পুরোপুরি না নামার কারণে এই অঞ্চলের কৃষকরা এখনো বোর ধান কাটতে পারছে না। এর পরের ফসল আলু, কাউন, বাঙ্গি কিংবা অন্য ফসল রোপণের জন্য জমি তৈরি করতে পারবেন কিনা তা জানে না কৃষকরা। সম্প্রতি সরজমিনে আরো দেখা যায়, বলাখাল এলাকার রেল লাইনের উত্তরের মাঠ কুচির হিসেবে খ্যাত। এ বিলের পানি এখনো না নামার কারণে এই মাঠের কয়েকশ’ কৃষক বীজতলাসহ ফসলের জমি তৈরি করতে পারছে না। কুচির বিলের উত্তরে রামপুর নওহাটা, দক্ষিণে বলাখাল, পশ্চিমে সিদলা নওহাটা, পূর্বে সুবিদপুর মিলিয়ে বিশাল বিস্তৃতি এলাকার জুড়ে এ মাঠের অবস্থান। বর্ষা মৌসুমের ও সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির পানি কুচির বিলে আটকে পড়ে। এ বিলের পানি বলাখাল বাজারের পূর্ব পাশের রামচন্দ্রপুর সড়কের পাশের খাল দিয়ে ডাকাতিয়ায় নামে। খালের উত্তরপাশে বিএডিসি পাকা স্থায়ী বাঁধ দিয়ে ডাকাতিয়ায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। আবার কুচির বিলের পানির খালগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে পানি এখনো আটকে রয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকরা ইনকিলাবকে নিশ্চিত  করেছেন। কুচির বিলের জমি রয়েছে আর নিজে চাষ করছেন এমন একজন হলেন বলাখাল এলাকার চৈয়াল বাড়ির সামিদ বলেন অন্য বছর এ সময় জমি তৈরি হয়ে যেতো এবার এখনো চাষ দিতেই পারিনি। ১২৬ শতাংশ জমি চাষ করেন বলাখাল বেপারি বাড়ির আমির হোসেন সামিদের সুরেই কথা বললেন। এই দুই চাষি চাঁদপুর কণ্ঠকে আরো বলেন, অন্য বছর এই সময়ে জমি তৈরি করে ফেলেছি এবার এখনো চাষ দিতে পারেনি। কুচির বিলের একাংশ রামপুর এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মমিন মোল্লা ইনকিলাবকে জানান, মাঠে জমে থাকা পানির বিষয়ে অফিসকে জানানো হয়েছে। কুচির বিলের বলাখাল এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বপন চক্রবর্তী জানান, পানি নামার খালে ঐ বাঁধটি আমরা দেইনি। এটা বিএডিসি নির্মাণ করেছে। পানি নামার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সিজন শুরু হবে জানুয়ারি মাসে আর আগেই পানি নেমে যাবে। দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাক্ষনগাঁও গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে হাছান খোদাইবিলে অন্যের জমি চাষ করেন প্রায় ২৪০ শতাংশ (স্থানীয় ভাষায় প্রায় ২ কানি)। এবারে মাঠের পানি না নামা ও আলু রোপণের সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণে ইরি চাষ করতে হবে। একই সুরে একই এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে জামাল মজুমদার একবাক্যে বলেন এখানে আমরা ফসল করি নিজে আর বাকিটা আল্লাহর কাছে। কথনো কোন কৃষি কর্মকর্তাকে দেখেনি আমাদের সহযোগিতা করতে। দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের উপরোক্ত অঞ্চলের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন ঘূর্ণিঝড় নাডাকে দায়ী করে বলেন ঐ ঝড়ে যে পানিটা আটকে গেছে সেটা এখনো নামছে না। আরেক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন এই ইউনিয়নের ৩টি ব্লকের দায়িত্ব আমার। এই ব্লকের কাজগুলো দেখে বাকি ৬টা ব্লক  অতিরিক্তভাবে দেখতে হয় এই জন্য একটু সমস্য সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে বাকিলা ইউনিয়নের পশ্চিম সন্না, গোগরা মাঠ, বাকিলা বাজারের পশ্চিম অংশ এলাকা মিলিয়ে রেল লাইন ধরে সদর উপজেলার দেবপুর মাঠের পানি না নামার কারণে এই এলাকার জমিতে এখনো চাষ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ এলাকার চাষি শাহ আলম বেপারী ইনকিলাবকে জানান, আমি বিষয়টি স্থানীয় কৃষি অফিসারকে জানানোর পরে ও কোন প্রতিকার পাইনি। বাকিলা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালেহ্ আহম্মদ জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। উপরোক্ত সকল এলাকার পানি আটকে থাকার বিষয়ে একবাক্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি ইনকিলাবকে জানান, আসলে সরজমিনে না দেখে কোন কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ