Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কখনো জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার কখনো ম্যাজিস্ট্রেট!

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কখনো নিজেকে পরিচয় দিতেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কখনো পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসি ল্যান্ড। বড় বড় সরকারি পদ পদবীর পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা জালে এমনই এক প্রতারক ধরা পড়েছে। তার নাম সুমন সাহা।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাকে বিশেষ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নগরীর সদর থানাধীন ১নং ইস্পাহানী লেনের মোহাম্মদ নাফিজউদ্দিনের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার উত্তর মাছুয়া গ্রামের শ্যামল কুমার সাহার ছেলে।

কেএমপি’র স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার রাশিদা বেগম জানান, গত ২ অক্টোবর দুপুরে ফেনী জেলার সোনাগাজী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নবীর হোসেনকে ফোন দিয়ে সুমন সাহা নিজেকে ফেনী জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে সোনাগাজী বাজারে বিভিন্ন দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানান। তিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিকে মদিনা মিষ্টিমেলা নামক দোকানের মালিকের সাথে কথা বলিয়ে দিতে বলে। তখন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মদিনা মিষ্টিমেলার দোকানের মালিক মো. হেদায়েত উল্যাহ এর সাথে কথা বলিয়ে দেয়। কৌশলে মো. হেদায়েত উল্যাহ এর সাথে কথা বলে তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বার ০১৮২৪-৩৩৯৫২৩ সংগ্রহ করে নিয়ে সরাসরি মো. হেদায়েত উল্যাহ’কে ফোন দিয়ে নিজেকে পুনরায় ফেনী জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম আজাদ পরিচয় দিয়ে মিষ্টির দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানায়। তখন মো. হেদায়েত উল্যাহ সরল বিশ্বাসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন সুমন সাহা তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বর ০১৯২৯-৬৮৬৩৪৫ এর নগদ এ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য বলেন। দ্রুত টাকা না প্রেরণ করলে কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে হুমকি দেন। মো. হেদায়েত উল্লাহ তাৎক্ষণিক ২ হাজার টাকা প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে তিনি পার্শ্ববর্তী দোকানদারদের সাথে আলোচনা করলে তারাও জানায়, তাদেরকেও ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করার আশ্বাস দিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে। সোনাগাজী বাজার বণিক সমিতির সদস্যরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সংক্রান্ত কোন পরিকল্পনা ছিল না এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে কোন প্রতারক টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছে। বিষয়টি তারা সোনাগাজী মডেল থানাকে অবহিত করেন। ফেনী জেলা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারে প্রতারকের খুলনা মহানগরী এলাকায় অবস্থান করছে। ফেনী জেলা পুলিশ প্রতারককে সনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার জন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশকে অনুরোধ করে।
কেএমপির গোয়েন্দা বিভাগের একটি টীম তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতে খুলনা সদর থানাধীন ১নং ইস্পাহানী লেনে নাফিজউদ্দিন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সুমন সাহাকে গ্রেফতার করে। তিনি ওই বাড়ির নীচতলার ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

সুমন সাহা বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভাপতি-সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হোটেল, মিষ্টির দোকান ও ব্যবসায়ীদের ফোন দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করার কথা বলে টাকা আদায় করত।

সে গুগল সার্চ দিয়ে এ সকল ব্যক্তিদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাদেরকে ফোন দিত। আটকের পর তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল সেট ও দুইটি সীম উদ্ধার করা হয়। প্রতারণার পর সে সীম কার্ড ভেঙে বিনষ্ট করে ফেলত। তার বিরুদ্ধে পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতারণার কয়েকটি মামলা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ