Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৌ পরিবহন ব্যবসায় ভয়াবহ মন্দার মধ্যেই দক্ষিনাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে আসছে আরো ৩টি নৌযান

বিনেয়োগ প্রায় শত কোটি টাকা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২২, ১০:০৬ এএম

নৌ পরিবহন খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার মধ্যেই রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের দুটি রুটে আরো ২টি বিলাসবহুল যাত্রীবাহী নৌযান চালু হচ্ছে। নির্মানাধীন রয়েছে আরো একাধীক। এরমধ্যে ‘এমভি এম খানÑ৭’ দেশের সর্ববৃহত যাত্রীবাহী নৌযান। এসব নৌযানের পেছনে উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধীক কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকলেও তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে ওয়াকিবাহাল মহলে।
পদ্মা সেতুর দ্বার খুলে যাবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই একমুখি হতে শুরু করেছে। যার সবচেয়ে ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের নৌ পরিবহন সেক্টরে। এ খাতে উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন বানিজ্যিক ব্যাংকের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের মধ্যে রাষ্ট্রয়ত্ব ও বেসরকারী ব্যাংকগুলোর পরিমানই প্রায় দু হাজার কোটি টাকার মত।
দক্ষিণাঞ্চলের রমরমা নৌ-বানিজ্য এখন নিকট অতীত। এঅঞ্চলের সাথে রাজধানীর অন্তত ৫০টি রুটে যে প্রায় দেড়শ যাত্রীবাহী বেসরকারী নৌযান চলাচল করত, তা গত ৩মাসে সিমিত হয়ে ১শর নিচে নেমেছে। রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসি’র একমাত্র অভ্যন্তরীন স্টিমার সার্ভিসটিও ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। শুধু বরিশালÑঢাকা নৌ পথে রুট পারমিটধারী ২৫টিরও বেশী বেসরকারী নৌযানের মধ্যে চলাচলরত ১৮টি নৌযানকে ৩টি ভাগ ভাগ করে রোটেশন পদ্ধতি পুণঃ প্রবর্তন করেছে মালিক সমিতি। ফলে উভয়প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ৩টি করে নৌযান পরিচালনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে মালিক সমিতি। ফলে প্রতিটি নৌযান ৩দিন পরে একটি ট্রিপ চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র রাজস্ব আয় হ্রাস পেয়েছে অর্ধেকেরও বেশী।
গত ২৬ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নৌযান যাত্রী হারাতে থাকে থাকে। ফলে ইতোমধ্যে একমাত্র ভোলাÑঢাকা রুট ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলা সদরের সাথে রাজধানীর নৌপথে যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৬০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েকটি জেলা ও উপজেলার সাথে ঢাকার নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধও হয়ে গেছে। অথচ নৌ-বানিজ্যই এতদিন দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি ছিল। এমনকি যাত্রীবাহী নৌযান নির্মান, মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন সহ পরিচালন ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে।
কিন্তু পুরো নৌ পরিবহন সেক্টরেই এখন বিষাদের সুর । সরকারীÑবেসরকারী ব্যাংকগুলো যেমনি চিন্তিত তাদের লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত আসা নিয়ে। তেমনি ঋন গ্রহিতাদের প্রায় সবারই রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এতবড় বিনিয়োগের ভবিষ্যত নিয়ে। তবে কয়েকজন নৌযান মালিক এতদিন নৌপথের রমরমা ব্যাবসার মধ্যেও ব্যাংকের টাকা ফেরত দেননি। তাদের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে ব্যাংকগুলোর উদ্বেগ আরো বেশী। এসব ঋন খেলাপীদের বিরুদ্ধে খুব সহসাই চুড়ান্ত আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন বানিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্বশীল মহল।
তবে এর পরেও ইতোমধ্যে নির্মিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান ‘সুন্দরবন নেভিগেশন’এর আরো দুটি যাত্রীবাহী নৌযান যাত্রী পরিবহনে আসছে। ‘সুন্দরবন-১৫’ ও ‘সুন্দরবন-১৬’ নামের এদুটি নৌযান যথাক্রমে পটুয়াখালীÑঢাকা এবং বরিশালÑঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করছে শিঘ্রই। ইতোমধ্যে দুটি নৌযানেরই চুড়ান্ত পরিক্ষামূলক পরিচালনও সম্পন্ন হয়েছে। এদুটি নৌযানই এযাবতকালের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও নিরাপদ বলে দাবী করেছেন সুন্দরবন নেভিগেশনের কর্ণধার সাঈদুর রহমান রিন্টু। তার মতে, ‘নৌ পরিবহন ব্যবসার চুড়ান্ত মন্দার মধ্যেও তারা বড় ধরনের একটি ঝুকি নিলেন। যাত্রীরা নৌ পথে চলাচল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নিরাপদ ও সাচ্ছন্দ ভ্রমনের জন্য যাত্রীরা নৌপথেও ভ্রমন করবেন’।
তবে এরচেয়ও বড় ঝুকি নিতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে নৌ ব্যাবসায় নবাগত প্রতিষ্ঠান ‘এম খান লিমিটেড’এর সত্বধিকারী মাহফুজ খান। যেখানে চলমান নৌযান নিয়ে মালিকগন উদ্বিগ্ন, সেখানে ‘এম খান-৭’ নামের দেশের সর্ববৃহত যাত্রীবাহী নৌযানের নির্মান কাজ শুরু করেছেন মাহফুজ খান। আগামী এক বছরের মধ্যে তার বিলাসবহুল এ নৌযানটি বরিশালÑঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং আরামদায়ক যাত্রী সেবার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আবার নৌ পথকেই প্রথম যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বেছে নেবে বলেও তার আশা।
ইতোমধ্যে এম খানÑ৭’এর মূল খোল এবং প্রথম তলার নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। এর মূল ইঞ্জিন সহ জেনারেটর সমুহের আমাদানীও সম্পন্ন হয়েছে। দেশের খ্যাতনামা নৌ স্থপতিদের নকশায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্বাবধানে নৌযানটির নির্মান কাজ চলছে। বরিশালের কির্তনখোলা নদী তীরের এম খান শিপ বিল্ডার্সেই পুরো নৌযানটির নির্মান কাজ আগামী ১ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে আশাবাদী মাহফুজ খান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ