Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

র‍্যাব বাংলাদেশের মানুষের আস্তার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে -কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৪১ পিএম

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, র‍্যাব অপরাধিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কাজ করছে। র‍্যাব অপরাধিদের আলোর পথে আনার জন্য তাদের কাছে মেসেজ পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তাই র‍্যাব বাংলাদেশের মানুষের আস্তার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি বলেন,আমরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নেতৃত্বে জঙ্গী, বনদস্যু ও জলদস্যু দমন করেছি। এতে আমরা সফল হয়েছি।

তিনি বলেন, কক্সবাজার এমন এক জায়গা সবাই এখানে আসতে চায়। দেশ বিদেশের লাখো পর্যটক এখানে আসেন। তাই এখানে টুরিস্ট পুলিশ এর পাশাপাশি, বিজিবি, র‍্যাব শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। তিনি বলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আজ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র প্রধানরাও বিষ্মিত। এটাই দুরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, মুসলিম,হিন্দু, বৌদ্ধ সব ধর্ম সম্প্রদায়ের এই দেশ। আমরা সেই আদর্শ মেনে চলছি বলেই আজ বাংলাদেশ রুল মডেল।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের আশ্রয় দিয়ে অনেক সমস্যা আমদেরকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে তাদের শাস্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। র‍্যাবের এই কর্মসূচী অপরাধিদের আলোর পথ দেখানো অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিন সপ্তাহব্যাপী র‍্যাবের
নবজাগরণ কর্মশালার সমাপনী দিবসে কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

বৃহষ্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের তারাকা হোটেল লংবীচে এক জমকালো সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। গত ২২ আগষ্ট ২০২২ টেকনাফ থেকে এ কর্মসূচীর শুরু হয়েছিল।

এতে র‍্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে জঙ্গী দমন, জলদস্যু দমন ও সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মুল হয়েছে। আমরা মাদকসহ অপরাধ দমনে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তিনি বলেন, পাশাপাশি
সামাজিক ভাবে মাদক ও মাদক সম্পৃক্তদের না বলি। তা হলে তিনি মনে করেন মানুষ মাদকে জড়াবে না।
তিনি বলেন, আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের স্বনির্ভর করা হয়েছে। র‍্যাব অপরাধিদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে ভালো সফলতা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়ায় সেখানে সন্ত্রাস কমে এসেছে।
এভাবে ২০৪১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সফলতা আসবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্ণেল কামরুল হাসান। বক্তব্যে এমপি জাফর আলম, তিনি বলেন, এই কর্মসূচি খুবই প্রশংসনীয়।

এমপি আশেকুল্লাহ রফিক
বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন এলাকায় বিশেষ করে সাগরে জলদস্যুদের অপরাধ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে আসতে বড় ভূমিকা রাখছে।

কক্সবাজার সদরের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ দেশে দেশে মারাত্মক বিপর্যয় সৃ্ষ্টি করে। বাংলাদেশ ও ধ্বংস হওয়ার পথে ছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপরাধিরা শেষ করে দিতে চেয়েছিল।
তিনি বলে সাবেক র‍্যাব প্রধান আইজিপি ড. বেনজীর আহমদ সহ র‍্যাব ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকায় সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও জলদস্যুতা আজ শুন্যের কোটায় পৌঁছেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়রসচিব আক্তার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন দেশ এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচুকরে দাড়াবার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয় অগ্রগতি ও আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
কিছু লোক তা চায়না। এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যাচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। তিনি এ সবের প্রতিরোধ করা দরকার বলে মনে করেন।
র‍্যাবের এইধরণের কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে জনপ্রতিনিধি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের সম্পৃক্ত করে এই কার্যক্রমকে আরো জনপ্রিয় করা যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন
যুব সমাজ এবং মানুষ যাতে কোন অপরাধে না জড়ায় এজন্য এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার।

আইজিপি ড. বেনজির আহমদ বলেন, র‍্যাব ব্যতিক্রম যে কাজটি করে তা হল অপরাধিরা যাতে অপরাধ প্রবনতা ভুলে যায়।
ভীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা যেনে গড়ে উঠে। ৩০০ মত জলদস্যুদের আত্ম সমর্পণ করিয়ে তাদের স্বাভািক জীবনে ফিরিয়ে এনেছেন র‍্যাব।
ধর্মীয় জঙ্গীরা স্বেচ্ছায় আত্ম সমর্পণ করার ব্যবস্থা করেছেন।
তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে। এই জটিল কাজগুলো করতে হয়েছে কঠিন পরিবেশে। এজন্য এমন কিছু কাজ করতে হয়েছে যা এখনো বলার সময় হয়নি। তিনি বলে এই কর্মশালার মাধ্যমে অপরাধ দমনে একটি ভালো ফলাফল বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, র‍্যাব দেখিয়ে দিয়েছে দক্ষ জনশক্তি কিভাবে তৈরী করা যায়।
যুব সমাজকে চাকরির পেছনে না ঘুরে এন্টারপ্রেনার হওয়ার আহবান জানান তিনি।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, মহিলা কানিজ ফাতেমা আহমদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, চট্টগ্রাম রেন্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।

এলিট ফোর্স র‍্যাব অপরাধ দমনের পাশাপাশি বিবিধ অপরাধ বিষয়ক পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধে বহুমুখী কর্মপন্থা নির্মাণ করে থাকে। ইতোমধ্যে 'নব দিগন্তের পথে' কর্মশালার মাধ্যমে ১৬ জন জঙ্গি এবং সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪০৫ জলদস্যুসহ সর্বমোট ৪২১ জন অপরাধীকে আত্মসমর্পণ পরবর্তী পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

এখন তাদের পরিবারে ফিরে এসেছে অনানিল শাস্তি। আর হ্রাস পেয়েছে সমাজের নিরাপত্তা ঝুঁকি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, বিভিন্ন সংস্থা, জনপ্রতিনিধি ও সকলের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি র‍্যাব ফোর্সেস অপরাধ প্রতিরোধের স্ট্রাটেজির আওতায় সমগ্র দেশব্যাপী 'নবজাগরণ' নামে একটি কর্মশালার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।। "অপরাধকে না বলুন" এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে নবজাগরণ সমাজে অপরাধ প্রবণতা হ্রাসে অনুসর্গ হিসেবে কাজ করবে। যার মূল উদ্দেশ্য হল অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন শ্রেণির মানুষকে অপরাধে জড়ানো সম্পর্কে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে সমাজে নতুন অপরাধী সৃষ্টিতে অন্তরায় তৈরি করা।

কক্সবাজারে নবজাগরণ কর্মশালার মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম হতে ঝরে পড়া, বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারী বেশ কয়েকজনকে স্বাবলম্বী করার লক্ষে এলাকা ভিত্তিক উপযোগী পেশায় তাদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

তাদেরকে পর্যটন নির্ভর পেশা, হোটেল অথবা রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ফটোগ্রাফার, টুরিস্ট গাইড, সার্ফিং ও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা হবে। তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেন স্বাবলম্বী হয় প্রতিটি পরিবার। তাদের সাফল্য অনুপ্রেরণা যোগাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা অন্যদেরও। পর্যায়ক্রমে এর ব্যাপ্তি আরও বিস্তার করা হবে বলে জানানো হয়।

পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে গ্রাম্য বৈঠক; কমিউনিটি বেজড বিবিধ প্রোগ্রাম, সভা, সেমিনার ও মত বিনিময় সভা ইত্যাদির আয়োজন করা হবে। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রমে
যুক্ত করা হবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও যুব উন্নয়নসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের।


অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে কর্মশালায় অংশ গ্রহণকারী কয়েকজনের হাতে সনদপত্র ও
পুরস্কার তুলে দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সহ অতিথিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ