Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বড়লিয়ায় তিন হাজার একর জমি অনাবাদি

পটিয়ায় পলি ও কচুরিপানা জমে ৭ খাল ভরাট

এস কে এম নুর হোসেন, পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০৮ এএম

পটিয়া উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নে ভরাট হয়ে গেছে দীর্ঘদিনের পুরনো ৭ খাল। এতে ১০ গ্রামের দুই ফসলি জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। আমন মৌসুমে পানিবদ্ধতা এবং বোরো মৌসুমে পর্যাপ্ত পানির অভাবে কৃষকেরা চাষাবাদে উৎসাহ হারাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে জমিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় চাষাবাদের নির্ভরশীল পরিবারগুলো চরম বেকায়দায় পড়েছেন। মৎস চাষিরা পড়েছেন হুমকির মুখে।

স্থানীয় ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নে আমন ও বোরো আবাদযোগ্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার একর জমি রয়েছে। এতে ২৫০০ কৃষক চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কৃষকরা এ জমিগুলোতে ৭টি খাল যথাক্রমে কাটাখালি খাল (৩ কি.মি), ধামাই বিবিখাল (১ কি.মি), গরুলুটা খাল (২ কি.মি), কুমারখালি খাল (১ কি.মি.), কালাগাজী খাল (১.৫ কি.মি.), মতিয়ারখাল (২ কি.মি.), পেরোলা-বড়লিয়া সীমান্তবর্তী খাল (১.৫ কি.মি.), খাল থেকে পানি দ্বারা বোরো ও আমন মৌসুমে চাষাবাদ করে। এ খালগুলোর মাধ্যমে বড়লিয়া, পূর্ব বড়লিয়া, জঙ্গলখাইন, মেলঘর, কর্তলা, বেলখাইন, বাড়ৈকাড়া, পেরোলা, ওকন্যারা ও আশিয়া গ্রামের হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হয়।
কৃষকরা জানান, ৭/৮ বছর পূর্বে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ এস্কেভেটর দিয়ে খালগুলো খনন করেছিল। ঐ সময় এলাকার কৃষকরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চাষাবাদ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে খালগুলো ড্রেজিং এর অভাবে গত ৩/৪ বছর ধরে পলি ও কচুরিপানা জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বলে কৃষক নুরুল কবীর চৌধুরী, মো. ইব্রাহিম, সুনিল মল্লিক, মো. বশির, মো. নুরুল আমিন অরুপ বড়ুয়া জানান।
কৃষক নুরুল কবীর চৌধুরী জানান, আমার মৌরশী প্রায় ২০ একর জমি রয়েছে। এ জমিগুলোতে চাষাবাদ করে আমরা বংশ পরম্পরায় দিনকাটিয়ে এসেছি। বর্তমানে এলাকার ৭টি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের জমিগুলোতে কোন চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। আমার মতো এলাকার সব কৃষকের এখন একই অবস্থা। কৃষক সুনিল মল্লিক বলেন, সরকার যেখানে এক ইঞ্চি জায়গা খালি না রাখতে বলছে সেখানে বড়লিয়ায় আড়াই হাজার একর জমিতে পানির অভাবে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তা ভাবতেই পারছিনা। আমি এ ব্যাপারে আমাদের এমপি ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, কিছু কিছু কৃষক পুকুর থেকে ও নানা উপায়ে পানি সংগ্রহ করে চাষাবাদ করলেও বেশিরভাগ কৃষকের সমস্যা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না। আমি বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বাড়ৈকাড়ার ইউপি সদস্য মো. নুরুল হক বলেন, আমার গ্রামে পুকুরের পানি দিয়ে কেউ কেউ বোরো চাষা করলেও অনেকেই চাষ করতে পারেনি। কারণ খাল ভরাটের কারণে খালে কোন পানি প্রবাহ না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষকলীগের পটিয়া উপজেলা আহবায়ক ছৈয়দ নুরুল আবছার বলেন, বোরো মৌসুমে পানির অভাব আর আমন মৌসুমে খাল ভরাটের কারনে পানি নিস্কাষন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় বড়লিয়ার কয়েক হাজার জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। আমি বিষয়টি অবিলম্বে সুরাহা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
বড়লিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম শানু বিষয়টি সরেজমিন দেখে অবিলম্বে খাল খননে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পটিয়ার এমপিসহ সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, কৃষকদের সমস্যা দূর করার জন্য কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তারা এ মুহূর্তে বরাদ্দ না থাকার কথা জানিয়ে খাল খনন সম্ভব হচ্ছে বলে জানান। বড়লিয়ায় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ও কিছু জায়গায় পানি চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে আমি কৃষকদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা জেনেছি এবং সমস্যাগুলোর সত্যতা পেয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ