বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তিকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। গত শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১ টা ৪৯ মিনিটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেইজ থেকে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির পরেই শুরু হয় এই লঙ্কাকাণ্ড। যার জের ধরে সিলগালা হয় হল। পেছানো হয় পরীক্ষা, মহড়া চলে অস্ত্রের। অন্যদিকে ৩ দিন পর কেন্দ্রীয় সভাপতি জানান, প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। ফলে প্রশ্ন উঠছে, শান্ত ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত করার এ দায় কার?
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পরদিনেই ৫ বছর ধরে ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থানরত পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের গ্রুপটি প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরবাইক নিয়ে ক্যাম্পাসে অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম লোটাস কামালকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল দেন। এসময় তারা বাঁজি ফুটিয়ে ও 'ককটেল, ফাঁকা গুলি'( অনেকের মতে) করে উল্লাস প্রকাশ করেন পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অভ্যন্তরে লাঠি হাতেও প্রবেশ করেন।
এসময় গ্রুপটির পরোক্ষ নেতৃত্বে ছিল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস। এছাড়াও ঘটনাস্থলে নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী বিপ্লব চন্দ্র দাস ও ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবালখানসহ গুটিকয়েক শিক্ষার্থী। এছাড়াও কোটবাড়ির সালমানপুর ও বাতাইছড়ি বহিরাগতদের মধ্যে ছিল ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন ওরফে টারজান, ডাকাতি মামলার আসামি শাহজাহান, কোটবাড়ি, সালমানপুর ও বাতাইছড়ি (রেজা-ই-এলাহীর গ্রাম) এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কবির, লিটন, আলাউদ্দিন, মনির, মোশাররফ, আকতার, নজির আহমেদ, সুমনসহ স্থানীয় বিভিন্ন অটো ও সিএনজি চালকরা।
তবে বহিরাগতদের বিষয় অস্বীকার করে রেজা-ই-এলাহী বলেন, কমিটি বিলুপ্তির সংবাদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করেছি। এখানে কোনো বহিরাগত ছিল না। ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকাগুলির অভিযোগ মিথ্যা। আর বিপ্লব দাসকে খালেদ সাইফুল্লাহর খুনি বলা হলেও এখনও মামলা চলছে এবং এ মামলার অনেক আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধু হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, তারা স্পষ্টতই গুলি ছুঁড়েছে।
বহিরাগত গ্রুপটির বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই পেছন থেকে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র রামদা, হক স্টিক, রড নিয়ে ধাওয়া দেন। এসময় তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ইমাম হোসাইন মাসুম (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), কাজল হোসাইন (সহ-সম্পাদক), জিলান আল সাজিদ (সভাপতি, বিজ্ঞান অনুষদ), দত্ত হল নেতা সালমানসহ অন্যান্য আরো অনেকেই।
তবে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের মহড়াই হয় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সামনে। এসময় তাদের দুটিপক্ষকে সামলাতে হীমসীম খেতে দেখা যায়, তবে ইলিয়াস সমর্থকদের অভিযোগ, পুরো বিষয়টির সাথে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা যুক্তি দেখান, বহিরাগত গ্রুপটি হলে প্রবেশের আগ মূহুর্তেই, শেখ হাসিনা, নওয়াব ফয়জুন্নেছা, বঙ্গবন্ধু হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন এবং তাদের সামনেই গ্রুপটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইক মহড়া দেন পাশাপাশি বহিরাগত গ্রুপটি হল বন্ধ করে দিয়ে সিলগালা করার দাবি জানান। যার বাস্তবায়ন করেন ভিসি এ.এফ.এম আবদুল মঈন প্রশাসন।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবাসিক হলসমূহ বন্ধ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ৯ অক্টোবর শেষ হচ্ছে চলমান পূজার বন্ধ। বন্ধের পর আগামী ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হল বন্ধের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, হল বন্ধ করার মতো বড় ঘটনায় অতীতে জরুরি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কিংবা সিন্ডিকেট সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। প্রশাসন এখন শুধুমাত্র ডিন, প্রক্টর ও প্রভোস্টদের নিয়েই নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবদিক থেকে কথা আসলে আরও ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।
প্রশাসনের হল বন্ধের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়কজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাসে কারা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা। তা না করে তারা হল আর পরীক্ষা বন্ধ কর দিলাে। এতে ভোগান্তিতো আমাদেরই। এইভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার কোন পরিবেশই থাকবেনা। ছাত্রলীগের ভয়ে পরীক্ষা অফ করে হলসিলগালা করে মেরুদন্ডহীন প্রশাসনের পরিচয় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
এসব ঘটনায় প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ক্যাম্পাসে কোনো ঘটনা ঘটলে প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে যাবে এটাই স্বাভাবিক। প্রক্টরিয়াল বডি এটা ইফেশিয়েন্টলি হ্যান্ডেল করে শেষ করেছে কিনা এটা হচ্ছে পয়েন্ট। প্রক্টরিয়াল বডি সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত হয়ে সবাইকে সাক্সেসফুলি বের করতে পেরেছে।
ক্যাম্পাসে গোলাগুলির অভিযোগের ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমি কিছু বলতে পারছি না।
সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও বরাবরের মতো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ছাত্র না হয়ে অছাত্র যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাদের প্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয় কখনই গ্রহণ করবে না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা নেব। ওদের শনাক্ত করার বিষয়ে আমি প্রক্টরের সাথে কথা বলবো। পরবর্তীতে যাতে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে আমরা সে ব্যবস্থা নেব।
তবে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তির কারণে ঘোলাটে হল জল সেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় গতকাল (৩ অক্টোবর) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি (ইলিয়াস-মাজেদ) বলবৎ থাকবে। গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রেস রিলিজে সম্মেলনের তারিখ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভুলবশত সম্মেলনের তারিখ ছাড়াই প্রেস রিলিজটি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এবং এ মাসের শেষে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে কমিটি তুলে দেব।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।