পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। প্রবাদে রয়েছে ‘মাছের রাজা ইলিশ’। বাংলাদেশ ইলিশ মাছের আতুরঘর। সাগর ও নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে এখনো ইলিশ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে না। অথচ ভারতের কলকাতার বাজারগুলো বাংলাদেশের ইলিশে ছয়লাব হয়ে গেছে। দুর্গাপূজার উপহার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ইলিশ মাছ রফতানি করা হচ্ছে। যে ইলিশ বাংলাদেশের মানুষ খেতে পারছেন না সেই ইলিশের ভারতের মানুষের পাতে পাতে। বন্ধুত্বের অজুহাতে ভারতে ইলিশ পাঠানো হলেও নরেন্দ্র মোদির সরকার কারণে অকারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে একাধিকবার বিপাকে ফেলেছে। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় বাংলাদেশের মানুষকে দেড়শ থেকে দু’শ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ খেতে হয়েছে। এমনকি অগ্রিম টাকা নিয়েও করোনার টিকা আটকে দিয়েছিল।
বাংলাদেশের মানুষ যখন জাতীয় মাছের স্বাদ নিতে পারছেন না তখন দুর্গাপূজার উপহার হিসেবে ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ইলিশের প্রথম চালান ভারতে চলে গেছে। ফলে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সচিব, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর এবং বাংলাদেশ পর্যটন করর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছর ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির জন্য ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে। ওই সব প্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির করবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৫০ মেট্রিক টন করে ইলিশ রফতানি করতে পারবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত সাপ্তাহে (সোমবার) যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৮ হাজার কেজি ইলিশ মাছের চালান ভারতে পাঠানো হয়েছে। কেজি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ ১০ মার্কিন ডলার (৯৪৯ টাকা) দরে রফতানি হয়েছে। অথচ ওই সাইজের ইলিশের দাম রাজধানী ঢাকার বাজারে দেড় হাজার টাকার ওপরে।
বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মাহিমা এন্টারপ্রাইজের ইলিশ রফতানির প্রথম চালানে বোঝাই ট্রাক কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের এস আর ইন্টারন্যাশনাল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব ইলিশ রফতানি করতে হবে বলেও জানা গেছে। এর আগে দেশের চাহিদা বিবেচনা করে ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এরপর বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার ভারত সরকারকে শুভেচ্ছা উপহারস্বরূপ ইলিশ পাঠিয়েছে। গত দুই বছর আবার ইলিশ রফতানি হচ্ছে।
এদিকে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধে সরকারকে আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, ‘ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। কিন্তু বর্তমানে ইলিশ মাছের অত্যাধিক দামের কারণে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ইলিশ মাছ কেনার কথা চিন্তাও করতে পারে না। অন্যদিকে দেশের মধ্যবিত্ত মানুষও এই ইলিশ মাছ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। বাজারে ইলিশ মাছের দাম গড়ে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া ইলিশ মাছের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ হলো পদ্মা নদীর ইলিশ। বাজারে পদ্মার ইলিশের দাম গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি।’
পদ্মা নদী থেকে যে সীমিত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়, তা বাজারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না অভিযোগ করে নোটিশে আরও বলা হয়, বাজারে যেসব ইলিশ পাওয়া সেগুলো মূলত অন্যান্য নদীর ও সামুদ্রিক ইলিশ মাছ। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা না করে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। ভারতে ইলিশ রফতানির ফলে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারগুলোতে ইলিশের দাম আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আরো দুঃখজনক বিষয় এই যে, বাংলাদেশের বাজারদরের চেয়েও কম মূল্যে ভারতে ইলিশ রফতানি করা হচ্ছে।
ভারতে রফতানি করা ইলিশগুলো বেশিরভাগই পদ্মা নদীর উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলছেন, এমনিতেই পদ্মা নদী থেকে সীমিত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়। তাই এই পদ্মার ইলিশগুলো ভারতে রফতানির ফলে বাংলাদেশের বাজারগুলোতে পদ্মার ইলিশ যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের রফতানি নীতি-২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রফতানিযোগ্য পণ্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ অনায্যভাবে, জণগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে।
নোটিশে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার যদি বিদেশিদের ইলিশের স্বাদ উপভোগ করাতে চায়, সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন করর্পোরেশন ‘ইলিশ উৎসব’ আয়োজন করতে পারে। যেখানে বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে বাংলাদেশে ভ্রমণ করে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করার। এমনকি আসন্ন দুর্গা পূজায় ভারতীয়দের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে বাংলাদেশে ভ্রমণ করে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করার। উল্লেখ্য যে, পর্যটন করর্পোরেশন আইন (বাংলাদেশ পর্যটন করর্পোরেশন অর্ডার) এর ধারা ৫ অনুযায়ী অনুযায়ী, পর্যটনের উন্নয়ন, বিকাশ, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করাসহ পর্যটনের সকল প্রকার উৎকর্ষ সাধনের দায়িত্ব পর্যটন করর্পোরেশনের। তাই আইনি নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ভারতে ইলিশ রফতানি স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বন্ধু হিসেবে ভারতে ইলিশ পাঠালেও ভারত বন্ধুত্বের নিদর্শন রেখেছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন সময়ে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অগ্রিম টাকা নিয়েও বাংলাদেশকে যথা সময়ে করোনার টিকা দেয়নি। চুক্তি অনুযায়ী সেরাম বাংলাদেশে টিকা পাঠানোর চেষ্টা করলে নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতের চাহিদার অজুহাত তুলে রফতানি বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে ভারত হঠাৎ করে বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করে দেয়। ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে ভারত দাবি করে দেশের জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ। ওই সব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে উড়োজাহারে করে ঢাকায় আনা হয়। সে সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেছিলেন, ‘ভারত নিজের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করা কখনো বন্ধ করে দেয়, আবার কখনো খুলে দেয়।’
দেশের বাজারে যখন ইলিশ সঙ্কট। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। ফলে দাবি বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষ্যে ইলিশ ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন ভারতে ইলিশ রফতানি কার স্বার্থে করা হচ্ছে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন দেশের চাহিদার কথা বিবেচনায় না নিয়ে ভারতে ইলিশ রফতানি করা হচ্ছে কেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।