Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন

কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : আর্তমানবতার সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইনডোর ও আউটডোর মিলে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চোখের অপারেশন হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি রোগীর। বায়তুশ শরফ একটি অসাম্প্রদায়িক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চক্ষু রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন অর্ধডজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। রয়েছে দক্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও পরিচালনা। কথায় নয়, কাজেই প্রমাণ কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল। এখানে রয়েছে স্বল্প খরচে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অপারেশন ব্যবস্থা। নামমাত্র মূলে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা, ক্ষেত্র বিশেষে সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসাও দেয়া হয় এখানে। এ কারণে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের সুনাম-সুখ্যাতি কক্সবাজার ছাড়িয়ে খ্যাতি পেয়েছে চট্টগ্রামের বাইরেও। পীর সাহেব বায়তুশ শরফ আল্লামা কুতুব উদ্দিন (মুঃ আলীর) তথ্যাবধানে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স পরিচালা করছেন সর্বজন প্রিয় আলহাজ সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সুদক্ষ পরিচালক ম-লী। বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক আলহাজ সিরাজুল ইসলাম জানান, পীর মুরশির্দী সিলসিলার এই বায়তুম শরফ কমপ্লেক্স অরাজনৈতিক, আসম্প্রদায়িক ও সম্পূর্ণ সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। এর অধীনে রয়েছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল, মসজিদ, এতিম খানা, হেফজ খানা, জাব্বারিয়া একাডেমি হাই স্কুল ও প্রতিবন্দ্বীদের বিশেষায়িত সেবা কার্যক্রম। ৫০ শয্যার চক্ষু হাসপাতালের যাত্রা হয় ১৯৯২ সালে। চক্ষু অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সাল থেকে। বায়তুশ শরফের মহাপরিচালক পীরে কামেল আল্লামা কুতুব উদ্দিন (হুজুর) প্রতিষ্ঠানটির মূল অভিভাবক। তার আধ্যাত্মিক ও জ্ঞানগর্ভ নির্দেশনায় এই হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে প্রতিদিন আওটডোরে প্রায় ২০০ এবং ইনডোরে ৫০ জন রোগীর সেবা দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভিজিট ফি নেওয়া হয় মাত্র ১০০ টাকা। বিকাল ৩টার পর চেম্বারে থাকেন স্পেশাল চিকিৎসক। হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ডিইউ ডিগ্রিধারী চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার মো. মুশফিকুর রহমান নিয়মিত চেম্বার করেন এখানে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের চিফ সার্জন। তার তত্ত্বাবধানেই প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত রোগীর অপারেশন হয়। তিনি ছাড়াও এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. সুমাইয়া ইয়াসমিন, ডা. মিশকাত জাহান নূর, ডা. মো. ওমর ফারুক এবং ডা. মো. ইসমাইল হোসাইন। আর এসব কিছু সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করেন বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ সিরাজুল ইসলাম। এ কারণে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল শুধু কক্সবাজারের নয়, এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র সর্ববৃহৎ সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার চট্টগ্রাম শুধু নয় এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন দেশের দূরদূরান্ত থেকে চক্ষু রোগীরা। সরেজমিন ইনডোরে গিয়ে কথা হয় ষাটোর্ধ রোগী মকবুল আহমদের সাথে। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। মকবুল আহমদ জানান, ১০ বছর ধরে তিনি চোখ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। দুই চোখে কিছুই দেখেন না। হাঁটাচলা করতে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। ১৭ দিন আগে ডান চোখের অপারেশন হয়। গত ৭ ডিসেম্বর বাম চোখের সফল অপারেশন হয়েছে। তিনি কৃতজ্ঞতা সুরে বলেন, ‘আপারেশনের পর থেকে ডান চোখে সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পান। বাকি চোখও ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় তিনি মুগ্ধ।’ তার পাশের সিটে বসা রওশান আলী নামের আরেক রোগী জানান, দুই বছর ধরে তিনি দু’চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পান না। রওশন আলীর বাড়ি পার্বত্য জেলার বান্দরবানে। ১৪ দিন আগে তার ডান চোখ অপারেশন সম্পন্ন হয়। এই চোখ এখন পুরোপুরি ভালো। বৃহস্পতিবার ডান চোখের অপারেশন হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে চোখের চিকিৎসা করতে আসা শামসুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২ বছর যাবত চোখ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। বাম চোখের অপারেশন হওয়ার পর তিনি স্বস্তি অনুভব করছেন। হাসপাতালের সেবার মান ও চিকিৎসকদের যতœশীল মনোভাবের কারণে তিনি সন্তুষ্ট। এরকম চোখের অপারেশনের জন্য একদিনের সিরিয়ালে ছিল ৪৩ জন রোগী। এদের মধ্যে ১৮ জন মহিলা ও ২৫ জন পুরুষ। সেখানে অর্ধেকের বেশি রোগীর অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে হাসপাতালের সেবা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকতা ও গবেষণায় ২০০১ সালে বায়তুশ শরফ সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশ্বজিত সেন জানান, পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর অন্ধত্বের হার কমিয়ে আনতে বায়তুশ শরফ একটি আন্দোলন শুরু করে। শহর ছাড়িয়ে তারা পাহাড়ি অঞ্চলেও সিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিয়েছে। বায়তুশ শরফের কারণে অন্ধত্বের হার অনেকটা কমে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক গরিব-অসহায় মানুষ চোখের চিকিৎসা করতে পারে না। এসব মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল। হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম কামাল জানান, বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বড় ধরনের অশীর্বাদ। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে নি¤œশ্রেণীর কর্মচারী পর্যন্ত মানবসেবায় আন্তরিক। হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক পুরস্কৃত জেলার বরেণ্য শিক্ষাবিদ আলহাজ সিরাজুল ইসলাম জানান, একটি বায়তুশ শরফ হাসপাতাল লাখো মানুষের চোখে আলো ফিরিয়ে দিয়েছে। নামেমাত্র মূল্যে অথবা বিনামূলে হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ লাখ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চোখের অপারেশন হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি রোগীর। এটি একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই আন্তরিক ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। এজন্য তিনি আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া, পীর সাহেব বায়তুশ শরফ বাহারুল উলুম আল্লামা কুতুব উদ্দিন হুজুরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। হাসপাতালের সেবা আরো প্রশস্ত করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ