নগরীতে ধর্ষণের পর আট বছর বয়সী এক শিশুকে শ^াসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে নগরীর বন্দর থানাধীন পোর্ট কলোনির একটি পরিত্যক্ত বাসা থেকে সুরমা আক্তার নামে হতভাগ্য ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুটি নগরীর বড়পোল এলাকার একটি বস্তিতে বাবা-মায়ের সাথে থাকতো। তার বাবা রিকশাচালক মো. কাউছার, মা হোসনে আরা গৃহকর্মী। তাদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয় শিশুটি। এরপর তার আর সন্ধান মেলেনি। গতকাল পরিত্যক্ত ভবনে লাশ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। পরে শিশুটির মা-বাবা লাশ শনাক্ত করে।

প্রত্যক্ষদর্শী এক শিশুর বরাত দিয়ে নিহতের স্বজনেরা জানান, সুরমার খালা জ্যোৎস্না বেগমের বাসাও বড়পোল এলাকায়। খালার বাসায় যাবার জন্য সুরমা নিজ বাসা থেকে বের হয়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে বলেছিল, আমি খালার বাসায় ভাত খেয়ে ফিরব। মা বলেছিল তাড়াতাড়ি ফিরতে। বড়পোল এলাকায় রাস্তায় আসার পর এক রিকশাচালক সুরমাকে ডেকে বলে, তুমি আমার সঙ্গে গেলে তোমাকে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে দেব। এ সময় সুরমাদের প্রতিবেশি এক মেয়েও সেখানে ছিল। তখন সে রিকশাওয়ালাকে বলে, আঙ্কেল আমিও আপনার সঙ্গে যাব, আমাকেও বিরিয়ানি কিনে দেন। কিন্তু রিকশাচালক শুধু সুরমাকে রিকশায় তুলে দ্রুত চলে যায়।
প্রতিবেশি মেয়েটি বাসায় ফিরে এ ঘটনা সুরমার মাকে জানায়। তখন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে সবাই। কোথাও না পেয়ে রাত ৯টার দিকে সন্ধান চেয়ে মাইকিং করা হয়। কিন্তু রাতভর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। শিশুটির পিতা মো. কাউছার বলেন, এক রিকশাচালক বিরিয়ানি কিনে দেবার কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে পোর্ট কলোনিতে আসে। এরপর তাকে সারারাত নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। পুলিশ সুরমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে। তবে কীভাবে খুন করা হয়েছে এবং ধর্ষণের বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে।
নগর পুলিশের বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবুল কালাম সহীদ বলেন, মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে এটা আমরা আলামত দেখে নিশ্চিত হয়েছি। তবে আমাদের ধারণা, খুনের আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সিআইডি আলামত সংগ্রহ করেছে। তারা একটা মতামত দেবে। এছাড়া ধর্ষণের বিষয় এবং কিভাবে খুন করা হয়েছে সেটা ময়নাতদন্তে জানা যাবে। সন্দেহভাজন রিকশা চালককে শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে ঘটনাস্থলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পোর্ট কলোনির বিভিন্ন ব্লকে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি পরিত্যক্ত বাসা আছে। এসব বাসায় সন্ধ্যার পর মাদকের আসর বসে। নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপও সেখানে হয়। পোর্ট কলোনির বাসিন্দা চট্টগ্রাম বন্দরের চাকুরিজীবীরা বখাটে, মাদকসেবীদের উৎপাতে অতিষ্ট।