পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাথায় ইটের আঘাতে শাওনের মৃত্যু : পুলিশ সুপার মুন্সীগঞ্জ
আমার আরও তিনটা ছেলে আছে -স্বামী আছে। আমি তাদের হারাতে চাই না। আতঙ্কে তিন ছেলে ও স্বামীও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি নিরাপত্তা চাই। মুন্সিগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষে নিহত শহিদুল ইসলাম ওরফে শাওন ভ‚ঁইয়ার মা লিপি আক্তার এসব কথা বলেন।
শাওনের বৃদ্ধা দাদি হালিমা বেগম বলেন, যাদের বিচারে সহযোগিতা করার কথা ছিল, মামলা করলে তাদের বিরুদ্ধেই করতে হবে। মামলা করলে আমার নাতি ফেরত আসবে না। উল্টো আমাদের অনেক অসুবিধা হবে। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দেব। আল্লাহ বিচার করবে।
শাওনের মা লিপি আক্তার বলেন, শাওন গুলিতেই মারা গেছেন। যারা বলছে আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে, তারা ওই ভিডিও দেখুক, যেখানে গুলির শব্দ হলো, ধোঁয়াও বের হলো, তখন আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ তারা সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের পরিবারকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা হুমকি দিচ্ছে, আমরা তাদের চিনি না। যারা হুমকি দিচ্ছে, তারা বলছে আমার ছেলে নাকি পুলিশের গুলিতে মরেনি। আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে। তারা পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার অভিযোগ পাল্টে ইটের আঘাতে মারা গেছে, এমন মামলা দিতে বলছে। আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে মুঠোফোনে কল করে তাঁদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে তাঁরা ও তাঁদের স্বজনেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে শাওনের পরিবারের এমন দাবির মধ্যেই গতকাল বুধবার পুলিশ সাংবাদিক সম্মেলন করে শাওনের লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে জানায়, পুলিশের গুলিতে নয়, শাওনের মৃত্যু হয়েছে মাথায় ইটের আঘাতের কারনে। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন নিজ কার্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সন্মেলনে জানান, যুবদল কর্মীদের ছোড়া ইটে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শাওন মারা গেছে। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টেও গুলির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিনি দাবি করেন, যুবদলকর্মী শাওন বিএনপির অন্য এক কর্মীর পেছন থেকে ছুড়ে মারা ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় স্বজনরা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিহত শাওনের লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তর করে। ফরেনসিক বিভাগ নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে চ‚ড়ান্ত মতামত দিতে ভিসেরা পরীক্ষা করে। তাতে মাথায় আঘাতজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে মতামত দেওয়া হয়।
উল্খ্যে, ২৬ বছর বয়সি শাওন ভ‚ঁইয়ার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা গ্রামে। তিনি ওই এলাকার ছোয়াব আলীর বড় ছেলে। পেশায় ছিলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। শাওন মিরকাদিম পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী হিসেবে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের কাছের মুক্তারপুরে গত ২২ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে শাওন ভ‚ঁইয়া ও বিএনপির সমর্থক জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৮) গুরুতর আহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওনের মৃত্যু হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে মিরকাদিমের মুরমা এলাকায় প্রবেশ করতেই থমথমে পরিস্থিতি দেখা যায়। শাওনের বাড়িতে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। শাওনের বাবা–চাচাদের ঘরগুলো নীরব। বাড়িতে নারীরা থাকলেও নেই কোনো পুরুষ। শাওনদের ঘরে তার মা, দাদি, ফুফু ও কয়েকজন নারী নির্বাক হয়ে বসে আছেন। শাওনের স্মৃতি মনে পড়লে ঢুকরে কেঁদে উঠছেন তাঁরা।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শাওনের পরিবারের দায়িত্ব আমাদের। তবে মামলা করা না–করা এটা তাঁর পরিবারের ব্যপার। তারা এ সরকারের কাছে নয়, আল্লাহর কাছে বিচার চায়।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, সামগ্রিক বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে। এরপরও যেসব বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে, সেগুলো আদালতকে জানানো হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না দেওয়ার জন্য শাওনের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঘটনার দিন বিএনপির কর্মসূচিতে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম মিছিলের ব্যানার ধরে টান দিলে সংঘর্ষ বাঁধে। ওই ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন আহত হন। এ ঘটনায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির ১ হাজার ৩৬৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
১৩৯ নেতা-কর্মীর আগাম জামিন ঃ
মুন্সিগঞ্জ স্থানীয় বিএনপি’র ১৩৯ নেতা-কর্মীর আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো:খায়রুল আলমের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো: কামাল হোসেন। তিনি জানান,গত ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর দু’দিন হাইকোর্টের বিএনপির তিন শতাধিক নেতাকর্মী আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। গত ২২ সেপ্টেম্বও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি’র সংঘর্ষেও ঘটনায় ২টি পৃথক মামলা হয়। এতে বিএনপি’র ৩১৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও ৭/৮শ’ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। এজাহারে সরকারি অস্ত্র, গুলি লুট ও মোটরসাইকেল পোড়ানোর অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। সংঘর্ষে যুবদলকর্মী সহিদুল ইসলাম শাওন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। #####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।