Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসকদের আসতে দেরি হয় যেতে নয়

| প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হারুনুর রশিদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) থেকে : সকাল ৮টায় চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসার কথা থাকলেও তাঁরা আসেন ১০টার পর। বেলা সাড়ে ১২টার পর তাঁদের বেশিরভাগই চলে যান। এখানে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজিসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা তেমন একটা হয় না। এ অবস্থা লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলা ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বলছেন, চিকিৎসকসহ লোকবল ও যন্ত্র সংকটের পাশাপাশি নানা সমস্যার কারণে উপজেলার ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসা এই হাসপাতালটিই যেন রোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ইসিজি ও আল্টো যন্ত্র থাকলেও লোকবলসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত ছয় মাসের মধ্যে একদিনের জন্যও চালু হয়নি। এতে দালালদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে এ হাসপাতালে। সরেজমিনে গিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বেল্লাল ও ফিরোজসহ কয়েকজন জানান, সকাল ১০টার পর ছাড়া জরুরি বিভাগের কোনো ডাক্তার আসেন না। পুরো হাসপাতালে ৯টার পরও কোনো চিকিৎসক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাওয়া গেল না। ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন কক্ষ ও শয্যাগুলো অপরিচ্ছন্ন। সকাল সাড়ে নয়টার পর চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসতে শুরু করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহারিয়া শায়লা জাহান আসেন বেলা পৌনে ১১টায়। তিনি বেশিরভাগই সিজার অপারেশন নিয়ে থাকেন ব্যস্ত। এছাড়াও হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড় অনেক বেশি। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে কোন শিশু ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা না নিয়েই শহর এবং গ্রাম থেকে আসা অনেক রোগীকে চলে যেতে হচ্ছে। তবে অল্প সমস্যা এধরনের কিছু শিশু রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নুসরাত জাহান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে চিকিৎসা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এজন্য ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। ওইদিন থেকে প্রায় দশ বছর পেরিয়ে গেলেও ৫০ শয্যার হাসপাতালের কোনো সুফল পাচ্ছেন না জনগণ। ৩১ শয্যার হাসপাতালের জন্য যে লোকবল থাকার দরকার, তা-ও নেই এখানে। বিভিন্ন সরঞ্জামের সমস্যাও রয়েছে। বর্তমানে শিশু বিভাগ, অর্থোপেডিক্স, অবেদনবিদ, সার্জারি, মেডিসিন, চক্ষু, কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌন ও নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য। শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে অনেক রোগী ফিরে যান। এছাড়া ১৫ জন নার্সের বিপরীতে আছেন মাত্র ২ জন। এদিকে অর্থপেডিক্স ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার এই দুই ডাক্তার একদিনের ছুটিতে এক বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। এক্স-রে যন্ত্র থাকলেও প্রায় এক যুগ ধরে অপারেটর না থাকায় সেটি পড়ে রয়েছে। রায়পুর পৌর মেয়র ইসমাইল খোকন বলেন, রায়পুর সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন সকাল ১০টার পরে আসেন, আবার ১টার আগেই চলে যান বলে প্রায় সময় বিভিন্ন রোগীরা তাকে ফোনে জানান। এছাড়াও যিনি এসব সমাধান করবেন, তিনি (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) নিজেও দেরিতে আসেন। দিন দিন হাসপাতাল উন্নতি না হয়ে পদে পদে অনিয়ম-দুর্নীতি আর অবহেলার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি টিএসওকে বলেও কোনো লাভ হচ্ছেনা। রোগীদের কথাতো অনেক দূরে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শাহারিয়া শায়লা জাহান বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার সংকট ছাড়া কোনো সমস্যা ও অনিয়ম নেই। প্রতিদিন সিজার করাসহ নানা প্রশাসনিক কাজের জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই কিছু সময় দেরি হয়। ইসিজি ও আল্টো যন্ত্র সমস্যা দেখা দেয়ায় এই পরীক্ষাগুলো কম করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ