Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে ২২ দিনের ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

জেলেপল্লী ও মাছের মোকামে সুনসান নীরবতা

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নির্বিঘ্ন প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরণসহ সারাদেশে ইলিশের পরিবহন ও বিপননে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলেপল্লী ও মাছের মোকামগুলোতে এখন শুনশান নিরবতা। স্তব্ধ হয়ে গেছে মাছের মোকামসহ আড়তগুলোর সব কোলাহল। লক্ষ লক্ষ জেলের এখন অখণ্ড অবসর। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও পিরোজপুরের মাছের মোকাম এবং আড়তে জেলে ও মৎসজীবীদের কোন হাকডাক শোনা যায়নি শুক্রবার সকাল থেকে।

মৎস্য বিজ্ঞানীরা আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে-পড়ে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্টÑতজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ, কালিরচর দ্বীপ এবং মায়ানী পয়েন্টÑমীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধিক প্রচুর্য চিহ্নিত করেছেন। উপকূলের ওই ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘ইলিশের প্রধান প্রজননস্থল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ৭ রাতের প্রথম প্রহর থেকে ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত সবধরণের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

ফলে জেলে পরিবারগুলোতে কিছুটা বিষাদের ছায়া নেমে এলেও সরকার ইলিশ আহরণে নির্ভরশীল জেলেদের খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় ১৩ হাজার ৮৭২ টন চাল বিনামূল্যে বিতরনের কর্মসূচীও ঘোষণা করেছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪১টি উপজেলার ৩ লাখ ৬ হাজার ১২০ জেলে পরিবারের মাঝে ৯ হাজার ১৮২ টন চাল বিতরণ করা হবে। দেশে উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৭০% পাওয়া যায় দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নদ-নদী এলাকায়।

গত বৃহস্পতিবার থেকে ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে পুলিশ এবং র‌্যাব ছাড়াও বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও কোষ্ট গার্ডকেও সম্পৃক্ত করেছে সরকার। এছাড়া প্রতিটি জেলা উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমান আদালতসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযানের মাধ্যমেও নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার সাথে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যাবস্থার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার ‘ইলিশ রক্ষায় সরকারী নির্দেশনার আলোকে জিরো টলারেন্স নিয়ে তা কার্যকর’ করার কথা জানিয়েছেন।

‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালে প্রধান প্রজনন মৌসুমে দেশে প্রথমবারের মত ১০ দিন ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। এমনকি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র এবং মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘ্ন রাখাসহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের সাথে জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে গত অর্থ বছরে প্রায় ৫.৬০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে। এমনকি সারা বিশে^ উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬৫% বাংলাদেশে উৎপন্ন ও আহরিত হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী এবং মৎস্য খাতে প্রায় ১২%।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ