Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পাম্প হাউস চালুর সম্ভাবনা : কুশিয়ারার পানি বন্টনে চাষাবাদের আশা জাগানিয়ায় সিলেটে ৩টি উপজেলায়

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৪১ পিএম

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিতে সিলেটের তিন উপজেলায় কৃষিতে এখন আশা জাগানিয়া। সেখানে অন্তত ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে ২০১০ সালে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রহিমপুর খালের উৎসমুখে নির্মিত একটি পাম্প হাউস চালুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ‘প্রায় ৬ বছর আগে পাম্প হাউস ও খালের উন্নয়নকাজ শেষ হলেও কার্যত অচল ছিল পাম্প হাউসটি।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সেচের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে অনবাদি ছিল সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও কানাইঘাট উপজেলার বিস্তীর্ণ জমি। তা এবারে আসবে চাষাবাদের আওতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে তার মধ্যে আছে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে কুশিয়ারা নদী থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়টি। এ চুক্তির বাস্তবায়ন সিলেটের চাষাবাদে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মত বিশ্লেষকদের।

ভারতের বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ভাগ হয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারায়। কুশিয়ারার উৎসমুখ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শরীফগঞ্জ বাজার। এই বাজারের কাছেই কুশিয়ারা নদী থেকে উৎপত্তি রহিমপুর খালের। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রাকৃতিক খাল থেকে উৎপত্তি হয়েছে আরও অসংখ্য খালের। আশপাশের এলাকার কৃষকদের সেচের প্রধান উৎস এই খালগুলো। তবে বর্ষায়ও তেমন পানি থাকে না এই খালগুলোতে। আর শুষ্ক মৌসুমে একেবারে শুকিয়ে কাঠ।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর ঢলের কারণে এখন সিলেটের নদ-নদীগুলো পানিতে ভরপুর। তবে জকিঞ্জের শরীফগঞ্জ বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রহিমপুর খালে হাঁটু পানি। হেঁটেই এই খাল পার হচ্ছেন স্থানীয়রা।

বারগাত্তা গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে খাল শুকিয়ে যায়, তখন শুকিয়ে যায় পুরো গ্রাম। গ্রামের পুকুরেও থাকে না পানি। জকিগঞ্জ একসময় সুপারির জন্য বিখ্যাত হলেও সুপারিগাছও মরে যায় শুকনো মৌসুমে। পানি সমস্যা কাটলে চাষাবাদ বাড়বে এখানে।’

স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে একদম শুকিয়ে যায় রহিমপুরসহ আশপাশের খালগুলো। ফলে বোরো ও আমন মৌসুমে সেচের অভাবে চাষাবাদ করা যায় না খালের পাশের জমিতে। পানিবণ্টন চুক্তির ফলে আশার আলো দেখছেন এলাকাবাসী। আবারও জমিগুলো ফসলে ভরে উঠবে বলে মনে করেন তারা। ব্যাপক পরিবর্তন আসবে জকিগঞ্জ কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার চাষাবাদে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় জানায়, উৎসমুখে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় কয়েক যুগ ধরে রহিমপুর খাল শুকনো মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য ও আরও বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের চাষাবাদ উপযোগী থাকে না। ফলে যুগের পর যুগ জমিগুলো পড়ে আছে অনাবাদি অবস্থায়।

এসব জমিকে চাষের আওতায় আনতে আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে ২০১০ সালে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রহিমপুর খালের উৎসমুখে একটি পাম্প হাউস নির্মাণ করা হয়। রহিমপুরসহ আশপাশের কিছু খালের উন্নয়নকাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর আগে প্রকল্পের সুবিধার্থে ২০০৯ সালে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে খালের উৎসমুখে বাঁধ দেয়া হয়। ২০১৬ সালে খাল উন্নয়ন ও পাম্প হাউসের নির্মাণকাজ শেষ করে পাউবো। পাউবো কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের কাজ শেষে রহিমপুর খালে পানিপ্রবাহ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তখন উৎসমুখে নির্মিত তৈরি বাঁধ অপসারণ করতে গেলে বাধা দেয় ভারত। কুশিয়ারা নদীর ঠিক মাঝ দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা থাকায় বাংলাদেশের এই পাড়টি নোম্যানসল্যান্ডের অংশ।

বিষয়টি সুরাহা করতে ২০১৬ সাল থেকে দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। গত ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধানমশ হয়। তারপর চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়। সেই চুক্তিতে সই করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

জকিগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শেখ ফরিদ বলেন, ‘রহিমপুর খাল দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার করার মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধা হবে নিশ্চিত। খালের ভাটিতে থাকা হাওরাঞ্চলেও বোরো চাষাবাদ সম্ভব হবে। ‘রহিমপুর খাল ও সংযুক্ত অন্যান্য খালের পাড়ের জমি অত্যন্ত উর্বর। কিন্তু শুকনো মৌসুমে সেচ সংকটে এসব জমিতে রবিশস্য ফলানো সম্ভব হয় না। রবিশস্য না হওয়ায় উপজেলার শীতকালীন সবজি চাহিদা মেটাতে নির্ভও করতে হয় অন্য এলাকার ওপর।’

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘প্রায় ৬ বছর আগে পাম্প হাউস ও খালের উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছিল। দীর্ঘ সময়ে খালের অনেকাংশে ক্ষতি হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বাঁধ অপসারণ ও পাম্প হাউস চালু করা যাবে। তাতে আগামী শুকনো মৌসুমেই এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।’ এদিকে, জকিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল বলেন, পানিবণ্টন চুক্তির পর সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জকিগঞ্জের পাশাপাশি, বিয়ানী বাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার চাষিরাও উপকৃত হবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ