বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
যেসব পুলিশ বাড়িতে গিয়ে হয়রানি ও তল্লাশি করছে তাদের নামের তালিকা করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশ দেন।বুধবার (১২ অক্টোবর) রেলওয়ের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে সার্বিক বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদেরের দেওয়া 'নারায়ে তাকবির' স্লোগানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি হুম্মাম কাদেরের নিজস্ব ও একান্ত বক্তব্য। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। এরপর নেতারা চট্টেশ্বরী মোড়ে কসমোপলিটন হাসপাতালে আহত নেতাকর্মীদের দেখতে যান। পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশটি চট্টগ্রামে এই সময়ে সবচে বড় সমাবেশ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনার জন্ম নিয়েছিল, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিপক্ষ গণবিরোধী শক্তি যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, সেই রেজিম এবং রেজিমের শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে।
তিনি বলেন, আমার নেত্রী সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন। তার অনুপস্থিতি আমরা সবাই অনুভব করেছি। এর আগে ২০১২ সালে আমাদের নেত্রীর উপস্থিতিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সভা হয়েছিল। বিস্ময়ের বিষয়, অনেকের ধারণা বেগম খালেদা জিয়া যদি গতকাল সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে সারা চট্টগ্রাম জনসভায় পরিণত হতো। যারা বিকেল ৩টা, সোয়া ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে এসেছেন তারা কদমতলী অতিক্রম করতে পারেননি। অন্যদিকে টাইগারপাস ক্রস করতে পারেনি। সিআরবি জনসমুদ্র ছিল। রেললাইনের ওপরে জনগণের উপস্থিতি, এটা অবিশ্বাস্য। মাঠে যা লোক ছিল, মাঠের বাইরে তার চেয়ে বেশি লোক ছিল। আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে রাতে রেইড করেছে, অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। পরে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী অনেক জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছে। চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আঘাত করেছে, গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে, আক্রমণ করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে, আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তারা কিন্তু কোনোটাই বাদ রাখেনি। আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের বলেছিলাম, এদিক-সেদিক কর্ণপাত না করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যান।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে খসরু বলেন, পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং যারা এ কাজে যুক্ত থাকে, আমি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারাও তালিকা করুন এরা কারা, গতকাল যারা হামলা করেছে, আক্রমণ করেছে, আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করেছে, বাধাগ্রস্ত করেছে, আপনারাও তাদের তালিকা করুন। অতি উৎসাহী পুলিশ যারা দেশ, সংবিধান ও পুলিশের আইন লঙ্ঘন করছে, তাদের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখছি। কারণ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। আমরা গণতন্ত্রের পথে থাকব, যারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা সহিংসতার দিকে থাকবে, জয় হবে গণতেন্ত্রর। জয় হবে বাংলাদেশের মানুষের। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, স্বৈরাচারের যে এত শৃঙ্খল, এত বেড়া, সেই শৃঙ্খল ভেঙে চট্টগ্রামের জনগণ পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু এই শৃঙ্খল ভাঙতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মীর রক্ত ঝরেছে। অনেকে নিজের জীবন বিপন্ন করে এই সমাবেশকে সফল করেছেন।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যে মাইকিং করে ঘোষণা দিয়েছেন, যারা বিএনপির সমাবেশে যাবে তাদের মীরসরাই ফিরতে দেওয়া হবে না। জাহাঙ্গীরের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। অতি উৎসাহী পুলিশ অফিসারদের নামের তালিকা করা হবে। আমাদের ছাত্রদলের নেতা সাইফুলের পা কেটে ফেলতে হয়েছে, আমরা মামলা করেছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে যারা আমাদের গণতান্ত্রিক মিটিং-মিছিলে বিনা কারণে, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করব। কোনো কারণ ছাড়া আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে ভাংচুর করে, গণতান্ত্রিক মিছিল-সমাবেশে বাধা দেয় আমরা এবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টা ভিপি জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।