পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন সরকার বাংলাদেশকে ভারতের হাতে উজাড় করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর, সড়ক ও মুক্ত আকাশ সুবিধা নিলে আক্ষরিক অর্থেই আমাদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলে কিছুই থাকবে না। বিনাভোটের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে তারা ভারতের হাতে উজাড় করে দিচ্ছে। অথচ বিনিময়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কিছুই পায়নি।
চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি সই হওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের নৌপরিবহন সচিব গণমাধ্যমকে বলেছেন, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহার, পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ এবং কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ভারত কিভাবে বন্দর ব্যবহার করবে এটা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করে একটি এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত করছি। এ ছাড়া সমুদ্র ও নৌপথে চলাচলে নির্দেশনামূলক বয়া, বাতিগুলো দুই দেশ কীভাবে একসঙ্গে পরিচালনা করবে এবং বয়া, বাতিসহ এগুলো যারা পরিচালনা করবে, তাদের প্রশিক্ষণ কীভাবে হবেÑ সেসব বিষয়ে আলোচনা করে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হবে। আমরা প্যাসেঞ্জার ক্রুজ সার্ভিস চালু করব। ট্যুরিস্টরা ভারত থেকে অবাধে বাংলাদেশে এসে যে কোনো জায়গা দেখতে পারবেন। আগে তো জাহাজের ক্রুরাও নামতে পারতেন না। এবারের চুক্তিতে দুই দেশের ক্রুদের তিন দিনের অন অ্যারাইভালের ভিসা দেওয়ার কথা থাকবে।
রিজভী বলেন, এছাড়াও বাংলাদেশের আকাশসীমা ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে ওপেন স্কাই সুবিধা চায় ভারত। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে- এ বিষয়ে আলোচনা করতেও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে ভারত। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গত ২১ নভেম্বর সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এভিয়েশনের সেক্টরে কোনো প্রকল্প, প্রস্তাবনা, এজেন্ডা তুলে ধরা হবে কিনা এ বিষয়েও খোঁজ নেন হাইকমিশনার। ভারতীয় হাইকমিশনার ওপেন স্কাই সুবিধা দিতে প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানেও ভারতের হাইকমিশনার ওপেন স্কাইয়ের বিষয়ে প্রস্তাব করেন। সে অনুষ্ঠানে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত নতুন পলিসিতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ওপেন স্কাই সুবিধাকে বাড়াতে যাচ্ছে। এতে করে দুই দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে।
হাইকমিশনারের বক্তব্যের জবাবে একই অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, হাইকমিশনার ওপেন স্কাইয়ের কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্র্যাকটিকাল ওপেন স্কাই হয়েই আছে।
অথচ এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহনে অন্যদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে অনুমতি লাগে। তবে ওপেন স্কাই চুক্তি থাকলে এ ক্ষেত্রে আলাদা অনুমতির দরকার হয় না। ওপেন স্কাই চুক্তি দুটি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা তত্তোধিক দেশের মধ্যেও হতে পারে। এ চুক্তির মাধ্যমে আকাশসীমা ব্যবহারের পাশাপাশি বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ থাকে। এছাড়া বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের যাত্রীদের বোর্ডিং ছাড়া জ্বালানি সংগ্রহ, যাত্রীদের অন্য ফ্লাইটে কানেকটিং করার সুবিধা থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ওপেন স্কাই সুবিধা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দেয়া ঠিক হবে না। আমাদের যে ফ্রিকোয়েন্সি আছে সেটাই আমরা পুরো ব্যবহার করতে পারছি না। ওপেন স্কাই সুবিধা দিলে ভারতের আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ নেয়া লাগবে না। আকাশকে উন্মুক্ত করে দিলে ব্যবসা ভারতের হাতে চলে যাবে।’ তাছাড়াও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টিও এর সাথে জড়িত।
রিজভী আরো বলেন, ভারত একতরফাভাবে অভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এক লিটার পানিও তারা ছাড় দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে বলতে গেলে বিনামূল্যেই ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা ও অগ্রাহ্য করে ভারত জবরদস্তিমূলকভাবে রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করতে গিয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রতিবেশ, আবহাওয়া ধ্বংস করে বাংলাদেশী মানুষদের বিলুপ্তযুগের প্রাণীদের দলে ঠেলে দেয়ার আয়োজন চলছে। অথচ বিনাভোটের বাংলাদেশের নতজানু সরকার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা. দুরদর্শিতা প্রদর্শনের বদলে বিধ্বংসী ভাঙনের ছেলেখেলায় মেতে উঠেছে।
তিনি বলেন, ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশের সাথেই বাংলাদেশের আকাশ চুক্তি আছে। কিন্তু কোনো দেশের সাথেই মুক্ত আকাশ সুবিধা দেয়ার চুক্তি নেই। এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না, এমনকি প্রয়োজনও নেই। শুধু ভারতের স্বার্থে সরকার এ চুক্তি করতে পারে। এতে বিমান ব্যবসা একচেটিয়াভাবে ভারতের কাছে চলে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বাইরে নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারত বাংলাদেশের বিমানবন্দর ও আকাশ ব্যবহারের ফলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলেছেন, আমাদের দেশের বিমান অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা এখনো সে পর্যায়ে যায়নি। আমাদের অবকাঠামো এখনও পর্যাপ্ত নয়। এমনিতেই অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা হুমকিতে রেড এলার্ট জারি করেছে। যার ফলে এখনও বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে কার্গো সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় যদি ভারতকে মুক্ত আকাশ সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে সেটি হবে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং আমাদের অস্তিত্ব বিপন্নকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি সকল প্রকার দেশবিরোধী কর্মকা- থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুুস সালাম, কাজী আসাদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেড মোর্তুজা চৌধুরী তুলা, যুবদলের আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।