Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়, বিদ্যুৎহীন সারাদেশ জেনারেটরের মাধ্যমে জরুরি বিভাগ, আইসিইউ, হাসপাতালের সব অস্ত্রোপচার রুম, এইচডিইউ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচল রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে : স্বাস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৫ এএম

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা গতকাল দুপুর থেকে বিদ্যুৎহীন ছিল। এ অবস্থায় রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল। জেনারেটর দিয়ে সীমিত পরিসরে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল। এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ না এলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। দুপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে (ঢামেক) বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বারান্দায় অস্ত্রোপচারসহ নারী-পুরুষ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা অন্ধকারের মধ্য অবস্থায় করছেন। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জেনারেটরে মাধ্যমে হাসপাতালের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ চালু রাখা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে ঢামেক বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বারান্দায় অস্ত্রোপচারসহ নারী-পুরুষ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা অন্ধকারের মধ্য অবস্থায় করছেন। পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ অবস্থায় অস্ত্রোপচারের রোগী নির্মল চন্দ্রকে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে গরমে কাতরাতে দেখা গেছে। নির্মল চন্দ্র মাথায় সমস্যাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০০ নাম্বার ওয়ার্ডের বাইরে অতিরিক্ত বেড ২৩ নাম্বার বেডে ভর্তি আছেন তিনি। গত দুই দিন আগে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই রোগীর ছেলে নিতাই চন্দ্র বলেন, দুপুর থেকে বিদ্যুৎ নেই। বাবার গত দুইদিন আগে অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাত পাখা দিয়ে এই অন্ধকারে বসে বসে বাবাকে বাতাস করছি। হাসপাতালে সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম জানান, আইসিইউ, হাসপাতালের সব অস্ত্রোপচার রুম, এইচডিইউ ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হাসপাতালে নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সচল রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১২ ঘন্টা সার্ভিস দেয়া সম্ভব, এরবেশি সম্ভব হবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ২টা থেকেই হাসপাতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। জরুরী বিভাগ, আইসিইউ, এইচডিইউসহ রোগীদের সেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সচল রাখা হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দোতলার ২০৩, ২০৪, ২০৫ ও ২০৬ নাম্বার ওয়ার্ডের বারান্দায় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রোগীদের পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অবশ্য হাসপাতালের পুরাতন ভবনের আইসিইউ, জেনারেল ওটিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে দেখা গেছে।

বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বেসরকারি এইমস হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, লাইট, ফ্যান, এসিসহ সবকিছু বন্ধ করে ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ হয়ে বসে আছেন কর্মকর্তারা। রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালের আশপাশে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।

এইমস হাসপাতালের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ যাওয়ার পর থেকে জেনারেটরে সব মেশিন এবং যন্ত্রপাতি চালানো হচ্ছে। টানা ২ ঘণ্টা চালানোর পর এখন এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রেখেছি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না এলে আবার দুই ঘণ্টার জন্য জেনারেটর চালু করা হবে। তিনি বলেন, জেনারেটর চালু রাখার জন্য পাম্পে ডিজেল আনতে পাঠিয়েছি, কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় তারাও ডিজেল দিতে পারছে না। অধিকাংশ পাম্পগুলোই ডিজেল বিক্রি বন্ধ করে রাখছে। ডিজেল না আনতে পারলে তো জেনারেটরও চালাতে পারব না। আর আপনি জেনারেটর একটানা কতক্ষণ চালাবেন? তারও তো বিশ্রাম প্রয়োজন হয়।

রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট নেই। এ কারণে আমাদের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যেসব হাসপাতালে আছে, সেগুলোর জন্য তো বিশাল সমস্যার কারণ। রাতের মধ্যে বিদ্যুৎ না এলে বড় ধরনের বিপর্যয় হবে।

বাড্ডা এলাকার ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, জেনারেটরের মাধ্যমে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সচল রাখা হয়েছে। তবে, বিদ্যুৎ না এলে জেনারেটরে নির্ভর করে হাসপাতাল চালু রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির এক কর্মকর্তা বলেন, ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া যেন লাইট-ফ্যান বা এসি চালানো না হয়। শুনেছি পেট্রোল পাম্পে নাকি ডিজেল পাওয়া যায়নি। জেনারেটরে নির্ভর করে হাসপাতালের পরীক্ষা কার্যক্রম কতক্ষণ চালানো যাবে? বিদ্যুৎ না এলে অবশ্যই সমস্যায় পড়তে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে বড় বড় সব হাসপাতালগুলোকে দ্রুত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, রোগীরা যেন কোনভাবে কস্ট না পায়। চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেস্টা করা হচ্ছে। জেনারেটরের মাধ্যমে জরুরী বিভাগ, আইসিইউ, হাসপাতালের সব অস্ত্রোপচার রুম, এইচডিইউ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচল রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে জেনারেটরের ডিজেল শেষ হয়ে গিয়েছিল, দ্রুত ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ