বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারী বলেন, “একা জীবন অনেক কষ্টের। এই কষ্ট থেকে দূরে রাখতে আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাই আমার অন্য সঙ্গী ঠিক করে দিয়েছে। এখন বাকিটা জীবন সবাইকে নিয়ে আনন্দে কাটাতে চাই।”
‘আজ আমাদের মায়ের বিয়ে’- গত শুক্রবার জান্নাতুল ফেরদৌস লিজার এমন পোস্ট ফেইসবুকে হয় ভাইরাল। সঙ্গে বিয়ের কিছু ছবিও দেন তিনি। অনেকে সেই পোস্ট শেয়ার করেন, প্রশংসা করেন এই উদ্যোগের।
লিজা ও তার স্বামী মাহমুদ রনির উদ্যোগে সেদিন বিয়ে হয় ৫৩ বছর বয়সী নাদিরা বেগমের। লিজা জানানা, সঙ্গীহারা বেঁচে থাকা যে কঠিন, সেই উপলব্ধি থেকে আত্মীয়-স্বজনের কটূ কথা এড়িয়ে মায়ের বিয়ের উদ্যোগ নেন তিনি।
পাঁচ বছর আগে মারা যান লিজা ও মারিয়াম জ্বীমের বাবা রুহুল আমিন। তারপর দুই মেয়েকে নিয়ে বিপদে পড়েন নাদিরা।
ব্যবসায় লোকসান চরম আর্থিক সঙ্কট এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার করা টাকা শোধ করতে না পেরে নানান অপমানের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের অগাস্টে ঢাকার মিরপুরে নিজের সেলাইয়ের কারখানায় গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেন রুহুল আমিন।
লিজা বলেন, “মিরপুরে বাসার নিচেই ছিল আমাদের নিজেদের সেলাইয়ের কারখানা। মা মেয়েদের পোশাক সেলাই করতেন, আব্বু কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৬ সালে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাবা সেলাইয়ের ব্যবসাটি বড় করা চেষ্টা করেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই ব্যবসায় ক্ষতি হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। আমরা পড়ে যাই আর্থিক সঙ্কটে।”
সেসময় লিজা ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী, তার ছোটবোন মারিয়াম পড়তেন অষ্টম শ্রেণিতে।
লিজা বলেন, “তখন আমার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে। ওদিকে ঋণ সুদে-আসলে বেড়েই যাচ্ছিল। একপর্যায়ে আত্মীয়-স্বজনরা টাকার জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার পর বাবাকে ঘর থেকে বেরও করে দেওয়া হয়। অপমান সহ্য করতে না পেরে আব্বু বাসায় এসে কারখানার ভেতরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।”
বাবার মৃত্যুর পর চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয় লিজাদের। গুটিকয়েক আত্মীয়ের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলেও বেশিরভাগই তাদের নিয়ে নানা কটূ কথা বলছিল। এমনকি রুহুল আমিনের মৃত্যুর জন্য স্ত্রী নাদিরাকে দায়ী করে আসছিল বলে জানান মেয়ে লিজা।
মায়ের বিয়ের খবরে ফেইসবুকে নানাজনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া অভিভূত হয়েছেন লিজা।
“এত এত লোকের প্রশংসা পাব সেটা ভাবতেই পারিনি। বেশিরভাগ লোকই প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে আমাদের বয়সী তরুণ প্রজন্ম বিষয়টাকে অনেক ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। এটা খুবই ভালো একটা ব্যাপার।”
নেতিবাচক কিছু চোকে পড়েছে লিজার, তবে তা আমলে নিচ্ছেন না তিনি।
“কিছু কিছু গার্লস গ্রুপে আমার পোস্টটি শেয়ার করে লোকজন বলেছে, আমি দায়িত্ব এড়াতে আমার মায়ের বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি জানি, কোন পরিস্থিতিতে আমি আমার মায়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিয়ের প্রসঙ্গে নাদিরা বেগম জানান, “এতদিন অনেক মানসিক যন্ত্রণার ভেতর ছিলাম। এখন অনেকটাই সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত মনে হচ্ছে। যে মানুষটার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, এ কয়দিনে মানুষটা আমাকে খুবই যত্নে রেখেছেন। তিনি আমার অনেক খেয়াল রাখেন।”
নাদিরা বেগমের স্বামী হান্নান খান জানান, “রনি আর লিজা দুজনের কাছেই আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। তাদের কারণেই আমি একজন সঙ্গী পেয়েছি। মনের মিলই অনেক বড় ব্যাপার। আমাদের দুজনের মন-মানসিকতায় অনেক মিল আছে। আশা করছি যতগুলো দিন বেঁচে থাকব, একসাথে সুখে-শান্তিতে থাকব।”
লিজা বলেন, “৫ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর মা অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। গত বছর আমার বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এ সমাজে একজন বিধবার স্বামী ছাড়া একা বেঁচে থাকা যে কতটা কঠিন, সেটা মাকে দেখে বুঝতে পেরেছি।
“এ সমাজে বিধবা হওয়া, একজন নারীর একা থাকা অনেক বড় অপরাধের চোখে দেখা হয়। আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে পর্যন্ত অপবাদ দিয়েছে লোকজন। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক চাপ থেকে মুক্তি দিতেই মায়ের বিয়ে দিলাম।”
“কে কী ভাবলো, কে কী বললো, তা নিয়ে আমাদের কিচ্ছু আসে-যায় না। আমরা শুধু চাই আমাদের মা ভালো থাকুক। বাকি জীবন একজন সঙ্গী নিয়ে শান্তিতে থাকুক,” বলেন লিজা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।