পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালয়েশিয়ায় কর্মী গমনে চলছে ধীরগতি। দীর্ঘ চার বছর পর দেশটিতে ৪০ দিনে বিএমইটি থেকে কর্মী নিয়োগের ছাড়পত্র ইস্যু হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫৮০ জন কর্মীর। আর গিয়েছে ২ হাজারের মতো কর্মী। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের নিয়োগানুমতি পেতে এজেন্সির মালিকদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। টেবিলে টেবিলে নানা প্রকার হয়রানি এবং চরম উদাসীনতায় বিএমইটি থেকে বর্হিগমন ছাড়পত্র পেতে কর্মীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
মালয়েশিয়া থেকে ছয় লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। কর্মী পাঠানোর গতি বাড়ানো হলে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও বাড়বে। এমন অভিমত একাধিক জনশক্তি রফতানিকারকের। অপরদিকে ডলার সঙ্কটের মধ্যে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রেমিট্যান্স। আগস্টের মতো চলতি মাসেও প্রবাসী আয়ে সুবাতাস বইছে।
সেপ্টেম্বর দুই সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা হিসেবে) ১০ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এমন গতি অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেই দুই বিলিয়ন ছাড়াবে প্রবাসী আয়। কর্মী নিয়োগ শুরু থেকে তিন বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫ লাখ কর্মী যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন হাইকমিশনার গোলাম সরওয়ার। কিন্তু কর্মী প্রেরণে ধীর গতির জন্য এই সংখ্যা পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিবে।
বায়রার একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, কর্মী পাঠানোর গতি না বাড়ালে আবারও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ মালয়েশিয়ার জাতীয় সাধারণ নির্বাচন সন্নিকটে। নির্বাচনের পরে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে কর্মী নিয়োগ বন্ধ হবে এমন শঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই। তারা বর্হিবিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি থেকে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু কার্যক্রম সহজ করার দাবি জানিয়েছেন।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মী নিয়োগের সত্যায়নের ফাইলের স্তুপ হয়ে আছে। হাইকমিশনে কর্মী নিয়োগের আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৭১ হাজার। কোম্পানি যাচাই-বাছাইয়ের নামে কর্মী নিয়োগের ফাইলে সত্যায়ন কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারাও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার কর্মী নিয়োগের ফাইলে সত্যায়ন দেয়া হয়েছে। আরো ৩১ হাজার কর্মী নিয়োগের সত্যায়ন দেয়া বাকি রয়েছে। কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইংয়ের মিনিস্টার নাজমুস সাদাত সেলিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কর্মী নিয়োগের সত্যায়ন দ্রুত ইস্যু করছে। কর্মী নিয়োগের সত্যায়ন প্রদানে কোনো প্রকার হয়রানি ও অনিয়মের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ৪২ হাজার কর্মী নিয়োগের সত্যায়ন দেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে গতকাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কর্মী এসেছে দু’হাজারেরও কম। এই সংখ্যাই বলছে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ধীরগতিটা কোথায়?
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকেও মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের নিয়োগানুমতি পেতে অহেতুক বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার কার্যক্রমে বাড়ছে না গতি। মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ধরে রাখতে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি বাড়াতে কর্মী নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমন ছাড়পত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইস্যু করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রিক্রুটিং এজেন্সি নিউ এইজ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. শওকত হোসেন সিকদার।
তিনি বলেন, প্রবাসী মন্ত্রণালয় থেকে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের নিয়োগানুমতি ও বিএমইটি থেকে বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুতে বিলম্ব হওয়ায় কর্মী নিয়োগে গতি বাড়ছে না। কর্মী নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু কার্যক্রম আরো সহজ করতে হবে। অন্যথায় দেশটির শ্রমবাজার হাত ছাড়া হবার আশঙ্কা রয়েছে।
চলতি মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত ১০৯ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রেরণ সম্ভব হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ১৩০ জন কর্মীর নিয়োগানুমতির জন্য প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে ফাইল জমা দেয়ার পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর অনুমতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৪১ জন কর্মীর বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়নি। এসব কর্মীর আজ বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে মালিন্দো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে কুয়ালালামপুর যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আজ দুপুরের মধ্যে এসব কর্মীরা বর্হিগমন ছাড়পত্র হাতে না পেলে তাদের টিকিটের ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা গচ্চা যাবে।
আল-রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র লাভ করেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ার ডোমিনিয়ন রাবার কোম্পানি এসডিএন বিএইচডিতে পাঠানো হয়েছে। যশোরের সোহেল রানা, রাকিবুল, তরিকুল গাজী, হৃদয় বৈঢ়াড়ী, চট্টগ্রামের বাঁশখালির মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘ দিন পর দেড় হাজার রিংগিত বেতনে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
বায়রার নবনির্বাচিত সদস্য আলহাজ আবুল বাসার ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের নিয়ম অনুসরণ করেই পাঠাচ্ছি। কিন্তু কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়ায় ধীরগতি অব্যাহত থাকলে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুকে সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, দশ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দরুণ ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগের পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রায় দেড় হাজার বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হলে তারা মাত্র ২৫ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ নিয়ে বঞ্চিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ২৫ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছিল।
সিন্ডিকেট বিরোধী জোটই অতিসম্প্রতি বায়রা দ্বি বার্ষিক নির্বাচনে বিজয় লাভ করে। বায়রার নবনির্বাচিত কমিটি বাদ পড়া এজেন্সিগুলোকে কর্মী প্রেরণে সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আরো ৭৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে তালিকায় রাখার ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।