Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মন্ত্রী-এমপি দ্বন্দ্বের অবসান : জায়গা হলো সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৪৮ পিএম

জাতীয় সংসদে বিল পাসের প্রায় দুই বছর পর জায়গা খুঁজে পেয়েছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আটকে ছিল জায়গা নির্ধারণ। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটেছে ক্যাম্পাসের স্থান নির্ধারণ নিয়ে সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং স্থানীয় পাঁচ সংসদ সদস্যদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্বের। এখন সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন হাওর অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে।


জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে এক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা সবাই স্বাক্ষর করে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সদর উপজেলার আহসানমারা সেতুর পূর্বপাশে উত্তর ও দক্ষিণে দেখার হাওরে ১০০ একর জায়গার প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবু নাঈম শেখও। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ স্থান নির্ধারণের কঠিন কাজটি আপাতত সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন প্রশাসনিক কাজও শুরু করতে পারবো।”


সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশ হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি তৈরিতে ভূমিকা রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।


দ্রুততম সময়ে কাজটি করায় তখন ‘সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের জনতা’র ব্যানারে সুনামগঞ্জ স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সমাবেশ করে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছিল। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মন্ত্রী ও এমপিরা।


সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান চাইছিলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের উজানীগাঁও গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে ফসলি (আমন) জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হোক। কিন্তু তাতে বাধ সাধেন সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্বরপুর) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তিনি চাইছিলেন, একই সড়কের উত্তর-পূর্ব পাশের দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হোক। এ নিয়ে তখন শহরে প্রতিবাদ সমাবেশও করেন তিনি। পরবর্তীতে পীর ফজলুর রহমানকে সমর্থন করে আন্দোলনে সংহতি জানান, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহেরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম। পাঁচ এমপিকে তখন সমর্থন দেনজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়েও পরিকল্পনা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এবং স্থান নির্ধারণ বৈঠকে সংসদেও মন্ত্রীর বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন। এই অবস্থার মধ্যেই চলতি বছরের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে মো. আবু নাঈম শেখকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ হয় এমন স্থান নির্ধারণ করার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবু নাঈম শেখ এবং জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের ঢাকার দপ্তরে সুনামগঞ্জের পাঁচ সংসদ সদস্যকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকেই স্থান নির্ধারণ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিরা মৌখিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছান। এরপর গত শনিবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বাসভবন ‘হিজল বাড়িতে’ আবারও বৈঠকে বসেন তারা। কিছুক্ষণ পরে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে এসে আবারও বসেন তারা। সেখানে উপস্থিত সবাই স্থান নির্ধারণ বিষয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করেন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “মন্ত্রী ও সব সংসদ সদস্য স্থান নির্বাচনে একমত হয়েছেন। বিধি অনুসারে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৭৫ একরের মতো জায়গা লাগে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ১০০ একর জায়গা অধি গ্রহণের প্রস্তাব করবো আমরা।” তিনি বলেন, “দ্রুত সময়ে কাগজ তৈরি করে পাঠাবো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে।


সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, “সুনামগঞ্জ সদরের আহসানমারা সেতুর পূর্বপাশে উত্তর-দক্ষিণে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে। মন্ত্রী মহোদয়ের সহায়তায় কিভাবে দ্রুত প্রশাসনিক কাজ শুরু করা যায় এবং জেলাবাসীর স্বার্থ সংরক্ষিত হয় সেই চেষ্টা সম্মিলিতভাবে করবো আমরা।”


পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস, আশকারা ও আন্তরিকতায় সুনামগঞ্জের উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড়ো প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করার পথে। এমপিরা এ বিষয়ে মতবিরোধে জড়িয়েছিলেন, উত্তরে না দক্ষিণে হবে। আমি সুপারিশ করেছিলাম, হাওরে হলে পরিবেশ নষ্ট হবে সরকারের অপচয় হবে। “যাক এখন সব সংশয়, সন্দেহ দূর হলো। নতুন করে বন্ধুত্বের বন্ধনে বিষয়টির নিষ্পত্তি হলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ