Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেয়া যায় না

রেণু হত্যার বিষয়ে হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেয়া হবে সমাজের যেকোনো মানুষের জন্য আতঙ্ক ও অনিরাপত্তার কারণ। এ মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে না।
ছেলে ধরা আখ্যা দিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেণুকে পিটিয়ে হত্যা মামলার মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দিয়ে পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লার ডিভিশন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ সংক্রান্ত নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভুঁইয়া।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, রেণু হত্যা মামলা অতিরিক্ত মহানগর ষষ্ঠ দায়রা আদালতে বিচারাধীন। ভিকটিম পালিয়ে যাচ্ছিলেন না। তার হেফাজতে কোনো শিশুকে পাওয়া যায়নি। সে সময় কোনো অভিভাবক সন্তান হারানোর অভিযোগ না করা সত্ত্বেও আসামিরা বেআইনিভাবে জনতাকে সংগঠিত করেন। উসকানিমূলক শ্লোগান দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বেআইনি অনুপ্রবেশ করেন। ভিকটিমকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন।

কোনোরূপ অপরাধ না করা সত্ত্বেও তাকে বলপূর্বক আটক করে এবং আত্মরক্ষায় অক্ষম এ অসহায় মায়ের বাঁচার আকুতিকে উপেক্ষা করে তার শরীরে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে উপর্যুপরি ও ক্রমাগত এমনভাবে আঘাত করেন। আঘাতের উদ্দেশ্যই ছিল তার মৃত্যু নিশ্চিত করা। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করার অভিন্ন উদ্দেশ্য ঘটনাস্থলেই উদ্ভব হওয়ার প্রমাণ রয়েছে।

আদালত ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মামলার রায় ও আদেশ হওয়ার আগে তথা মামলা চলাকালে সাক্ষীদের যথারীতি ও যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তদারকির জন্য কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে একইদিন আদালত রুল জারি করেন।
ফৌজদারি কার্য-বিধি ১৮৯৮ এর ৪৩৯ (১)ধারার বিধান অনুযায়ী এ রুল জারি করা হয়েছে। যা মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ১১২ নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে এ মামলা চলাকালে সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত তদারকি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আদালতের পিপি, তদন্ত কারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোটের আদেশের অনুলিপি সংশিষ্ট আদালত, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেণু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।
ওই রাতেই রেণুর বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গণপিটুনিতে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রধান অভিযুক্ত হৃদয় ওরফে ইব্রাহিমের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালে হৃদয় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একইদিন রেণুকে পিটিয়ে হত্যার আগে ‘ছেলেধরা’ গুঞ্জণ সৃষ্টিকারী রিয়া খাতুনও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হৃদয় ও রিয়া কারাগারে রয়েছেন। জাফর হোসেন নামের আরেক আসামিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে কারাগারে রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ