রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : জমিদারী যুগের অবসান হয়েছে প্রায় দেড়শত বছর পূর্বেই, তবে তাদের নিজ হাতে গড়া বিভিন্ন স্থাপনা, বৃক্ষ, জলাশয়গুলো আজো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের কৃতকর্মের অবদান ও আর দুঃশাসন স্মৃতিগুলো নিয়ে। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার জমিদার বাবু জগদিস চন্দ্র ব্যানার্জির অধীনে থাকা তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমায় অন্তর্গত ছিল। ফলে খারিজা তালুক স্বত্বাধীকারী রঘুরামপুরের শ্রী রঘুনাথ রাম নারায়ণের অধীনে রূপগঞ্জের পূর্বপার ছিল ঢাকা জেলাধীন একটি জনপদ। এ জনপদের লোকজনের জন্য এক সময়ের আতঙ্কের নাম ছিল রঘুরামপুরে রাজার নানা কুকীর্তি। স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, মুড়াপাড়ার জমিদার জগদিস চন্দ্র ব্যানার্জির নিজ বাসভবন তৎকালীন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি থেকে একটু বিনোদনের জন্য হাতিতে চড়ে শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে রঘুরামপুরের তালুকে চলে যেতেন। ঐ এলাকায় তালুকভুক্ত জমিদার শ্রী রঘুনাথ রাম নারায়ণ কর্তৃক খনন করা ২টি দিঘী যথাক্রমে আগার পাড়ার দীঘি, রঘুরামপুরের দীঘিগুলোতে পরিবারের সদস্য নিয়ে বাংলো হিসেবে সময় ব্যয় করতেন। পরে গুতিয়াব এলাকায় চন্ডিবাড়ির বকুল কানণে পাঠাবলি দিতেন। সূত্র জানায়, সে সময়ে ১২টি বকুল ফুলের গাছ বর্তমান বিশালকার আকৃতিতেই দাঁড়িয়ে ছিল। যা কালের বিবর্তে আজো তরতাজা ও সজীবপ্রাণে লোকজনদের ছাঁয়া দিয়ে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দা রঘুনাথ রাম রায় এর উত্তরসূরী ৭২ বছর বয়সী শ্রী যাদব চন্দ্র জানান, ছোট্ট বয়স থেকেই চন্ডিবাড়ির ৮টি বিশালাকার বকুল গাছ আর দুটি বটগাছ একই আকৃতিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভাষ্যমতে, তার পিতা শ্রী রাম অশ্বনী কুমার চৌধুরী, পিতামহ শ্রী রাম নিবারণ চন্দ্র চৌধুরী, দীপুরাম রায় চৌধুরী, তার পিতা শ্রী রঘুরাম নারায়ণ চৌধুরীসহ ধারাবাহিকভাবে জানতে পারেন বকুল বৃক্ষগুলো তখনো অক্ষত অবস্থায় ও একই আকৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। আর তাদের গল্পও ছিল নানা প্রাচীন কল্পকাহিনী এই বকুল কাননকে ঘিরে। ফলে অজানা বয়স নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বকুল কানন হয়ে ওঠছে ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমণস্থল। তবে স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ গাছগুলোর বয়স প্রায় ১৩শ’ বছরের অধিক। তারা জানায়, সাধারণত বকুল ফুলের গাছের আকৃতি অতটা বৃহৎ হয় না। তবে গুতিয়াব চন্ডিবাড়ি এলাকার অতি উর্বর জৈব শক্তিযুক্ত দোঁয়াশ মাটি থাকায় এ গাছগুলো এমন আকৃতি পেয়েছে। তারা আরো জানায়, গাছগুলোর বয়স নিয়ে রয়েছে অজানা রহস্য। কারণ, এই বকুল কাননের অভ্যন্তরে শিব মন্দির স্থাপনকালে প্রাচীর শিলালিপী পাওয়া গেছে যার বয়স নিরুপন করা যায়নি। তাদের ধারণা এই চন্ডিবাড়ির বকুল কানন অতি প্রাচীনকালের জনপদের স্বাক্ষী। তবে বর্তমানে এই বকুল কানন হয়ে ওঠেছে কিছু সৌখিন দরিদ্র পরিবারের আয়ের সুযোগ। এই এলাকার আর ২০ থেকে ২৫টি পরিবারের শীত মৌসুমী বকুল ফুলের মালা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের একজন সুবল দাশ জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় বকুল ফুল কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে যান সে। পরে পরিবারের সকল সদস্য মিলে ছোট ও বড় আকারের বকুল ফুলের মালা তৈরি করেন। এসব মালা সকাল হলেই স্থানীয় জনবহুল স্থানে ফেরী করে বিক্রি করেন। একটি মালা ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০টাকায়ও বিক্রি করেন। ফলে প্রতিদিন ২শ’ থেকে ৩শ’ মালা বিক্রি করে আয় করেন দৈনিক হাজার টাকা প্রায়। এভাবে এই এলাকার আরো পরিবারের সদস্যরা শীত এলেই এই পেশায় যুক্ত হন। আয় করেন বাড়তি টাকা। ফলে বকুল কানন তাদের কাছেও আর্শিবাদ হিসেবে মানেন তারা। স্থানীয় লোকজন জানায়, বকুল কাননটি পুরোনো বিভিন্ন ইতিহাসের স্বাক্ষী। এখানে ১২টি বকুল বৃক্ষ ছিল একসময়। তবে কালের বিবর্তে কিছু গাছ মারা যায়। পরে ৮টি বৃহৎ বকুল গাছ ও ফুল হয়ে ওঠে স্থানীয়দের বিনোদনের স্থান। গতবছর একটি গাছ কালবৈশাখী ঝড়ে ভেঙে যায়। এতে এখন দাঁড়িয়ে আছে ৭টি বকুল গাছ। স্থানীরা মনে করছেন এভাবে গাছগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে তাই উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এমন পুরোনে স্মৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। সূত্র আরো জানায়, এই বকুল কাননটির গাছগুলো জমিদারের অত্যাচারের নানা কুকর্মের স্বাক্ষীও হিসেবে ছিল। জমিদাররা তাদের শত্রুপক্ষকে এখানে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করতো বলে রয়েছে নানা কাহিনী। মেয়ে সন্তান হলে এখানে পুঁতে রাখারমত ভয়ংঙ্কর কাহিনীও রয়েছে মুখে মুখে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, গুতিয়াব এলাকার বকুল ফুলের বৃক্ষগুলো অতি প্রাচীন। এই বৃক্ষের দেখা মেলা ভার। স্থানীয়দের পাশাপাশি সরকারিভাবে এই গাছের বীজ সংগ্রহ করে রাখার তাগিদ দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, এ গাছ ধ্বংস করা মানে ইতিহাস ধ্বংস করা। সকলকে এই বৃক্ষগুলোর যতœ করার আহ্বান জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।