Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনবল সঙ্কটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মো. নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ী থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে কোন চিকিৎসক এসে বেশি দিন থাকেন না। এখনো গড়ে ওঠেনি পাবলিক প্যাকটিসের ভালো প্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। রয়েছে মেডিকেল অফিসার, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট। ফলে উপজেলাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা থেকে তেমনি জনবল সংকটে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই ৫০ শয্যার হাসপালটিতে জনবল নেই ৩১ শয্যারও। কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জুনিয়র কনসাল্টটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসাল্টটেন্ট গাইনী, জুনিয়র কনসাল্টটেন্ট এ্যানেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসাল্টটেন্ট সার্জারি এ ৪টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এছাড়া শুন্য রয়েছে পরিছন্নতা কর্মী, মালি, আয়া, সুইপার, নাইটগার্ড, টিকেট মাস্টার, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোরকিপার, অফিস সহকারী, প্যাথলজিস্ট, এক্সরে টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন পদ। অ্যাম্বুলেন্স চালকের পদটিও শুন্য। কোন রোগীকে দ্রুত অন্য হাসপাতালে নেবার জন্য জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায় না। এলাকাবাসীর অভিযোগ হাসপাতাল থাকলেও সেবা পাওয়া দুস্কর।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল প্রাঙ্গনে পলিথিনসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে নোংড়া হয়ে আছে। প্রতিদিন ঝাড়ু না দেয়ায় হাসপাতালের সিড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ধুলাবালি জমে আছে। মেডিকেল ওয়ার্ডগুলো ধুলা আর নোংড়ায় ভর্তি। ট্রয়লেটগুলো পরিস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। এক্স-রে রুম তালা বন্ধ, হাসপাতাল চত্বরে থাকা টিউবয়েল চুরি হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের দরজা ভাঙা। সেখানে বহিরাগত ও রোগীর স্বজনরা সহজে প্রবেশ করেই হরহামেশায়।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সুফিয়া বেগম বলেন, এখানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামে রয়েছে স্টাফ, সেবিকা, চিকিৎসক কিন্তু সেবার মান কমিউনিটি ক্লিনিকের চেয়ে খারাপ। ঠিক মতো ওষুধ দেয়া হয় না। বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে দোকান থেকে ক্রয় করতে হয়। এখানে চাকরিরত চিকিৎসকগণ দুপুর ২টার পর কালুখালী উপজেলার এলাকায় অবস্থান করে না ফলে হসপিটালের বাইরেও সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। আমি মারপিটে আহত হয়ে ভর্তি হয়েছিলাম সার্টিফিকেটটি দেয়ার মতো লোক নেই।
আলাউদ্দিন, সাত্তার সরদার বলেন, আসছিলাম ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু যেখানেই যাই রুম তালা দেয়া। বলে ডাক্তার নেই, কাল আসেন। কি করবো এখন রাজবাড়ী বা পাংশায় যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। সড়কের পাশে হাসপাতাল। জরুরি অনেক রোগী আসে। কিন্তু আসলেই রাজবাড়ী বা ফরিদপুরে পাঠিয়ে দেয়। এখানে চিকিৎসক প্রয়োজন জরুরি।
আব্দুল আলীম নামে একজন বলেন, টিউবয়েল চুরি হয়ে গেছে। বাইরের লোক পানি পান করতে পারে না। রাতে রোগী থাকলে স্বজনদের মোবাইল চুরি হয়। রোগী কম থাকায় বহিরাগত প্রেমিক জুটি এসে শিটে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করে। ওটি রুমে বসে সিগারেট খায় আবার কেউ কেউ বসে গল্প করে।
হাফিজা বেগম নামে রোগীর স্বজন বলেন, দুর্গন্ধে বসে থাকা যায়না। ডাক্তারও নেই। এখানে সরকার শুধু বিল্ডিং বানিয়েছে। কোন চিকিৎসক দেয়নি। ওষুধ সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, হাসপাতালে কোন পরিছন্নতা কর্মী নেই। এজন্যই এই অবস্থা হয়ে আছে। এছাড়া কোন গার্ড নেই। রাতের বেলা আমাদের ডিউটি করতেই ভয় করে।
কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারজানা ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে সুইপার, ক্লিনার, ঝাড়ুদার নেই। এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনোলজিস্ট পদে লোক পদায়ন নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও সনোলজিস্ট নেই, সার্জিক্যাল চিকিৎসক না থাকায় সার্জারি করা সম্ভব নয়। বর্তমানে নরমাল ডেলিভারি চালু করেছি, পরবর্তীতে লোকবল বৃদ্ধি হলে সেবা প্রদান বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ১২ জন চিকিৎসক আর ২৭ জন নার্স দিয়ে আমরা সর্বাত্মকভাবে সেবা প্রদানের চেষ্টা করে আসছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ