Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সরকারের বাচাল মন্ত্রীরা আর ইউরোপ-আমেরিকা-সিঙ্গাপুরের গল্প শোনায় না : রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:৫৪ পিএম

১৪ বছর দেশ চালিয়ে সরকার দেশটাকে ভেন্না গাছে তুলে দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এখন সরকারের বাচাল গল্পবাজ মন্ত্রীরা আর ইউরোপ আমেরিকা সিংগাপুরের গল্প শোনায় না। আর শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে! আপনি যে রাষ্ট্রনায়ক নন, আপনি যে আওয়ামীনায়ক, আপনার এ কথায় আবারো প্রমাণ করলেন। যারা লুটপাটের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত তাদের দ্বারা অনাহার-অর্ধাহার আর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে এখন আপনি জনগণকে উপদেশ দিচ্ছেন ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি ও হারিকেন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিতে। সামনের দিনে বিদ্যুৎ-গ্যাস দিতে পারবেন না। টাকা দিয়েও খাবার মিলবে না। লুটপাট করে তাঁর রাজভান্ডার শেষ। আমদানি করার মত ডলার নেই। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে দেশটাকে ধংস করে এখন বলছেন আদিম যুগে ফিরে যেতে।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এতদিন উন্নয়ন উন্নয়ন বাজনা বাজিয়ে দেশের মানুষের কান ঝালা পালা করে এখন জনগণের হাতে হারিকেন আর ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাদের উন্নয়ন ভেসে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
তিনি বলেন, দেশ এবং জনগনের উন্নয়ন না হলেও প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ এবং তাদের স্বজন, পরিবার আত্মীয়দের উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে অর্থ সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে। বিদেশে সেকেন্ড হোম করেছে-রাজপ্রাসাদ গড়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন স্বীকার করছেন, দেশ সংকটের দিকে যাচ্ছে। সামনের পরিস্থিতি খারাপ। রিজার্ভ সংকট, ডলার নেই, তাই তেল-গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না!

লুটপাট আর ব্যর্থতা চেপে রাখার জন্য সবকিছুতেই সরকার বিদেশের দোহাই দিচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ২০০৩ সালে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধে আরো কঠিন পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছিল। তখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার সবকিছু স্বাভাবিক রেখেছিলেন। এখন যুদ্ধ চলছে সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে আর তখন যুদ্ধ চলছিল এই এশিয়ায় আমাদের কাছেই। কই তখনতো বেগম জিয়া জনগণের ওপর প্রভাব পড়তে দেননি।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার আমলেই খাদ্যশষ্যের প্রাচুর্য দেখা যায়। আজ নিশিরাতের সরকার দেশের সবকিছু দেউলিয়া করে জনগণকে নিয়ে তামাশা করছেন। পেঁপে দিয়ে বেগুনী, বিনা তেলে রান্নার মতো পুকুরপাড়ে ভেন্না চাষের ফর্মুলা শুনাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুর্ভিক্ষ হবেই। ৭৪ সালেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন কোথাও যুদ্ধ ছিলোনা। দেশের জনগণ জানে-মানে-বিশ্বাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসে দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেন দুর্ভিক্ষ আসবে ? দুর্ভিক্ষ আসার কারণ আপনার দল জনস্বার্থবিরোধী। আপনি একটি এতিম প্রজন্ম তৈরী করতে চান। আর তাই বেপরোয়া লুটপাট করে, গণতন্ত্রকে গায়েব করে, ভোট-নির্বাচনকে ক্ষতবিক্ষত করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার সুখস্বপ্নে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত পরশু ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে আসার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ময়মনসিংহ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলার ঘটনা সংঘটিত করলেও পুলিশ উল্টো বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় যাওয়ার জন্য ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হলে সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হামলা চালায়। এই হামলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়। কিন্তু পুলিশ দুস্কৃতিকারীদের প্রতিহত না করে বরং রাত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। অথচ মামলায় যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের অনেকেই তখন জনসভাস্থলে অবস্থান করছিলেন। এটাই আওয়ামী সরকারের চিরচেনা সংস্কৃতি। নিজেরা সহিংসতা করে উল্টো নিরস্ত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপায়।
তিনি বলেন, একেকটি পুলিশ স্টেশন যেন আওয়ামী নাৎসীবাদের টর্চারিং সেন্টার। ময়মনসিংহ জেলাধীন সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী যথাক্রমে মিনহাজুল আবেদিন রাসু, মোঃ হৃদয়, হাবিবুল্লাহ ডালিম, ইকবাল বাহার, বাদশা, লায়ন, কামাল, সেলিম, নজরুল, নয়ন, সানজিদ, রানা মন্ডল, শাহরিয়ার আলম সুমন, আবু নাঈম, জিল্লুর রহমান, ওমর ফারুক রবিন, আতিক, শামস মোঃ ইমরান, মোঃ মিঠুন মিয়া, সুমন ফরাজী, পারভেজ মিয়া, নয়ন, শিমুল মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা দায়েরের ঘটনায় বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে তাদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর আহবান জানান।
রিজভী বলেন, গত পরশু ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে আসার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলাধীন পাগলা থানা যুবদল নেতা জসিম, ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সফল, রাজু সিং, রায়হান মৃধা, তানভির শেখকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র গুন্ডারা পৈশাচিক হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
এছাড়া বাগেরহাট জেলাধীন চিতলমারী থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহসান হাবিব ঠান্ডুকে গতকাল রাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করেছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক-কে তিনদিন ধরে গুম করে রাখার পর গতকাল সকালে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হলেও তা তারা স্বীকার করেনি। আবার গতকাল তাকে পুলিশই হাজির করে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বিষাক্ত ফণা তুলে এখন নানাভাবে দংশন করছে। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করতে হয়। অথচ পুলিশকে তৈরী করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাতিয়ার হিসেবে। পুলিশ কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অস্বীকার করাটা রক্ষীবাহিনীর দুঃসহ স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়। আশিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স। তার মতো একজন সুশিক্ষিত মেধাবী ছেলেকে যেভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি নজীরবিহীন। এর ওপর তাকে দুইদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, শুধুমাত্র নির্যাতন করার জন্য। এহেন বর্বরতা অমানবিক ও হৃদয়বিদারক। আমি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তার রিমান্ড বাতিল করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
খাগড়াছড়ি জেলাধীন গুঁইমারা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আল মামুনকে গতরাতে স্থানীয় হাতিমুড়া বাজারে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আমি এই ঘটনায় তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছি। তার আশু সুস্থতা কামনা করছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ