Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইজিবাইকে চালকের আসনে শিশু

সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা : ভয় ও ভোগান্তিতে যাত্রীরা

এ এম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটূয়াখালী) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

যে বয়সে বই-খাতা ও কলম নিয়ে স্কুলে থাকার কথা, সে বয়সে ড্রাইভিং এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় অবুঝ শিশুরা। ভাবতেই গা শিহরে ওঠে। অবাক করার মতো কথা হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো কলাপাড়ায়ও শিশুদের হতেই চলছে ইজিবাইক।
কলাপাড়ায় ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় শহর ও গ্রাম এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক। আর এসব চালাচ্ছে শিশুরা। প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিশুরা এসব যানবাহনের চালকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে মহাসড়ক এখন ইজিবাইকের দখলে। চালকরা কোন নিয়মনীতি না জেনে না মেনে শহরের মধ্যে চালাচ্ছে এসব ইজিবাইক। যেখানে সেখানে তাদের বাইক থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছেন। চলাচলরত অসংখ্য ইজিবাইকের কারনে শহরের মধ্যে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজটের। এছাড়া চালকদের মধ্যে অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রশিক্ষন প্রাপ্ত না হওয়ায় হরহামেশায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
কলাপাড়ার পৌরসভার সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে নতুন করে অনুমোদন দেয়া হয়েছে আটো (বড়) ৪৭৭টি, মিশুক আটো (ছোট) ৩১০টি, আটোরিকশা ৭২টি। এছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে কলাপাড়ায় অনেক চালক গাড়ি চালাতে আসে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা শহর থেকে গ্রাম এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক। আর এসব চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত শিশুরা। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি ঘুরানো যত্রযত পার্কিং ও অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো কারনে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো যাত্রী। এছাড়া যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ইজিবাইক।
ভুক্তভোগী অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সকালে স্কুল কলেজে যাওয়ার সময়ে তারা প্রতিনিয়ত যানযটের শিকার হচ্ছে। তাদের অভিযোগ শহরে চলাচলরত ইজিবাইক চালকরা কোন নিয়ম শৃঙ্খলা তোয়াক্কা না করে সড়কে ইচ্ছামতো ইজিবাইক ঘুরিয়ে ফেলতে যায়। আবার রাস্তার ভাঙ্গাচোরা অংশ পরিহার করে ভাল অংশ দিয়ে যেতে চায়। ফলে তারা ঘন ঘন রাস্তায় এপাশ ওপাশ করে পথ চলে। এমতাবস্থা মোটরসাইকেলসহ দ্রুত গতির পরিবহন পেছন থেকে আগে উঠতে গেলে ইজিবাইক ধাক্কা লেগে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। ইজিবাইক চালকদের খামখেয়ালিতে শহরের মধ্যে সৃষ্ট যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র। এমন অবস্থায় পড়ে সঠিক সময়ে স্কুল কলেজে পৌছতে না পেরে তাদের প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। সাধারন পথচারিদের অভিযোগ, ইজিবাইক চালকেরা শহরের মধ্যে স্থানে সেখানে তাদের বাইক পাকিং করার কারনে সৃষ্ট যানজটে ৩ মিনিটের রাস্তায় কখনও কখনও ৩০ মিনিট সময় লেগে যায়। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১০ সালের দিকে প্রথমে কলাপাড়া শহরে অল্প কিছু সংখ্যক ইজিবাইক দেখা গেলেও বর্তমানে প্রায় ৮০০ অটো চলাচল করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা ইজিবাইক চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে ১২-১৩ বছরের কম বয়সের কিশোরেরাও রয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইজিবাইক সড়কে নামানো হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ এই সব ইজিবাইক শুধু মাত্র পৌর এলাকায় চালানোর অনুমতি দিলেও তারা যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করেছে। এই সব ইজিবাইক চালকদের মধ্যে কেউ কেউ মাঠের কৃষি শ্রমিক অথবা আগে রিকশা/ভ্যান চালাতেন। আবার কেউ কেউ বয়সে কিশোর। এদের শত করা ৮০ জন চালকেই জানেন না কিভাবে রাস্তা ইজিবাইক চালাতে হয়। তারপরও তারা নিয়মিত মহাসড়ক ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের সড়কে ৮ জন করে যাত্রী নিয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইজিবাইক চালক লিয়াকত হোসেন জানান, তিনি ৪ বছর ধরে ইজিবাইক চালিয়ে ৫ সদস্যের সংসারের জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে হারে প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক রাস্তায় নামছে তাতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার অভিযোগ নতুন ইজিবাইক চালকেরা আইন কানুন মানে না। কে কত টাকার ভাড়া আয় করবে তারা সেই প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। এ কারনে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা বাড়ছে।
আবু হানিফ নামে এক পথচারি বলেন, শহরের ভেতরে চলাচলরত ইজিবাইক দেখলে মনে হয় এটা যেন ইজিবাইক শহর। অনেক চালক অছেন যারা অন্য পেশার কাজ করে বিকালে শহরে এসে ইজিবাইক চালান। ফলে বিকালে শহরে অটো উপস্থিতি থাকে সারা দিনের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। তার অভিযোগ এ সমস্ত চালকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। এর ফলে রাস্তায় দু’পাশ থেকে আসা যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়ে যান জটের সৃষ্টি হয়। তার অভিযোগ এটা চালকদের ইচ্ছাকৃত যানজটের কারনে ভোগান্তিটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কলাপাড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা একবার ইজিবাইক সমিতি সভাপতিকে নিয়ে বসছি যাতে অপ্রাপ্ত বয়স্করা ইজিবাইক চালাতে না পারে। কিন্তু এখনও হয়নি। এখন আবার আগামি মিটিং এ নিয়ে পৌরসভা মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্করা যদি কেউ ইজিবাইক চালায় তাহলে এটাতো শ্রম। আমি এ ব্যাপারে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করবো। যাহাতে অপ্রাপ্ত বয়স্করা ইজিবাইক চালাতে না পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ