Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কালীগঞ্জে মাদকের সর্বনাশা মরণ ছোবল

| প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ও আশপাশ গ্রামে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। বিকাল হলে জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ইয়াবায় আসক্ত ব্যক্তিরা ভিড় করছে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা বাজারে। এলাকাবাসী অভিযোগ, ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বর আনোয়ার হোসেন নিজেই এই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজে মেম্বর ও সরকারি দলের নেতা পরিচয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন ইয়াবা খোরদের বিরাট সাম্রাজ্য। মোটরসাইকেলে জেলার বিভিন্ন বাজারে তিনি ইয়াবা পৌঁছে দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। ইয়াবায় আসক্তদের জন্য পূর্ব বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে মৃত মসলম উদ্দীনের ছেলে আব্দুল মমিনের পুকুর পাড়ে দুইরুম বিশিষ্ট ঘর তোলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আব্দুল মোমিনের সার গোডাউনটি দখল করে নিয়েছেন আনোয়ার মেম্বার। আর সেখানেই নির্বিঘেœ চলছে ইয়াবা সেবন আর কেনা-বেচার জমপেশ ব্যবসা। সরেজমিন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ার মেম্বর এক সময় বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডার ছিলেন। তার অস্ত্রধারী ক্যাডারদের ভয়ে মানুষ তটস্থ থাকতো। বহু মানুষকে তিনি পিটিয়ে জখম করেছেন। বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির শোচনীয় পরিস্থিতিতে তিনি যোগ দেন বিএনপিতে। বিএনপিতে যোগ দিয়ে আনোয়ার মেম্বর হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। তার অত্যাচারে বালিয়াডাঙ্গার বিপুল কুমারসহ এলাকার অসংখ্য সংখ্যালঘু ভারতে পাড়ি জমান। দখল করে নেন তাদের সহায় সম্পদ। বিএনপির মধু শেষ হলে মাদক স¤্রাট আনোয়ার আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান গ্রুপে যোগ দেন। শুরু হয় আনোয়ার মেম্বরের নতুন মিশন। বিচারের নামে চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসা তার প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে। আবু তাহেরের মেয়ের প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে বিচারের নামে ৪০ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করা হয়। বানুড়িয়া গ্রামের আনসার আলীকে বাজারে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের তনু মিয়ার দুবাই প্রবাসী ছেলে শাহজাহান বাড়ি আসলে রানী ঘটিত কেলেংকারী দিয়ে তার পাসপোর্ট আটকিয়ে ৩৮ হাজার টাকা আদায় করে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, নাটোর জেলার বাঁশিওয়ালা বিল্লাল হোসনের স্ত্রী ছিল সুন্দরী। আনোয়ার মেম্বরের কু-নজর পড়ে তার দিকে। এরপর বিল্লালের স্ত্রীকে এক হিন্দুর বিয়ের বরযাত্রী হিসেবে নিয়ে যায় এবং সারা রাত মদ পান করে ফুর্তি মারে। বিষয়টি জানতে পেরে বাঁশিওয়ালা বিল্লাল জীবন বাঁচাতে রাতের আঁধারে স্ত্রী সন্তান ফেলে পালিয়ে যায়। বিল্লালের সাজানো সংসার ভেঙে দেয় আনোয়ার মেম্বর। বিষয়টি সে সময় ৬নং ত্রিলোচানপুর ইউনিয়ানের সাবেক চেয়ারম্যন জয়নালকে জানিয়েও কোন সুবিচার পাননি বিল্লাল। তবে সাবেক চেয়ারম্যন জয়নাল আবেদিন ঘটনাটি সত্য বলে স্বীকার করেছেন। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে মাদক ব্যবসা ছাড়াও এ ধরনের হাজারো অপকর্মের নায়ক হচ্ছে আনোয়ার মেম্বর। তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। মেম্বর নির্বাচিত হলেও গণমানুষের তিনি কোন উপকার করেন না বলে অভিযোগ। তার ধ্যান জ্ঞান মাদক ব্যবসা নিয়ে। কোন মানুষ বিপদে পড়লে টাকা ছাড়া তার কোন সাহায্য পান না ভোটাররা। বিষয়টি নিয়ে আনোয়ার মেম্বরের সাথে কথা বলার জন্য তার ০১৭১২-৭৯৮৭৬৫ নম্বরের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, আনোয়ার মেম্বরের নামে ইতোপূর্বে একটি ফেনসিডিলের মামলা রয়েছে। তিনি আরো জানান, আনোয়ার হোসেন মেম্বর নির্বাচিত হওয়ার পর পুলিশ তাকে দুই বার আটক করে। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলাকাবাসী আনোয়ার মেম্বরের মাদক সম্রাজ্য ধ্বংসে পুলিশ সুপার ও র‌্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ