Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অস্তিত্ব সঙ্কটে আরচি নদী

দখল-দূষণে বর্ষা মৌসুমেও হাঁটু পানি

মো. মনির হোসাইন, মুরাদনগর (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুমিল্লার মুরাদনগরে দূষণ ও দখলের কবলে পরে অস্তিত্ব বিলীনের পথে রয়েছে এ উপজেলার প্রাচীন আরচি নদী। ১৫ কিলোমিটারের এ নদীতে বর্ষা মৌসুমেও থাকে হাটু পানি। যে নদী দিয়ে এক সময় ট্রলারে করে উপজেলার বৃহত্তম পাইকারি বাজার রামচন্দ্রপুর থেকে কেনাকাটার জন্য যাতায়াত করত সাধারণ ক্রেতাসহ ব্যবসায়ীরা, সে নদীটি এখন খালে পরিনত হয়েছে। তাছাড়া বহমান এ নদীর বিভিন্ন জায়গায় ভরাট করে দখলের কারণে এখন সে নদীতে থাকে পানি সঙ্কট। এ নদীতে গৃহস্থলির বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা, মুরগির বিষ্ঠা, পথিলিন ফেলার কারণে খরস্রোতা আরচি নদীর তলদেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। দূষিত হচ্ছে আশপাশের এলাকার পরিবেশ।

সরেজমিনে উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকায় দেখা যায়, আরচি নদীটির কিছু কিছু অংশে নদীর জায়গায় দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িঘর। বর্তমানে বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও নদীতে নেই পানি। গবাদি পশুর খাবার হিসেবে কচুরিপানা সংগ্রহের জন্য কৃষকরা নদীর কোমর সমান পানিতে নেমে করছে কচুরিপানা সংগ্রহ। এক সময় এ নদী দিয়ে ট্রলার দিয়ে মানুষ ও মালবাহী পণ্য জাতায়াত করলেও এখন কচুরিপানার বিশাল জটলার কারণে এ নদী দিয়ে ছোট নৌকা চলাচল করে না। পানি সঙ্কট ও কচুরিপানার জটলার কারণে নদীর বিভিন্ন অংশে জেলেরা স্থাপন করেছেন মাছ ধরার জন্য বিশাল খরা জাল। স্থানীয়দের দাবি নদীটি দখল ও দূষণ মুক্ত করতে পারলে আগের রুপ ফিরে পাবে এ নদী। এই নদীর পানিকে কাজে লাগিয়ে গ্রীষ্ম মৌসুমে নদীর বহমান এলাকায় করা যাবে কৃষিকাজ।
দিঘিরপাড় গ্রামের কৃষক শহিদ মিয়া বলেন, আরিচি নদীর উৎস শুরু হয়েছে এ উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে যা আন্দিকুট ইউনিয়ন হয়ে পূর্বধইর ইউপি, যাত্রাপুর ইউপি, বাঙ্গরা ইউপি, কামাল্লা ইউপি ও রামচন্দ্রপুর ইউপি হয়ে তিতাস নদীতে গিয়ে শেষ হয়েছে। একসময় রামচন্দ্রপুর বাজার থেকে পন্য ক্রয় করে ট্রলারযোগে এ নদী দিয়ে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ চলাফেরা করত। এখন চরম অস্তিত্ব সঙ্কটে নদীটি। নদীটি খালে পরিনত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় এ নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। কিছু অংশে দখল হয়ে গেছে। নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, বাঁধ অপসারণ ও খনন করা হলে নদী তার পুরনো যৌবন ফিরে পাবে।

স্থানীয় ফিরোজ মিয়া বলেন, নদীতে একসময় ট্রলার চলাচল করলেও ১৫-২০ বছর ধরে এই নদী দিয়ে নৌকাও ভালো করে চলাচল করতে পারে না। সারা নদীতে বিশাল বিশাল কচুরিপনার জটলার কারণে এখানে নৌকা চালানো যায় না। গ্রীষ্ম মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যায়। যদি নদীটি দখল ও দূষনমুক্ত করে খনন করা হয় তাহলে গ্রীষ্ম মৌসুমে কৃষকরা এ নদীর পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে পারবে। এ নদীর আগের রুপ ফিরে পেতে আমরা প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাই। কারণ এটি শুধু একটি নদী নয়, এটি আমাদের মুরাদনগরের ঐতিহ্য।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, নদী দূষণ ও দখল থেকে মুক্ত করার জন্য সারাদেশে নদী রক্ষা কমিশন বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছেন। তাছাড়া এ বিষয়টি পানির উন্নয়ন বোর্ড ও নদী রক্ষা কমিশনের দৃষ্টিগোচর করতে হবে। নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বজায় থাকলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হবে না। এ নদীটিতে কেহ বাঁধ দিয়ে থাকলে বা দখল করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ