Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রহিমা বেগমকে নিয়ে খুলনা ছাড়লেন মেয়ে মরিয়ম

নিখোঁজের ঘটনাটি সাজানো মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৯ এএম

জীবনের নিরাপত্তা নেই-এমনটি ভেবে মা রহিমা বেগমকে নিয়ে খুলনা ছাড়লেন মেয়ে মরিয়ম মান্নান। গতকাল সোমবার সকালে অনেকটা গোপনে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে খুলনা ছাড়েন। গত শনিবার রাতে কথিত নিখোঁজ রহিমা খাতুনকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর রোববার খুলনার একটি আদালত ২২ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার পর তাকে আরেক মেয়ে আদুরী বেগমের জিম্মায় দেয়া হয়। পুলিশের কাছে রহিমা বেগম দাবি করেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। যদিও এখন পর্যন্ত সবকিছু বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো ছিল।

এদিকে, যে বাড়ি থেকে রহিমা বেগম উদ্ধার হয়েছিলেন, সেই বাড়ি থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক তিনজনকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। তারা হচ্ছেন, বাড়ির মালিক কুদ্দুস বিশ্বাসের স্ত্রী হিরা বেগম, ছেলে আল আমিন বিশ্বাস এবং কুদ্দুসের ছোটভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগম। পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়ে গত রোববার রাতেই ওই তিন সদস্য তাদের নিজ বাড়ি বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামে চলে যান। পুলিশ ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে বিষয়টি অপহরণ নয় বরং সাজানো বলেই মনে করা হচ্ছে। কুদ্দুস বিশ্বাসের মেয়ে সুমাইয়া বেগম বলেন, আমার বাবা খুলনা শহরের মীরেরডাঙ্গা সোনালী জুটমিলে চাকরির সুবাদে খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশা এলাকায় রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

আমার ভাই আলামিন ফেসবুকে ও ইউটিউবের মাধ্যমে রহিমা বেগমের বিষয়ে জানতে পারে। তার মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া দুটি মোবাইল নম্বরে আমরা যোগাযোগ করি। তবে একটি নম্বরে ফোন দেওয়ার পর রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজের স্ত্রী পরিচয়দানকারী এক নারী কল রিসিভ করেন। তখন তাকে রহিমা বেগমের বিষয়ে জানানো হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। এছাড়া এ বিষয়ে আর ফোন দিতেও নিষেধ করেন। তারপর ভাইয়ের সন্দেহ হলে রহিমা বেগমের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানানো হয়। তিনি খুলনা মহানগরের ২ নম্বরের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানান।

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটা বা সাড়ে চারটার দিকে একটি বাসে করে রহিমা বেগম সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড নামেন। তখন তাঁর হাতে একটি ব্যাগ ছিল। তিনি এসে ওই বাজারের মুদি দোকানদার ইউনুস বিশ্বাসের কাছে মোতালেব মুসল্লির (কুদ্দুস মোল্লার বাবা) বাড়ি কোথায় জানতে চান। তখন ইউনুস বিশ্বাস রহিমার পরিচয় জানতে চান। রহিমা বেগম বলেন, তিনি বরিশাল থেকে এসেছেন, তিনি কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরার চাচাতো বোন। তখন ইউনুস এক শিশুকে সঙ্গে দিয়ে তাঁকে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। একই গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করীম জানান, রহিমা বেগমের সাথে আমাদের আগে পরিচয় ছিল না।

কুদ্দুস মোল্লার বাড়ির মেহমান হিসেবে তাকে আশেপাশের বাড়িগুলোতে বেড়াতে যেতে দেখেছি। কখনো তাকে ভীত বা অসুস্থ মনে হয়নি, খুবই স্বাভাবিক দেখেছি। আব্দুল কুদ্দুসের প্রতিবেশী জুলেখা বেগম জানান, রহিমা বেগম অপহরণ হয়েছেন তা ফেসবুকে আমরা জানতে পারি। কিন্তু তিনি আমাদের বলেছেন পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি।


এদিকে, অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হেলাল শরীফের মেয়ে অন্তরা ফাহমিদা বলেছেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণে এ নাটক সাজানো হয়। আমরা ন্যায় বিচার চাই। আমার বাবা বিনা অপরাধে জেলে গেছেন। আমরা মামলা করব, আইনের আশ্রয় নেবো।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মেয়ে আদুরী বেগম। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয় আদালত। অপহরণের অভিযোগে এ পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তারা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া একটি নারীর লাশকে জোরালোভাবে নিজের মায়ের লাশ বলে দাবি করেন তার আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ