Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খোঁজ নেই ৩৪ শতাংশ ই-টিআইএনধারীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৪ এএম

অনেকেই ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা ই-টিআইএন নিয়েছেন বিভিন্ন কাজে। কিন্তু ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেন না এমন টিআইএনধারীর সংখ্যা ২৭ লাখ। এমন লাখ লাখ নিষ্ক্রিয় করদাতা বা ই-টিআইএনধারী কর অঞ্চলগুলোর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই জমি ক্রয়-বিক্রয়, গাড়ি কেনা, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন সেবা নিতে ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর রিটার্ন দাখিল করেননি। আবার অনেকেই মারা গেছেন, কেউ আবার বিদেশ চলে গেছেন। কিন্তু এসব ই-টিআইএন সিস্টেম থেকে বাতিল করা হয়নি। এদের কারও কারও নামে থাকা কর ফাইলও বাতিল করা হয়নি।

নিষ্ক্রিয় বা অকেজো এমন নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখ। যেখানে বর্তমানে নিবন্ধিত ই-টিআইএন সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। অর্থাৎ নিবন্ধিত ই-টিআইএনধারীর প্রায় ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশ নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে বিদায়ি ২০২১-২২ করবর্ষে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ২৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৫। এর মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির ২৪ লাখ ৮৬০ ও কোম্পানি ২৯ হাজার ৭৮৫টি। নিবন্ধিত ই-টিআইএন হিসেবে বিদায়ি করবর্ষে রিটার্ন দাখিলের হার ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। কর অঞ্চলগুলো বলছে, নিষ্ক্রিয় এসব ই-টিআইএন বাতিল করতে। ই-টিআইএনের সঙ্গে রিটার্ন দাখিলের পার্থক্য নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তোলে। তবে এনবিআর বলছে, ই-টিআইএন সার্ভারে নিবন্ধন বাতিল করার কোনো অপশন বা সুযোগ রাখা হয়নি।

এনবিআর সূত্র মতে, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান ই-টিআইএনকে বলা হতো জিআইআর (জেনারেল ইনডেক্স রেজিস্ট্রেশন)। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রেজিস্টার বইয়ে করদাতার নাম ও তথ্য নিবন্ধন করা হতো। এতে যে নাম্বার পড়ত সেটাই হতো করদাতার নম্বর। কোনো কারণে করদাতা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে যাচাই করে সেই নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হতো। ১৯৯৩ সালে টিআইএন চালু করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ই-টিআইএন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্সপেয়ারস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) চালু করা হয়। এরপর থেকে ইনঅ্যাক্টিভ টিআইএন আর নিষ্ক্রিয় বা বাতিল করা হচ্ছে না। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, সচল ই-টিআইএন ও রিটার্ন এবং নিষ্ক্রিয় বা অকেজো ই-টিআইএন ও কর ফাইল জানতে কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দেয় এনবিআর। কর অঞ্চলগুলো নিবন্ধিত করদাতা, চালু নথি ও নথিস্থ মামলার সংখ্যা এনবিআর পাঠায়। কর অঞ্চলগুলোর হিসাব অনুযায়ী, নিষ্ক্রিয় বা ইনঅ্যাক্টিভ ই-টিআইএন বা কর ফাইলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখ। ই-টিআইএনধারী বা নিষ্ক্রিয় এসব করদাতা হয়তো বিদেশ চলে গেছেন, কেউ মারা গেছেন। আবার কেউ কোনো প্রয়োজনে ই-টিআইএন নিয়ে আর রিটার্ন দাখিল করেনি। কিন্তু এসব ই-টিআইএন বা কর ফাইল বন্ধ করা হয়নি।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত ই-টিআইএন সংখ্যা ৭৯ লাখ ছয় হাজার ৯২৬। এর মধ্যে কোম্পানি এক লাখ ৬৮ হাজার ৬২৮টি, ব্যক্তি ৭৭ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৮ জন। তবে এপ্রিল পর্যন্ত ব্যক্তি নিবন্ধন ছিল ৭২ লাখ ৪০ হাজার ৯১০টি আর কোম্পানি ছিল এক লাখ ৮১ হাজার ১৮৪টি। এর মধ্যে চালু নথির সংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭১০টি, কোম্পানি ছিল ৮১ হাজার ১৮৪টি। অন্যদিকে এপ্রিল পর্যন্ত নথিস্থ (ই-টিআইএন ও কর ফাইল নিষ্ক্রিয়) মামলার সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ছয় হাজার ৪০৭টি। এর মধ্যে কোম্পানি ৭২ হাজার ৭২৪টি আর ব্যক্তি ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ২৭ লাখ ছয় হাজার ৪০৭টি ই-টিআইএন অকেজো অবস্থায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছে ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৫টি। যেখানে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ছিল ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৪। অর্থাৎ এক বছরে করদাতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬১ বা ১৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক কর কমিশনার বলেন, যে ঠিকানায় ই-টিআইএন নেওয়া হয়েছে, সেখানে চিঠি পাঠালে ফেরত আসে। আবার অনেক করদাতা মারা গেছেন, কেউ বিদেশ চলে গেছেন, কেউ কোনো কাজে ই-টিআইএন নিয়ে আর রিটার্ন দেয়নি। এভাবে ই-টিআইএন সংখ্যা বেড়ে গেছে। এনবিআর উদ্যোগ নিয়ে সিস্টেম থেকে অকেজো এসব ই-টিআইএন বাতিল করতে পারবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ