বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
এক আওয়ামীলীগ নেতার দখলে বাইসাইকেলে কয়েকবার বিশ্বভ্রমণকারী ও ভ্রমণ কাহিনির লেখক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি। তার নাম আবদুল ওয়াহেদ। তিনি হবিগঞ্জ ২ নম্বর বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।’ একাত্তরে ভাই ছিলেন আলবদর বাহিনীর সদস্য। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে আত্মগোপনে তিনি। এ দুই ভাইয়ের দখলে রয়েছে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে বিখ্যাত রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি। বাড়ি বেদখলের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যেয়ে বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। সর্বশেষ হামলার মুখে পড়েন বিডিনিউজের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর, বানিয়াচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া এবং দেশসেবা পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি আলমগীর রেজা। এই হামলার জন্য দখলদার আবদুল ওয়াহেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের দায়ী করছেন আহত সাংবাদিকরা।
রামনাথের বাড়ি যেভাবে বেদখল:
হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যা ভূষণ পাড়ায় ১৮৯৪ সালের ১৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন রামনাথ বিশ্বাস। তিনি ছিলেন চিরকুমার। রামনাথ বিশ্বাস বাইসাইকেলে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরেছেন তিনবার। সেসব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণবিষয়ক ৪০টি বই। ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় মারা যান তিনি। অনেক বড় এলাকা নিয়ে রামনাথের বসতভিটা। ৪ একর ৪৮ শতাংশ জমিতে বসতঘরের পাশাপাশি ছিল দৃষ্টিনন্দন মন্দির ও পুকুর। বর্তমানে পুরোনো সব ভবন ভেঙে ফেলেছে দখলদার ওয়াহেদ মিয়ার পরিবার। শুধু মন্দিরের একটি অংশ এখনও টিকে আছে। সেটিও ধীরে ধীরে ভাঙা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর সবুজ লতাপাতা। পুকুরে মাছ চাষ করছেন দখলদাররা।
স্থানীয়রা জানান, রামনাথ ভারতে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন বাড়িটি ছিল পরিত্যক্ত। ১৯৮০-এর দশকে ওয়াহাব উল্লাহ নামে প্রভাবশালী একজন এই সম্পত্তি দখল করে নেন। ২০০০ সালের পর আবদুল ওয়াহেদের কাছে জায়গাটির দখল বিক্রি করেন তিনি। আবদুল ওয়াহেদ ও তার বড় ভাই আবু ছালেকের দখলে সেই থেকে রয়েছে বাড়িটি। আবু ছালেকের বিরুদ্ধে একাত্তরে আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে আবু ছালেক এলাকা ছাড়েন। অন্যদিকে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলে রাখতে আবদুল ওয়াহেদ নিজের নামে ভুয়া নামজারি করে নেন। তবে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও রামনাথ স্মৃতি সংসদের নেতাকর্মীরা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনলে বাতিল হয় কথিত সেই নামজারি। ২ নম্বর বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া বলেন, ‘ওয়াহেদ একজন দখলদার। রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি দখল করে রেখেছেন তিনি। সরকারি খাতায় এটি অর্পিত সম্পত্তি। অনেক চেষ্টা করেও বাড়িটিকে দখলমুক্ত করতে পারিনি আমরা। তিনি (ওয়াহেদ) কিছুদিন পর পরই বাড়িকে নিজের নামে নামজারি করে ফেলেন, কিন্তুসেটাকে বাতিল করি আমরা।’
স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের গেরিলা দল ‘দাস পার্টির’ অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান বলেন, ‘আবদুল ওয়াহেদের বড় ভাই আবু ছালেক এই এলাকার আল বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। বর্তমানে পলাতক তিনি।’
রামনাথ স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও লোক গবেষক আবু সালেহ আহমেদ বলেন, ‘দখলদার আবদুল ওয়াহেদ খুবই প্রভাবশালী। এ কারণে এলাকার কেউ বাড়িটি উদ্ধারের বিষয়ে কোনো কথা বলে না। আমি রামনাথের স্মৃতিটুকু বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছি। সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েকবার তার ভুয়া নামজারি বাতিল করেছি। সর্বশেষ ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়েও একবার বাতিল করেছি নামজারি। এটা যে রামনাথের বাড়ি, সে বিষয়ে আমাদের কাছে আছে অনেক কাগজপত্র।’ তিনি বলেন, ‘বছরখানেক আগে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হাইকোর্টে রিট করব। তবে যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে থামিয়ে দেন। আবদুল ওয়াহেদ। ’
এদিকে, বাড়িটি দখলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে যেয়ে অতীতে বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর ওই বাড়িতে যেয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হন হবিগঞ্জের স্থানীয় চারজন সাংবাদিক । এর চার দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর হামলার শিকার হয়েছেন দখলদারদের। এ সময় স্থানীয় আরও তিনজন সাংবাদিককেও মারপিট করেন আবদুল ওয়াহেদ ও তার ছেলেরা।
বানিয়াচং প্রেস ক্লাব সভাপতি মোশাহেদ মিয়া বলেন, ‘রামনাথের বাড়িতে গেলেই সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করেন ওয়াহেদ মিয়া ও পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন সময় লাঞ্ছিত হয়েছেন বাড়িটিকে দেখতে যাওয়া পর্যটকরাও।’
তবে হামলা এবং বাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করছেন আবদুল ওয়াহেদ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এ বাড়ি রামনাথ বিশ্বাসের না। সাংবাদিকরা এখানে এসে আমাকে শুধু শুধু বিরক্ত করে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। কেউ আমাদের এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ ও আবেদন দিলে বাড়িটির বিষয়ে খোঁজ খবর নেব। যেহেতু এটি সরকারি সম্পত্তি নয়, তাই ওইখানে ইন্টারফেয়ার করতে পারি না আমরা।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।