রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
এম এ মতিন, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের দরগার চালা গ্র্রামের প্রত্যেকটি বাড়ির উঠানে উঠানে চলছে মানুষের রোগমুক্তির দাওয়াই সংরক্ষণের কাজ। শুকানোর পর যাচাই-বাছাই শেষে চলছে বস্তাবন্দির কাজ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট বড় বনজঙ্গল, ঝোড়ঝাঁপরা, বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ক্ষেতের আইল আর পুকুরের পাড়েই জন্মে রয়েছে মানুষের জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দেয়ার ভেষজ ঔষধির গাছগাছরা, গুল্ম ও লতাপাতা। এসব রোগমুক্তির দাওয়াই সংগ্রহ করে অনেক নারী-পুরুষ আজ স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পৌঁছে দিচ্ছে মানুষের হাতের নাগালেই রোগ সারানোর মাহৌষুধ। এমনই ব্যতিক্রমী চিত্র মিলেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী ইউনয়নের দরগাচালা গ্রামের শতশত ঘরে। এ গ্রামের প্রায় ৩শ পরিবার প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে ইউনানী, হারবাল গাছগাছরা সংগ্রহের কাজে। এ কাজ তাদের দিয়েছে অর্থ ও সম্মান। অনেকের কর্ম সৃষ্টি করে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করেছে বনবাধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা অচেনা নাম না জানা অনেক ভেষজ গুণাবলীর বনজগুল্মলতা গাছগাছরা। আশপাশের প্রায় দুই সহস্রাধিক লোকের সরাসরি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে এ বনজ ঔষধি গাছগাছরা। দরগাচালা গ্রামের প্রসিদ্ধ হার্বস (শুকনা ওষুধসমূহ) ব্যবসায়ী আইনাল হক ফকির জানান, আমাদের তিন পুরুষ এ পেশার সাথে ছয় দশক ধরে সরাসরি জড়িয়ে আছি। আমার দাদা মরহুম ওয়াহেদ আলী ফকির সবার আগে এ অঞ্চলে বনের ভেতরে ঘুরে ঘুরে গাছগাছরার ঔষধ সংগ্রহ করেছেন। তিনি এ অঞ্চলে একজন প্রসিদ্ধ হেকিম হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার সংগ্রহশালা থেকে শক্তি সাধনা, হামর্দদের মত বড় বড় ঔষধি প্রতিষ্ঠান হার্বস সংগ্রহ করে তাদের ওষুধ তৈরি করত। পরে আমার বাবা হেকিম আবদুল কাদির ফকির দাদার হাত ধরে এ পেশায় আসেন। সব শেষে আমিও এ পেশায় জড়িয়ে আছি। আইনাল আরো জানান, এ হার্বসের ব্যবসা (শুকনা ওষুধসমূহ) এ এলাকার প্রায় তিনশ’ পরিবারের কর্মের সৃষ্টি করছে। অন্য ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন জানান, এ পেশায় কয়েক দফায় শ্রমিক কাজ করে। বনজঙ্গল থেকে একশ্রেণির শ্রমিক কাঁচা ভেষজ ঔষধি গাছ লতাপাতা সংগ্রহ করে। রোদে শুকানোর পরে অন্য শ্রমিকরা কাটিং (কুচি করে কাটা) করে বস্তায় ভর্তি করে। পরে তাদের কাছ থেকে শুকনা হার্বস কিনে ইউনানী, হারবাল ওষুধ কারখানায় বিক্রি করে এলাকার বড় ব্যবসায়ীরা। ঔষধি লতাপাতা সংগ্রহকারী মুনতাজ উদ্দিন জানান, সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এ ৬ মাস ওষুধ সংগ্রহের উত্তম সময়। গ্রাম এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বনজঙ্গল থেকেও ওষুধ সংগ্রহ করা হয়। অর্জুনের ছাল, লজ্জাবতি, নিমের পাতা ছাল, শাপলা, কন্টি কাঁটাসহ অনেক ওষুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তিনি জানান, কাঁচা অর্জুনের ছাল ৪০০ টাকা মণ কিনে তা শুকিয়ে ২২শ থেকে ২৪শ টাক ধরে বিক্রি করা হয়ে। প্রতি মাসে কয়েকশ’ টন হার্বস বিক্রি করা হয় এ গ্রামের বিভিন্ন ঘর থেকে। বিভিন্ন ঔষধের ছাল, গাছ, বিভিন্ন দামে ক্রয় করা হয়। পরে ব্যবসায়ীর কাছে শুকনা করে কেটে বিভিন্ন দরে হার্বস বিক্রি করা হয়। হেকিম আবদুল কাদির ফকির জানান, এখন অনেক ভেষজ ঔষধি পথ্য বিলিপ্ত হয়ে গেছে। গ্রামের বনজঙ্গলে এখন আর হরিতকি, বহেরা, থানকুচি, তুলসী, বাশক, একাঙ্গী, ঘিলা-পিপুলসহ বেশ কিছু ঔষধি গাছগাছরা পাওয়া যায় না। বরমী ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাদল সরকার বলেন, এ গ্রামের প্রায় ৩শ পরিবার প্রাচীনতম এ ভেষজ ঔষধি সংগ্রহের পেশা ধরে রেখেছে। এ কাজ করে মানুষের রোগমুক্তিতে তারা ভূমিকা রাখছে। অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে এ প্রাচীন পেশা। এ এলাকার ব্যবসায়ীরা যদি কম সুদে ব্যাংক ঋণের সুবিধা পায় তাহলে আরো ভালো করবে এ পেশায়। মর্ডান হারবাল লিমিটেডের প্রধান হেকিম (ক্যামিস্ট্র) মো. এবিএম হাবিবুল্লাহ জানান, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ১৩৬৫টি চিকিৎসা পদ্ধতির স্বীকৃত রয়েছে। আমাদের দেশে এরমধ্যে অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও হারবাল পদ্ধতির চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। হারবাল একটি ভেষজ ঔষধি পণ্যের মিশ্রণ আর ইউনানী বেশ কয়েকটি ভেষজ ঔষধি গাছগাছরার মিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে। রোগের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ হলে ভেষজ চিকিৎসা প্রাকৃতিকভাবে রোগমুক্তির নিশ্চয়তা প্রদান করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।