বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতিতে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে মারাত্মক সংকট তৈরী হয়েছে। একই কারণে এবার খরিপÑ১ মৌসুমে আউশ আবাদ এবং উৎপাদনেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ভাদ্র মাস শেষ হতে চললেও ৮০ ভাগ জমিতেও আমনের আবাদ সম্পন্ন হয়নি। হাতে সময় আছে মাত্র ১ সপ্তাহ। একদিকে বৃষ্টি অভাবে এবার কৃষকরা সময়মত বীজতলা তৈরী করতে পারেনি, আবার শ্রাবনের শেষ পূর্ণিমায় লঘুচাপে ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের পানির সাথে কয়েকদিনের অতি বর্ষণে এ অঞ্চলের আমন বীজতলার প্রায় পুরোটাই প্লাবনের শিকার হওয়ায় তা বিনষ্ট হয়েছে। প্লাবন কেটে যাবার পরে আবার বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে বুধবার পর্যন্ত বীজ সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল আবাদী জমিতেই আমন রোপন সম্ভব হয়নি।
অথচ চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টরে জমিতে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। এমনকি বৃষ্টির অভাবে সদ্য সমাপ্ত খরিপÑ১ মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলে আউশের আবাদ ও উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসে। আউশ আবাদে লক্ষ্যমাত্রার অনেক পেছনে এবার খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চল। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার ২ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরে আউশের আবাদ হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর পেছনে।
এমনকি বৃষ্টির অভাবে সারা দেশেই এবার আউশ আবদের পরিমান প্রায় ১২Ñ১৫% পর্যন্ত হ্রাস পায় বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই সূত্র জানিয়েছে। দক্ষিনাঞ্চলেও ২ লাখ হেক্টর থেকে আবাদ ১ লাখ ৭৬ হাজারে হ্রাস পেয়েছে। যা ছিল সম্প্রতিককালের সর্বনি¤ন । দক্ষিণাঞ্চল ইতোমধ্যে প্রায় ৮৫ভাগ জমির আউশ কর্তন সম্পন্ন হলেও ৬.১৬ লাখ টন চাল প্রাপ্তির সম্ভবনা যথেষ্ট ক্ষীন হয়ে এসেছে। বৃষ্টির অভাবে আবাদ লক্ষ্য অর্জিত না হবার পাশাপাশি গত মাসের অতিবৃষ্টির সাথে জোয়ারের প্লবনেও বিপুল আধাপাকা ও পাকা আউশ ধানের জমি প্লাবিত হয়। ফলে কাঙ্খিত উৎপাদন লক্ষ্য পিছিয়ে গেছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
গত এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটরের স্থলে মাত্র ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫.৬% কম। মে মাসেও আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ২৪৫ থেকে ৩১০ মিঃমিঃ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও বাস্তবে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬% কম । অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত কয়েকদিনের অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুনে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের স্থলে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ছিল ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি। কিন্তু ঐ মাসে প্রকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল মাত্র ২৬৮.৫ মিলিমিটার। যা ছিল স্বাভাবিকেরও ৪৪.৪৫% কম। জুলাই মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের প্রায় ৬৫% কম। আর সদ্য বিদায়ী আগষ্টে বরিশালে ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬২ মিলি। যা ছিল স্বাভাবিকের ১৬.৪% কম।
অপরদিকে বিগত দুটি বছর ভাদ্রের অমাবশ্যায় প্রবল বর্ষণের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে ব্যাপক প্লাবনের সৃৃষ্টি হলেও এবার আগষ্টের শেষে সে সময় অতিবাহিত হলেও কিছুটা স্বস্তিতে কৃষকগন। তবে পুরো মাস যুড়ে বৃষ্টির আকাল ছিল জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সহ কৃষির জন্য বিপর্যস্তকর। চলতি সেপ্টেম্বরেও স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালে ২৮৫-৩৫০মিলি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০ মিলিমিটারও বৃষ্টি হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন স্বাভবাবিক বৃষ্টির অপক্ষোর প্রহন গুনছেন।
কারণ আমন রোপনের সময় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু বীজ সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের ২০ ভাগ জমি এখনো অনাবাদী। বরিশাল,পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনার অনেক এলাকাতেই আমন বীজ সংকটে কৃষকের হাহাকার চলছে। এর মূল কারণও বৃষ্টির অভাবে বীজতলা তৈরী করতে না পারা সহ গত মাসে সেসব বীজতলা ও রোপা আমন প্লাবনের শিকার হওয়া। বরিশালের সদর উপজেলার চরমোনাই ইাউনিয়নের গ্রামের পর গ্রামের জমি খা খা করছে। একদিকে বৃষ্টির অভাবে জমি তৈরী হয়নি, অপরদিকে বীজ নেই। আছে শুধু কৃষকের হাতাশা।
তবে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, কৃষকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে আমন রোপনের চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছতে। আবহাওয়া কিছুটা অনুকুল থাকলে, বীজ সংগ্রহ করে রোপন সম্ভব হতে পারে বলেও আশার কথা শোনান অতিরিক্ত পরিচালক। তবে কাথায় চাড়া বীজ মিলবে তা বলতে পারেন নি ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। কারণ এখন আর বীজতলা তৈরী করে রোপনের সময় নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।