Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিআরএসে সংরক্ষিত থাকবে শেয়ার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য

ভুমিকম্পে ঢাকা ধ্বংস হলেও

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর হাজার হাজার কোটি টাকার শেয়ার সংরক্ষিত আছে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) নামে একটি তথ্যভাÐারে। তেমনি দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাÐারেও রয়েছে অগণিত মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। কোনো দৈব-দুর্ঘটনায় এ তথ্যভাÐার বিধ্বস্ত হয়ে গেলে সবকিছু শূন্য হয়ে যাবে। অথবা আপনার পোর্টফোলিওতে কতটি শেয়ার আছে, কিংবা কি পরিমাণ ক্যাশ টাকা আছে এবং ব্যাংকে আপনার অ্যাকাউন্টে কি পরিমাণ টাকা আছে তা আপনি শুধু অনলাইনে দেখেন ওই প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাÐার থেকে। অনলাইনে এ সবকিছু যথাযথ আছে দেখতে পেয়ে আপনি তৃপ্তি পান এবং স্বস্তি বোধ করেন। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকিংয়ের মতো যে কোনো সময় আপনার ওই অনলাইনে ঘটতে পারে হ্যাকিংয়ের মতো একটি দুর্ঘটনা কিংবা ভ‚মিকম্পের মতো দুর্যোগে আপনার অনলাইন অচল হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ কোনো দুর্ঘটনায়ও আপনার অনলাইনের হিসাব গোলমেলে হয়ে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা সাইবার আক্রমণ যেটাই হোক না কেনো, এখন থেকে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যভাÐার যাতে কখনোই কোনো ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সে উদ্যোগই নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পুঁজিবিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
সংস্থাটি সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাÐারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে যশোরের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ডাটা রিকভারি সাইট বা ডিআরএস স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে যে কোনো ধরনের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা আক্রমণের ঝুঁঁকি থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ অনাকাক্সিক্ষত কোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় ঢাকায় অবস্থিত তথ্যভাÐার ধ্বংস হয়ে গেলেও যশোরে ডিআরএস হওয়ায় তথ্যভাÐারে সংরক্ষিত শেয়ার, টাকা ও সম্পদ থাকবে সম্পূর্ণ নিরাপদ। ডিআরএস ব্যবস্থার আওতায় প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ছাড়াও সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি) এবং আইসিবি থাকলেও পরবর্তী পর্যায়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভ‚ক্ত সব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাÐার যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। তাছাড়া পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ ব্যবস্থার আওতায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সংস্থাটি। আইসিবি ও মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুযায়ী, দেশের অর্থনীতি ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকাÐও সম্প্রসারিত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তথ্যভাÐার রয়েছে। কোনো কারণে যে কোনো ধরনের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা সাইবার আক্রমণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংরক্ষিত তথ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। অতি সম্প্রতি সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ফলে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাটতির বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তবে ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিআরএস স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁঁকির পরিমাণ কমে আসবে। মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগমুক্ত স্থান হিসেবে যশোরে ডিআরএস স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এককভাবে ডিআরএস স্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যৌথভাবে এ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সাথে সাথে ব্যয় সাশ্রয় করাও সম্ভব হবে।
এদিকে আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিআরএস স্থাপনের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। এখন অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার জন্য তথ্য ওপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে। তা ছাড়া ডিআরএস স্থাপন ও পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র কোম্পানিও গঠন করা হবে।
এ বিষয়ে, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ইফতেখার-উজ-জামান বলেন, ডিআরএস স্থাপনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই আইসিবি ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। পাকৃতিক দুর্যোগমুক্ত স্থান হিসেবে যশোরে ডিআরএস স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিআরএস কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে বলেও জানান তিনি। এদিকে ডিআরএস প্রকল্পে বিএসইসির যুক্ত হওয়ার বিষয়ে নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মো: সাইফুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, যশোরে নির্মিতব্য সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নির্মাণ কাজ বর্তমানে প্রায় শেষের দিকে। দীর্ঘ দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। কম্পিউটার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ফ্রিল্যান্সিং, কল সেন্টার ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ চারটি ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে এ প্রকল্পে। প্রকল্পের মূল ভবন ভ‚মিকম্প প্রতিরোধক কম্পোজিট কাঠামোতে (স্টিল ও কংক্রিট) নির্মিত হচ্ছে।
এখানে থাকবে ১২ তলাবিশিষ্ট স্টিল স্ট্রাকচারের ডরমেটরি ভবন ও ১৫ তলাবিশিষ্ট স্টিল স্ট্রাকচারের এমটিবি ভবন। এ ছাড়া থাকবে ফাইবার অপটিক কানেক্টিভিটি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সাপ্লাইয়ের জন্য ৩৩ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন। রাখা হবে দুই হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর। পার্কের মূল ভবনের সামনে পাঁচ একরের একটি বিশাল জলাধার থাকছে। যেখানে স্বচ্ছ পানিতে থাকবে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির মাছসহ জলজপ্রাণী। থাকবে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এ ছাড়া মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে থাকবে সবুজ বেষ্টনী। যেখানে কর্মীদের হাঁটার জন্য পথ থাকবে। থাকবে আরো অন্যান্য সুবিধাও। -ওয়েবসাইট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তথ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ