Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে কী এনেছেন? জানতে চান মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আবারও কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় সে ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতবর্ষে। একটা মাত্র আশায় যে, ভারতে গিয়ে আবার কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তার জন্যে একটা ব্যবস্থা তারা করে আসবেন। কি এনেছেন ভারত থেকে? কিছুই না। ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এছাড়া তো কিছুই দেখছি না। যেদিন সমঝোতা স্মারক সই হয় সেইদিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আমাদের বাংলাদেশী একজন ১৪ বছরের বালককে, আরো দুই জন নিখোঁজ আছে। এটা অহরহ ঘটছে। সেটা(সীমান্ত হত্যা) কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইতি প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘রাজনীতি : পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বইটি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র সাবেক ছাত্র ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মো: হারুন-অর-রশিদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক- এটা আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তো বলতে থাকেন যে, এমন পর্যায় আপনাদের সম্পর্ক গেছে, সেই সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক -আপনাদের মন্ত্রী বলেন। এগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করতে করতে এবং মানুষ পুরোপুরিভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, একটা জাতির নির্মাণ হতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন জয়পুর এয়ারপোর্টে নৃত্যগীতে ভরপুর। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সেখানে অংশ নিয়েছেন। আমরা ছবিতে দেখলাম। দেশের মানুষকে যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি গুলি করে মারছেন, যখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনি গুলি করে মারছেন, যখন চাল-ডাল-তেলের দাম বৃদ্ধির পাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে গুলি করে মারছেন, যখন এদেশে চরম একটা অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেই সময়ে জয়পুরে গিয়ে আপনি নৃত্য গীতের সঙ্গে একসঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তা কখনোই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না।

দমনপীড়ন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না হুশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারকে বলছি, এই যে হাজার হাজার লোককে আহত করেছেন, গুলি করেছেন, মামলা করেছেন। আবার আগের মতো একই কায়দা মামলা করছেন। এসব করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তাদের অধিকার আদায় করে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সেই সংগ্রাম অবশ্যই মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তারা তা অর্জন করবে।

হাওড়ে উড়াল সেতুর প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, উড়াল সেতু নির্মাণে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছে। দেখবেন নিঃসন্দেহে সেটা গিয়ে পৌঁছাবে ২৬ হাজার কোটি টাকায়। এটার প্রয়োজন আছে কিনা, কত গুলো গাড়ি চলবে, ওখানে কী প্রয়োজন আছে তার সম্পর্কে কোনো কথা নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশে এখনো ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে, দুই বেলা দু’মুঠো খেতে পারে না, যেদেশের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে পায় না, যাদের ছেলে-মেয়েরা এখনো বিএ-এমএ পাস করে কোনো কর্মসংস্থান নেই। তারা মোটর বাইক চালাচ্ছে, রিকসা-ভ্যান চালাচ্ছে সেখানে আপনি (সরকার) বলছেন, উন্নয়নের রোল মোডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই কথাগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি একটা বেঈমানি করে গণতন্ত্র বিনাসী একটা শক্তি হয়ে উঠে- সমস্ত কিছু ধবংস করে দিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে কোথাও বিচার নেই, আইন শৃঙ্খলা ধবংস হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কল্পনা করা যায় যে, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে যারা সেখানে কথার আগেই গুলি করে মারে, গুলি করে হত্যা করে। পাকুন্দিয়ায় যে ছেলেটাকে কাছে থেকে গুলি করেছে তার ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে, তার লিভার ফুটো হয়েছে, তার কিডনি ফুটো হয়েছে- এখনো বেঁচে আছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বইটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। যখন দেশে ইতিহাস বিকৃতির সুপরিকল্পনা চলছে সেই মুহুর্তে এমন বই লিখে প্রকাশ করা কঠিন কাজ এবং প্রশংসনীয়। সাধারণত এ ধরনের বই গ্রহণযোগ্য হয় যখন নির্মোহভাবে লেখা হয়। লেখক রাজনীতি করলেও ইতিহাসের আলোকে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লিখেছেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান সবসময় একটা কথা বলতেন। ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’। সুতরাং দলের চেয়ে যদি দেশ বড় হয়; তাহলে আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব। আর যদি দেশের চেয়ে দলকে বড় মনে করি, দলের চেয়ে নিজেকে বড় মনে করি, সেখানেই স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ফুটে ওঠে। আজকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের মনোভাব এরকমই। তারা রাষ্ট্রকে সবার ঊর্ধ্বে নিতে পারেন না। দলগুলোও রাষ্ট্রকে দলের ঊর্ধ্বে নিতে পারে না। এই সংকীর্ণ মনোভাবের কারণেই দেশের অবস্থা এমন হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বইটির লেখক ও কলামিস্ট মো: হারুন অর রশিদ, প্রকাশক জহির দীপ্তি, স্বেচ্ছাসেবক দলের দফতর সম্পাদক মো: রফিকুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মো: নূরুজ্জামান প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ