Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের

বাকৃবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:২১ পিএম

কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২২ য়ের উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদেও অনেকেই। পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন জায়গায় সমাধান করা প্রশ্নোত্তরের সাথে মিলিয়ে যে নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন তারা ফল প্রকাশের পর তার ধারেরকাছেও নেই তাদের মেধা তালিকার অবস্থান। অনেকের মেধা তালিকাতেই নাম আসে নি। এছাড়াও কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও ফলাফল পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮টি কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত বিশ^বিদ্যালয় অংশ নেয়। এবারের কৃষি গুচ্ছু ভর্তি পরীক্ষার আয়োজকের দায়িত্বে ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। ওই পরীক্ষার ফলাফল গত ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে প্রকাশের পর থেকেই নানান অভিযোগ আসছে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে।


এছাড়াও প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পিডিএফ ফাইল আকারে আয়োজক বিশ^বিদ্যালয় নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে। সেখানে শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় এবছর ফলাফলপত্রের শুধু ছবি তুলে তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে যেটি নিয়ে সন্দেহ তৈরী হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মনে। বর্তমানে এই বিষয়গুলো পরীক্ষার্থীদের কাছে সম্পূর্ণ ঘোলাটে।


এবারের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন দেলোয়ার হোসেন সুজাত। কিন্তু ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় (বাকৃবি) কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল ছিল ২০৭৩৩। তিনি বলেন, ‘আমি ভর্তি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সমাধান দেখে উত্তর যাচাই করে দেখেছি যে আমি ৭৫ নম্বর পাবো। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখি যে আমার অপেক্ষমান তালিকায় অবস্থান ৫২৯১ তম। আমি যে নম্বর আশা করেছি সেটির কাছাকাছি থাকলেও মেধা তালিকায় আমার পজিশন আসার কথা। সেখানে অনেক পেছনে আমার অবস্থান। বিভিন্ন কোচিং প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদানকৃত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধানের সাথে মিলিয়ে যারা ৭০ এর বেশি নম্বর আশা করেছিল তাদের অনেকেরই মেধা তালিকায় বা অপেক্ষমান তালিকায় নাম আসে নি। অনেকের নাম আসলেও অনেক পিছনে অবস্থান করছে।’

একই ধরনের অভিযোগ ফারজানা করিম রিচি নামের আরেক ভর্তিচ্ছু পরিক্ষার্থীর। তিনি জানান, ‘আমার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিলো বাকৃবিতে। আমি ভর্তি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার প্রশ্ন বিভিন্ন স্বনামধন্য কোচিং প্রতিষ্ঠানের সমাধানের সাথে যাচাই করে দেখেছি যে আমি ৬৫ নম্বর পাবো। সেটি হলে আমার মেধা তালিকায় অবস্থান হওয়ার কথা। ফলাফল প্রকাশের পর দেখি আমার রোলের পাশে ‘ভর্তির জন্য বিবেচিত নয়’- এমনটি লেখা। এক্ষেত্রে আমি কৃতকার্য নাকি অকৃতকার্য হয়েছি সেটির কিছুই বোঝার উপায় নেই।’


মাহফুজুল আলম নামের এক ভর্তিচ্ছু পরিক্ষার্থী জানান, ‘আমার ভর্তি পরীক্ষার রোল ২০৭৩৩ ও বাকৃবি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছি। আমি ভর্তি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর সমাধান ও যাচাই করে দেখেছি যে আমি ৬৬ নম্বর পাবো। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখি যে আমার অপেক্ষমান তালিকায় অবস্থান এসেছে ১৫৬৯৫ তম। আমি যে নম্বর পাওয়ার কথা সেটির কাছাকাছি পেলেও আমার মেধা তালিকায় অবস্থান থাকার কথা। অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করা হয়, সেখানে কৃষি গুচ্ছ এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলের প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করা হয়নি।’

এদিকে ফলাফল সঠিকভাবে মূল্যালয়ের জন্যে ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে গত রবিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ও জিপিএতে প্রাপ্ত নম্বর আলাদাভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, যে উত্তরপত্র দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে তা আমাদের দেখাতে হবে, ফল নির্ণয়ে যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি আছে কি না তা তদন্ত করতে হবে এবং চলমান ভর্তি কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করতে হবে।

এদিকে গত রবিবার কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজক শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল কেউ পুনঃনিরীক্ষণ করতে ইচ্ছুক হলে আগ্রহী প্রার্থীকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফি হিসেবে ১ হাজার টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।

এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। তারা এটিকে আয়োজক কমিটির প্রহসন হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তারা বলছেন, এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রশ্নউত্তর পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবার এক হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করতে হবে। এটি কোনো যুক্তিতেই সঠিক নয়।

ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ নিয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-২২ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে কিংবা মেধা তালিকায় অবস্থান করতে সক্ষম হয় নি তাদের মধ্যে নানা রকম প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আমার ধারণা কিভাবে এই ভর্তি পরীক্ষার নম্বর প্রদান করা হয় তা নিয়ে হয়ত একটি সংশয় থাকতে পারে। আমরা কিন্তু জিপিএ’র ভিত্তিতে নম্বর দেইনি। বোর্ড আমাদের এসএসসি ও এইচএসসির যে নম্বর সরবরাহ করেছে তার ভিত্তিতে আমরা দু’টিতে ২৫ নম্বর করে ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের সাথে যোগ করেছি। বোর্ড আমাদের এসএসসি ও এইচএসসির যে নম্বর প্রদান করেছে তাতে ৫০ এর মধ্যে ৫০ কেউ পায় নি। আর আমরা ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য যে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেছি, ২৪ সেপ্টেম্বর সেটির ফলাফল প্রকাশিত হবে।’

পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও তালিকায় আসার ব্যাখ্যায় শেকৃবি উপাচার্য বলেন, ‘অনেক ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার আগে আবেদন করেছেন, তিনি যে কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সে কেন্দ্রে অংশ নিতে চাচ্ছেন না। তাকে তার পরবর্তী আবেদনের ভিত্তিতে নতুন কেন্দ্র দেয়া হয়েছে। এতে করে মনে হয়েছে তিনি অনুপস্থিত। আসলে তিনি অন্য কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এ নিয়ে ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ অমূলক।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ