Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হালদাপাড়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী ইটভাটা

এম. বেলাল উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বঙ্গবন্ধু হ্যারিটেজ ঘোষিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পাড়েই গড়ে উঠছে একের পর এক পরিবেশ ধ্বংসকারী ইটভাটা। এতে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান চললেও, উচ্ছেদের পরপরই কৌশলী ভূমিকায় এসব ইটভাটা ফের চালু করায় সচেতন মহল ও হালদা বিশেষজ্ঞদের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। নদী সুরক্ষা আইনে কোনো নদীর পাড়ের একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ইটভাটা গড়ে তোলা নিষিদ্ধ হলেও ইটভাটা দুটি তা মানছেনা।
প্রতি মৌসুমে হালদা নদী ঘেষা ইটভাটা গুলোর মালিকরা হালদাপাড়ে ইট তৈরি করে থাকেন। বিশেষ করে নদীর পেট কেটে তোলা হয় মাটি ও বালু। নদী থেকে উত্তোলন করা এসব মাটি ও বালু দিয়ে তৈরি হয় ভাটার ইট। আবার দূষিত ভাটার ধোঁয়ার কারণে বিপর্যস্থ হচ্ছে আশপাশের ফসল ও ফলফলাদীর গাছ। নদীতে বিচরণ করা জীববৈচিত্র পড়ছে হুমকির মুখে। ফলে হালদার মা মাছ, ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যার কারণে বিভিন্ন সময়ে একাধিক ডলফিনের মৃত্যুর জন্য এসব ইটভাটাকেও দায়ী করছেন সচেতন মহলও হালদা বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, বিগত বছরের ১১ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামীপাড়ার দক্ষিণ সীমান্তে হালদার পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা এ.আলী নামের একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর। বছর না যেতেই এই ইটভাটা আবারো চালুর জন্য হালদা থেকে মাটি এনে স্তোপ, নদী ও পরিবেশ দূষণকারী ড্রাম চিমনি তৈরির কাজ শেষ করে ব্রিকফিল্ড চালুর অপেক্ষায়। এ.আলী নামের এ ইটভাটা আইনের তোয়াক্ষা করছেনা।
এছাড়া হালদা পাড়ের একই উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের আবুরখিল গ্রামে শান্তি ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটায় চলতি মাসে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অন্যদিকে রাউজানের উড়কিরচর ইউনিয়নের মইশকরম গ্রামে হালদার তীর ঘেঁষে আজমির অটোব্রিকস নামের আরেকটি ইট ভাটায় পুরোধমে কার্যক্রম চলছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, হালদাপাড়ে ফের চালুর জন্য চিমনি ও মাটি কেটে স্তুপ করেন এ.আলী ইটভাটা। ইট উৎপাদনে পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এসব ব্র্রিকফিল্ড। হালদা পাড়ে গড়ে উঠা এ.আলী ফিল্ডের সত্বাধিকারী মোহাম্মদ জাহেদ ফের ভাটাচালু করার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে মুঠোফোনে বলেন, চালুর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা আছে। পরক্ষে বলেন পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি আছে। তিনি জানান, আজমীর নামের ইটভাটায় পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি রয়েছে বলে তার দাবি।
হালদাপাড়ে অবৈধ ইটভাটা ফের চালু করা প্রসঙ্গে নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হ্যারিটেইজ হালদা নদীর সুরক্ষা আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, হালদা পাড়ের একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অর্থাৎ পাড়ের কাছাকাছি প্রাণী ও উদ্ভিদ আবাসস্তলে ধ্বংস, ভূমি ও পানিপ্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করতে পারে এমন কোনো কিছু স্থাপন করা যাবেনা। এতে এসব ইটভাটা হালদা পাড়ের একেবারে কাছাকাছি হওয়ায় অবশ্যই আইনের বহির্ভূত।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, আদালতের নির্দেশে হালদা পাড়ের বিগত বছর অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়। তবে কেউ পরিবেশ ধ্বংসকারী কোনো কার্যক্রম ও হালদা নদীর ক্ষতিকর কোনো ইটভাটা স্থাপন কার্যক্রম চালালে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঐ এলাকার স্থানীয় সাংবাদিক এস এম ইউছুফ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, এই ভাটাগুলোর কারণে আমাদের মোকামী পাড়া গ্রামের বেশিরভাগ বয়স্ক নারী পুরুষরা শ্বাস কষ্ট রোগে ভুগছেন। ইটভাটার ধোঁয়ায় এ রোগের পাশাপাশি চর্ম এবং এলার্জি রোগেও এই এলাকার সব বয়সী মানুষ ভোগেন বছরে ছয় মাস।
তিনি বলেন, গ্রামের ধানের জমিতে ফসলের ফলনে ধস নেমেছে। শাক-সবজির চাষ হলেও ফলন হয় রুগ্ন। একারণে এই এলাকার কৃষকেরা দুশ্চিন্তাই আছেন।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা এখন জাতীয় সম্পদ। এই নদীর পাড়েই দখল-দূষণ করে ইটভাটা চালানো যাবেনা। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্রিকফিল্ড মালিককে দণ্ড ও উচ্ছেদ করেছে উপজেলা প্রশাসন। দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে দখল-দূষণ থেকে বাঁচাতে এসব ইটভাটায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া উপজেলা জুড়ে অনেক ব্রিক ফিল্ডের সরকারি বৈধতা নেই। বৃন্দাবন এলাকাই গড়ে উঠা বেশ কয়েকটি ব্রিকফিল্ডে গাছের কাঠ ব্যবহারে ইট পোড়ানোর জন্য ফটিকছড়ি পাহাড়ী বনের লাকড়ী এনে স্তুপ করা হচ্ছে। এসব লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো সম্পূর্ণ বেআইনি হলেও ব্রিক মালিকরা এসব আইন নামেনে ব্রিকফিল্ডের ইট তৈরি করে থাকেন। অবৈধ ও আইন অমান্যকারী ব্রিকফিল্ড গুলোর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এ দাবি পরিবেশবাদী নেতাদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ