Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গুরুদাসপুরে তিন বছরে ২৭৮টি বাল্যবিবাহ বন্ধ

বিলবোর্ডে প্রচার ও ৯৯৯-এর সুফল

গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলাব্যাপী স্থাপন করা বিলবোর্ডে দেওয়া নম্বরে ফোন করে গত তিন বছরে ২০০ বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান ও ৯৯৯ এর কল্যাণে বন্ধ হয়েছে আরও ৭৮টি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর আগেও জনসচেতনতার অভাব, বাল্যবিবাহের খবর না পাওয়া, ইভটিজিংসহ নানা কারণে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি ছিলো উপজেলাব্যাপী। ২০১৮ সালে ৩১টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলো উপজেলা প্রশাসন। ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৩টি বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়েছিলো। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বাল্যবিবাহ সম্পুন্ন হওয়ার পরেও খবর পেতো না প্রশাসন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েই বাল্যবিবাহ সংঘটিত হতো। ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে ‘বাল্য বিবাহ এবং ইভটিজিং প্রতিরোধ করুন’ শিরোনামে ইউএন’র একটি নম্বর সম্বলিত বিলবোর্ড স্থাপন করা হয় উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনগুরুত্বপুর্ণ স্থানে। চালানো হয় ব্যাপক প্রচার। এরপর থেকেই পাল্টে যায় উপজেলাব্যাপী বাল্যবিবাহের চিত্র। ২০১৯ সালের জুন মাসে বিলবোর্ড স্থাপনের ৬ মাসে ৫৬টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ফোন কলে পাওয়ার পর বন্ধ করা হয়েছে ৪৫টি। এরপর ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়েও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তৎপর ছিলো প্রশাসন। করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা ছিলো।

প্রশাসনের জোড় তৎপরতায় ওই বছরে ১৪২ জনের বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে বিলবোর্ডে দেওয়া নম্বরে প্রায় ১০২ টি বন্ধ করা হয় এবং উপজেলা প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান ও ৯৯৯এর কল্যাণে ৪০টি বিয়ে বন্ধ করা হয়। ২০২১ সালে এসে ফোন কলে বন্ধ হলো ৩৯টি আর অভিযানে ১৩টি। ২০২২ সালে ফোন কলে ১৪টি ও অভিযানে ১৪টি। এ নিয়ে গত তিন বছর তিন মাসে ২৭৮টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে। বিলবোর্ডগুলোতে বাল্যবিবাহের বয়স, সাজা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও প্রতিকার পেতে সহযোগিতার জন্য দেওয়া ছিলো হেল্পলাইন নম্বর। স্কুলে যাওয়া-আসার সময় বিলবোর্ডটি চোখে পড়তো শিক্ষার্থীদের।

বিলবোর্ডের থাকা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নম্বরে ফোন করে নিজের বাল্য বিবাহ বন্ধ করা ধানুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিউটি খাতুন জানায়, ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন আমি ডাক্তার হবো। কিন্তু হঠাৎ করেই পারিবারিক ভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি জানার পর আমি ভেঙ্গে পরেছিলাম। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসার সময় স্কুলের সামনে একটি বিলবোর্ড চোখে পড়তো। সেখান থেকে নম্বরটি নিয়ে সাহস করে নিজের বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে আকুতি জানাই উপজেলা প্র্রশাসনকে। পরে তারা আমার বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমি নিয়মিত স্কুলে যাই। আমার বিশ্বাস আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।

ইউএনও তমাল হোসনে বলেন, পুরো উপজেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত করতে বিলবোর্ডের পাশাপাশি প্রচারপত্র বিতরণ, মাইকিং, স্কুল-কলেজ গুলোতে পিঠা উৎসব, নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক, বিতর্কের আয়োজনও করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ ও নারীদের উত্ত্যক্ত করা (ইভ টিজিং) নিয়ে তৎক্ষণাৎ অভিযোগ জানাতে চালু করা হয়েছিলো একটি বিশেষ নম্বর। তা হলো ০১৩১৫ ১৭১৩৫৪। এর বাইরেও বাল্যবিবাহ রুখতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ