Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সাড়ে ৩১ কিলোমিটারের ২৬ কিলোমিটারই খারাপ

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে : রাস্তার কোথাও ইট বিছিয়ে দেয়া, কোথাও খোয়া ফেলে গর্ত ভরাটের চেষ্টা করা হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় খোয়া-ইট-পাথর কিছুই নেই, ঠিক যেন মেঠো রাস্তা। বাস-ট্রাকগুলো এমনভাবে চলছে মনে হবেÑ এই বুঝি উল্টে যাবে। সড়কটি আসলে পাকা, না কাঁচা, নাকি হেরিংবন এককথায় বলা কঠিন। প্রতিনিয়ত জোড়াতালি দিতে দিতে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এটা সাতক্ষীরা শহরের প্রধান সড়কের দৃশ্য। সড়ক ও জনপথের (সওজ) লোকজনকে মাঝে মাঝেই জোড়াতালি দিতে দেখা যায়। অন্যান্য সড়কের অবস্থা আরো করুণ। বাঙ্গালের মোড় রইচপুর সড়কটি কাঁচারাস্তা নাকি কখনো পাকা ছিল বুঝে ওঠা কঠিন। মনে হবে পাকা করার জন্য সবেমাত্র বালু ফেলা হয়েছে রাস্তাটিতে। সড়কটি সারাদিন ধুলায় অন্ধকার হয়ে থাকে! এই সড়কের মুখে যুবলীগের একটি পরিত্যক্ত সাইনবোর্ড দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। দুই সেন্টিমিটার পুরো ধুলার আবরণ পড়েছে লেখার উপর। যে কারণে লেখাটাই আর পড়া যাচ্ছে না। রাস্তার দুই পাশের ঘরবাড়ির অবস্থাও প্রায় একই। রাস্তা-ঘাটের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতির মুখোমুখি হলে আরো ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। মেয়র জানান, পৌরসভার সাড়ে ৩১ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২৫/২৬ কিলোমিটার রাস্তার নব্বই শতাংশই খারাপ। রাস্তা ভালো রয়েছে ৫ কিলোমিটার। পৌরসভার যে আয়, তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতেই শেষ হয়ে যায়। উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভাটির আগে ১৬ লাখ টাকা হলেই মাসিক বেতন পরিশোধ হয়ে যেত। সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করায় এখন মাসে ৩৪ লাখ টাকা প্রয়োজন হয় তা পরিশোধ করতে। এই বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি। তিনি বলেন, জাপানি সংস্থা কেএফডব্লিউ জলবায়ু তহবিল থেকে ২০১৪ সালে ১৫ মিলিয়ন ইউরো অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সেই অর্থ এখনো ছাড় করা হয়নি। নানা রকম জটিলতায় আটকে আছে। এ বরাদ্দ পাওয়া গেলে কোনো জটিলতা থাকত না। ‘সবচেয়ে শঙ্কার হচ্ছে সহায়তার এই অর্থ চার বছরের মধ্যে খরচ করতে হবে। না হলে ফেরত যাবে। এতে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। কিন্তু কে শোনে কার কথা। স্থানীয় সংসদ সদস্যও একাধিকবার দেন-দরবার করেছেন কিন্তু খুব একটা কাজ হয়নি।’ তিনি বলেন, কাজটার সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। সর্বশেষ ২১ নভেম্বরও ইআরডিতে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখনো কোনো ভালো খবর পাওয়া যায়নি। ওই বরাদ্দ পেলে সাতক্ষীরা পৌরসভা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ জানান মেয়র তাজকিন আহমেদ। তিনি বলেন, জলবায়ু তহবিল থেকে মোট ৮০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তির অর্থ খরচ হলে পরবর্তী অর্থ ছাড় করা হবে। এ কারণেও এই অর্থ দ্রুত ছাড় করা প্রয়োজন। শহরের রাস্তাঘাট অপরিচ্ছন্ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সিডর-আইলার আগে এ পৌরসভার জনসংখ্যা ছিল এক লাখের নিচে। কিন্তু ওই দুর্যোগে গৃহহীন অনেক লোক গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন শহরের লোকসংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ‘এই বাড়তি লোকের চাপ নেয়ার মতো অবস্থা নেই সাতক্ষীরা পৌরসভার। বাড়তি লোকের কর্মসংস্থান অন্যান্য বিষয়ে শামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পৌরসভা। পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণের যন্ত্রপাতির ঘাটতিও বিপাকে ফেলে দিয়েছে,’ বলেন তিনি। তবে তাজকিন আহমেদ চিশতী স্বপ্ন দেখেন, এ পৌরসভা এক সময় প্রথম কাতারে জায়গা করে নেবে। তখন মানুষ উদাহরণ দেবে সাতক্ষীরার। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা শহরটি হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যকর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ