পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দাম বাড়ানো হলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর আর কমানো হলে আগের দামে কেনা, তাই আরও সময় লাগবে- এই প্রবণতা আবার দেখা গেল বাজারে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পাম তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দাম নির্ধারণ করেই প্রতিষ্ঠান দুটির কাজ শেষ। কারণ নতুন নির্ধারিত দাম মানছে না কেউই। পাম অয়েলের দর লিটারে ১২ টাকা আর চিনিতে কেজিপ্রতি ৬ টাকা কমিয়ে সরকার ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিলেও গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে গিয়ে আগের দরেই পণ্য দুটি বিক্রি হতে দেখা যায়। পাম সুপার তেল আগের দাম ১৪৫ টাকা আর খোলা চিনি ৯০ ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। অবশ্য সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে তাই কমবে চিনি ও পাম তেলের দাম। কিন্তু বাস্তবে উল্টো। গতকাল রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। একই সঙ্গে বাজারে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকায়। অথচ গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা, খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং পাম অয়েলের লিটার ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। যা রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু বিষয়টি না মেনে বাজারে পুরনো বাড়তি দামেই চিনি ও তেল বিক্রি হচ্ছে।
গত এক বছরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম যখন সরকার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, তখন বাড়তি সেই দর কার্যকর হয় সঙ্গে সঙ্গে। তবে দুবার দাম কমানোর সিদ্ধান্তে দেখা গেছে দুই সপ্তাহ পরও আগের দরেই বিক্রি হয়েছে পণ্য। দোকানিদের যুক্তি, আগের কেনা।
বাজারের চিত্র এমন হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তাদের বেঁধে দেয়া নতুন দরেই বিক্রি হচ্ছে এই দুটি পণ্য। তবে সরকারি সংস্থা টিসিবির দৈনন্দিন বাজারদরের তথ্যেই প্রমাণ হয় এই কর্মকর্তার দাবি অসার। কারওয়ান বাজারের এক দোকানি বলেন, আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনেছি তাই সে দামেই বিক্রি করব। আমাদের কাছে এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাম কমার দাবি করলেও সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজারদরের হিসাবেই তার প্রমাণ মেলেনি। সংস্থাটি গতকালের দৈনন্দিন যে বাজারদর উল্লেখ করেছে, তাতে দেখা যায় রোববার ঢাকায় সুপার পাম অয়েলের দর ছিল লিটারে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। টিসিবি রোববার ঢাকায় চিনির দর উল্লেখ করেছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা ভ্যারাইটিজ স্টোরের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বস্তাপ্রতি কম্পানিভেদে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমার পরিবর্তে উল্টো চিনির দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। ৪২০০ টাকার চিনির বস্তা আজ কিনতে হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। প্রতিকেজি চিনির কেনা দাম পড়ছে ৮৬ টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে যাতায়াত খরচ। তারা বলছেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শুনেছি চিনি আর তেলের দাম রোববার থেকে কমানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত নতুন দামে তেল-চিনি আজ থেকে পাইকারি বাজারে আসতে শুরু করবে। তবে এগুলো আমাদের কাছে (খুচরা বাজার) আসতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।
এদিকে পুরনো বাড়তি দামে তেল-চিনি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছে সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ তথ্য মতে, রাজধানীতে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা। তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। এক লিটারের বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা থেকে ১৯২ টাকা কেজিতে। ৫ লিটারের তেল বিক্রি হয়েছে ৯২০ থেকে ৯৪৫ টাকায়। আর খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১২৬ থেকে ১৩৫ টাকা। আর সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা লিটার।
দাম তো কমল না, আপনারা কী করলেন- এমন প্রশ্নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকশি বলেন, আমার জানামতে আমাদের নির্ধারিত দামেই পাম তেল ও চিনি বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের সুবিধার্থে মন্ত্রণালয় দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা রোববার থেকে কার্যকর। তিনি বলেন, বেঁধে দেয়া নতুন দর অনুযায়ী, খুচরায় চিনির দাম কেজিতে ৬ টাকা এবং পাম তেলের দাম লিটারে ১২ টাকার মতো কমেছে। তবে এ দামের বাইরে যদি কোনো ভোক্তা কেনাকাটা করে তাহলে সে আইন অনুযায়ী ভোক্তা অধিদফতরে অভিযোগ করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোক্তা জরিমানার ২৫ শতাংশ ফেরত পাবে।
সরকারিভাবে নির্ধারণের পরও বাজারে চিনির বাড়তি দামের বিষয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে কল রিসিভ করেননি।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজির হোসেইন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সরকারকে কঠোরভাবে বাজার মনিটর করতে হবে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কপোরেশনের প্রধান (বিপণন) মো. মাযহার উল হক খান বলেন, বেসরকারি চিনি সরবরাহকারী কম্পানিগুলোর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মের বাইরে চলার সুযোগ নেই। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নিয়ম না মেনেই বাজারে চিনির দাম বাড়িয়েছে তারা, যা অন্যায়। তিনি বলেন, সরকারিভাবে চলতি বছরে প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে। সরকারি ১৫টি চিনি কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। ১৫টি কারখানার মধ্যে এখন ছয়টি বন্ধ, চালু আছে ৯টি কারখানা। আগামী নভেম্বর থেকে আখের মৌসুম শুরু হবে, তখন থেকে আবার চিনি উৎপাদন শুরু হবে। এই মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, রোববার থেকে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা, খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং পাম তেলের লিটার ১৩৩ টাকায় বিক্রি হবে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পাম তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মিলগেট, পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ের জন্য আলাদা দাম ঠিক করে দেয়া হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার পাম সুপার খোলা তেল মিলগেট থেকে ১২৮ টাকায় কিনে পরিবেশকরা ১৩০ টাকায় বিক্রি করবেন। আর খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হবে ১৩৩ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা চিনি মিলগেটে ৭৯ টাকায় কিনে পরিবেশক পর্যায়ে ৮১ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হবে ৮৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি মিলগেটে ৮২ টাকায় কিনে পরিবেশকরা বিক্রি করবে ৮৪ টাকা। ভোক্তাদের কাছে চিনি বিক্রি হবে ৮৯ টাকায়। এতদিন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার পাম সুপার খোলা তেল ১৪৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ছিল ৯০ টাকা। সে হিসাবে পাম তেলের দাম কমেছে ১২ টাকা আর চিনিতে দাম কমলো ৬ টাকা।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, সিমেন্ট, রডসহ মোট ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার। এসব পণ্যের যৌক্তিক দাম কত হওয়া উচিত, তা ঠিক করা হবে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে। সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এর আলোকে মন্ত্রণালয় এই দাম নির্ধারণ করেছে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।