পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আন্তর্জাতিক বাজারের ঊর্ধ্বমুখী বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম। যার প্রভাব পড়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে। ফলে চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম না কমে উল্টো ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি গত কয়েকদিন ধরে বেসামাল হয়ে উছেঠে চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়া নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন পণ্যের বড় বড় সরবরাহকারী, পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সমিতি ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে চিনির কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। চাল, চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম ঠিক রাখতে চলবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এমনকি জেলা-উপজেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মনিটরিং আরো জোরদার করা হবে। একই সঙ্গে আমদানি করা যেসব পণ্যের দাম অসহনীয়, সেগুলোর শুল্ক কমানোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান, সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। এটি ছিল বছরের প্রথম বৈঠক। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। তারাও আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাণিজ্য সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তিনটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়েছে। তবে এ সুযোগে নিয়ে কোনো অসৎ ব্যবসায়ী মুনাফা করার জন্য অতিরিক্ত মজুদ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য সচিব বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নাই। কিন্তু যেসব জিনিস আমদানি নির্ভর, সেসব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। আমদানি দাম বেড়েছে বলে তারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন থেকে আমদানি করতে যেটুকু দাম স্থানীয় বাজারে আনুপাতিক হারে যাতে সেটুকু পারে তার জন্য মন্ত্রণালয়ে কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং করবেন। কিন্তু এ সুযোগ নিয়ে যারা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেবে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য মোবাইল কোর্ট চালানো হবে। সচিব বলেন, আমদানি মূল্য বেড়েছে শুধুমাত্র ভোজ্যতেল এবং চিনির। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগে অনেক পণ্যের দামই বাড়িয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করছে। সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলেও জানান বাণিজ্য সচিব।
বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা জেলা ও উপজেলা কমিটির ক্ষেত্র বিস্তৃত করব। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের কষ্ট লাঘবে আমরা টিসিবির অপারেশন গত বছরের তুলনায় আড়াই গুণ বাড়িয়েছি এবং টিসিবি আরও কয়েকটি পণ্য বিক্রয় করছে। আগামী মাস থেকে পেঁয়াজসহ আরো পণ্য বিক্রি শুরু হবে। আমরা সেখানেও আমদানি করছি।
চালের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখছেন জানিয়ে সচিব বলেন, ইতোমধ্যে কিন্তু চাল আমদানির অনুমতি ও ২৫ শতাংশ ট্যাক্স কমানো হয়েছে। সাত লাখ টানের বেশি আমরা অনুমতি দিয়েছি, আশা করি চালের বাজারে দাম কমে আসবে। ভোজ্য তেল এবং চিনির বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই দুটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বাকিগুলো কমে গেছে। এটা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটার রিফ্লেকশন হবে, তবে সেটা বাজারের নিয়মেই হবে। তার বেশি যাতে না হয় ব্যবসায়ীরা সেটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে কেউ যদি অন্যায়ভাবে ভোক্তাদের কষ্ট দেন বা অতি মুনাফা করেন, মজুদ করে রাখে সে ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মোবাইল কোর্ট, ভোক্তা অধিকার প্রতিযোগিতা কমিশনসহ যারা আছেন তারাও সর্বত্র সতর্ক থাকবেন। এ কোভিড কালীন মানুষকে প্রশান্তির জন্য যা যা করা দরকার সে ব্যবস্থা নেবেন। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয় আমরা যদি সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারি তাহলে আমাদের যেহেতু সরবরাহে ঘাটতি নেই, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আছে তাই দ্রব্যমুল্য অবশ্যই স্থিতিশীল থাকবে।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমদানি করা যেসব পণ্যের দাম অসহনীয়, সেগুলোর শুল্ক কমানোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হবে। চিনি ও তেলের দাম ট্যারিফ কমিশনের মতে কতো হওয়া উচিত- জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, দাম আমরা এ মুহূর্তে প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তাহলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। তবে তেলের দাম এখন যেটা আছে ১৪৯ টাকা লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকিটা ক্যালক্যুলেশন হচ্ছে। এ মাসে কোনো বৃদ্ধিতে যাব না। মূলত যেটা হচ্ছে, সেটা হলো পর্যালোচনা। আশা করছি, আগামী মাসে প্রকাশ করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে ফলে ভোক্তাদের সুবিধার্থে আমদানিতে পর্যায়ে শুল্কের কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম কমানোর একটা হতে পারে শুল্ক কমানো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে এ ধরনের প্রস্তাব আগেও ছিল। আমরা এখন আবার একটা প্রস্তাব দেব। যেসব পণ্যের দাম অসহনীয়, সেগুলো পর্যালোচনা করে আমি এনবিআরকে অনুরোধ করব।
তিনি বলেন, আর একটি বিষয় হচ্ছে, সাপ্লাই চেইনে খুচরা পর্যায়ে যদি বেশি মুনাফা করা হয়, তা কমানোর প্রক্রিয়াটা একটু দীর্ঘ। কারণ এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক বাজার, খুব বেশি হস্তক্ষেপ করলে ভালো ফল দেয় না। আর একটি পথ হচ্ছে, দেশের উৎপাদন বাড়ানো। সেখানেও সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেই রাতারাতি উৎপাদন বাড়ানো যায় না। জমির স্বল্পতাসহ অন্যান্য সমস্যা রয়েছে। সার্বিকভাবে আমরা চেষ্টা করছি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত এক মাসে খুচরায় চিনির দাম অন্তত ১২ শতাংশ বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, চিনির খুচরা মূল্য আপাতত ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে বলে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভোজ্যতেলের দাম আগে যা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটাই থাকবে। অগাস্ট মাস শোকের মাস বিবেচনায় এই মাসে নতুন করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ালেও সেটা পরে বিবেচনা করা হবে। গত মে মাসের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, পাম সুপার তেল ১১২ টাকা এবং সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল ৭২৮ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।