Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পঞ্চগড়ে ট্রলারডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন রেলমন্ত্রীর তদন্ত কমিটি গঠন

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:১১ এএম

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ৫১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ৪০ জন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গতকাল সোমবার সকালে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের রংপুর, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের তিনটি ডুবুরি দল উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রাও উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছেন। নদীপাড়ে নিখোঁজদের স্বজনসহ স্থানীয়রা ভিড় জমিয়েছেন। বিকেল ৪টার দিকে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর রায় এ তথ্য জানান।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কান্তি রায় বলেন, ভোর ৬টা থেকে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহীর তিনটি ডুবুরি ইউনিট উদ্ধার কাজ করছে। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে। অতীত অভিজ্ঞতা ও নদীর প্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে, ভুক্তভোগীদের কেউ দুর্ঘটনাস্থলে নেই। তারপরও প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
গতকাল সকাল থেকে উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
তারা হলেন- শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), পিয়ন্ত, রুপালী ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী (৭০), জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সনেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), হাশেম আলী (৭০), বিলাস চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়শী, প্রিয়ন্তী (৮)ও ব্রজেন্দ্রনাথ (৫৫)।
ষাটোর্ধ্ব কৃষ্ণ চন্দ্র রায় ভাই এবং ভাইপোর খোঁজে এসেছেন আউলিয়া ঘাটে। তিনি জানান, নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পুজায় যোগ দিতে তার ভাই নরেশ ও ভাইপো সেন্টু বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেননি। নৌকাডুবির খবরে রোববার থেকেই এখানে অপেক্ষা করছেন তিনি। মাড়েয়া বটতলি এলাকার ধীরেন বাবুর দুই প্রতিবেশিসহ ৭ জন নিকটাত্মীয় এখনো নিখোঁজ। গতকাল থেকে তিনিও নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিল নৌকাটি। নৌকায় ১০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল। যাত্রার শুরুতেই নৌকাটি দুলতে থাকে। দুলতে দুলতে নদীর মাঝে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পরে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।
এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, এখন পর্যন্ত ৫১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজন বাদে বাকি সবার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রোববার রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল ৬৫ জন। সোমবার সকাল থেকে ১৪ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। নিখোঁজ বাকিদের উদ্ধারে কাজ চলছে।
এ ঘটনায় মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা জানান বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, এ জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ ট্রলারডুবি এটি। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, ট্রলারডুবির খবর শুনে ছুটে আসেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। করতোয়া নদী পারাপারের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে ওয়াই আকৃতির ব্রিজের কাজ দ্রæত শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রলারডুবি

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১১ জানুয়ারি, ২০২২
৬ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ