Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পলিনেটে সুফল পাচ্ছেন শেরপুরের কৃষক

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় শেরপুরে প্রথমবারের মতো পলিনেট হাউজ পদ্ধতিতে ফল-সবজি রোপন ও চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রতিটি পলিনেট হাউজ প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে কৃষি বিভাগ। জেলার নকলা, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় প্রথমবারের মতো এ হাউজে চাষাবাদ ও চারা রোপন শুরু হয়েছে। আর এতে সুফল পাচ্ছে তিন উপজেলার কৃষকরা। এর ফলে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন টমেটো, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন তরমুজ, রঙিন ফুলকপি/বাধাকপি, লেটুসসহ এসব সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র আসবে, তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে। পলিথিনের আচ্ছাদন থাকায় এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউজ দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুন সংযোজন। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজিগুলো যেমন সহজেই গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায় তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার বাকাকুড়া গ্রামে ১০ শতাংশ জমির ওপর একটি পলিনেট হাউজ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে পলিনেট হাউজে টমেটো, ফুলকপি, পেপের চারা, কলার চারা ও ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করা হয়েছে। আর এতে কাজ করছেন পলিনেটের উদ্যোক্তা ফজলুল হক।
ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক তার ১০ শতাংশ জমিতে পলিনেট হাউজ পদ্ধতিতে নানা ধরণের সবজি চাষ ও চারা উৎপাদন করছেন।
উদ্যোক্তা ফজলুল হক জানান, আধুনিক এই পলিনেট হাউজে প্লাস্টিক ট্রেপে মাটির পরিবর্তে নারিকেলের ছোবরায় তৈরি কোকোপিটে চারা উৎপাদন করা হয়। এতে ভাইরাস ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে সার ও কীটনাশক দিতে হয় না এসব চারায়। ইতোমধ্যে এ হাউজে ১০ হাজার চারা তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, আমি আসলেও ঝিনাইগাতীর সফল নার্সারি মালিক তার জন্য আমাকে এই পলিনেট হাউজটি দিয়েছেন কৃষি বিভাগ। আমি এতে খুব খুশি। আমি এ পলিনেটে অসময়ের সবজি চাষ ও চারা উৎপাদন করে সফলতা পাচ্ছি। এখান থেকে চারা সংগ্রহ করছে অনেকে। অসময়ে বিভিন্ন সবজি চাষ করার ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে পারছি। তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমে একটু শংকায় ছিলাম যে এই পদ্ধতিতে আবাদ করে লাভ হবে কিনা। কিন্তু আবাদ শুরুর পর দেখি এ পদ্ধতি বেশ ভালো। সারা বছর এখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে আমরা লাভবান হতো পারবো।
কৃষক আব্দুল করিম বলেন, আসলে এই সময়ে তো শীতকালের সবজির চারা সব জায়গায় হয় না। কিন্তু এর মধ্যে তো হচ্ছে। আমি কিছু চারা নিয়া লাগাইছি। চারা তো কম সময়ই হয়ে যায়।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, এই পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবে। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের সবজি চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। কৃষি বিভাগ থেকে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পরমর্শ দেয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতির সুবিধা দেখে এলাকার অনেক কৃষকই এ ব্যপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, পলিনেট হাউজ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টিপাত, তাপ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনতি রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকুল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ শাকসবজি ফলমূলসহ কৃষি উৎপাদন করার এক আধুনকি পদ্ধতি। পলি নেটের উপরে সেড দিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে। এখানে উৎপাদিত চারা ২০ দিন পর রোপনযোগ্য হয়। মূলত অতি বৃষ্টি ও অকাল বন্যায় চারা রাখতে না পারায় বিকল্প এই চিন্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ