Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সেই নাসিমার দুই খুনির মুখেই বেড়িয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৩০ পিএম

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর একটি সমতল বনভূমির জঙ্গল থেকে কাকের ডাকে সনাক্তের পর মাটি খুঁড়ে উদ্ধারকৃত নাছিমা বেগম এর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। হত্যাকান্ডের ৫ দিন পর লাশ উদ্ধার এবং লাশ উদ্ধারের ১১ দিন পর চাঞ্চল্যকর তথ্যের পাশাপাশি গ্রেফতার করেছে দুই অপরাধীকেও।

পুলিশ জানায়, গত ২০ আগস্ট শনিবার বিকেলে পূর্ব মানিককুড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন গ্রাম পুলিশ আমির আলীর স্ত্রী ও ৫ সন্তানের জননী নাছিমা বেগম (৩৫)। এরপর ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার নাছিমার স্বামী নালিতাবাড়ী থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে নাছিমার মা’সহ স্বজনেরা বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে থাকা বিশিগিরিপাড়া গ্রামে বন বিভাগের সমতল বনভূমির জঙ্গলে নাছিমার সন্ধান করছিলেন। এসময় একদল কাক জঙ্গলে ডাকাডাকি করায় নাছিমার মা ঝোপের মাঝে ডুকে গন্ধ ও মাছির উপস্থিতি টের পান। পরে আরও সামনে এগুলে মাটিতে পুঁতে রাখা লাশের দেহাবশেষ বেড়িয়ে থাকায় হাতের চুরি ও ওড়না দেখে মেয়ের লাশ সনাক্ত করেন তিনি। খবর পেয়ে থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ও র‌্যাব সদস্যরা গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত ও লাশ উদ্ধার করে।

পরে পুলিশ বিভিন্নভাবে তদন্ত করে পাশ্ববর্তী বিশগিরি পাড়ার আফাজ উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলামের সম্পৃক্ততা থাকার প্রমান পায়। পরে তাকে ঢাকার বংশাল থেকে ৪ সেপ্টেম্বর রাতে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্যে ৫ সেপ্টেম্বর রাতে খুনের সাথে যুক্ত একই এলাকার হেলিম মিয়া ওরফে ইলিমকে (৪০) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে দুই খুনির দেয়া তথ্যে ও পুলিশি তদন্তে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য, ২০ আগস্ট শনিবার বিকেলে ওই বাগানের পাশে থাকা নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে ৫০ টাকা ধার চান গৃহবধু নাছিমা। এসময় ৫০ টাকা ধার দিলে নজরুলের স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় নাছিমা তাকে শারিরিক সম্পর্কের কথা বলে বাগানে ডেকে নিয়ে যান। ঝোপের আড়ালে গিয়ে দু’জনে মিলে প্রায় ২০-২৫ মিনিট শারিরিক সম্পর্ক করে বেড়িয়ে আসছিলেন। এসময় সেখান দিয়ে আসতে থাকা হেলিম ওরফে ইলিম তাদের দেখে ফেলে বিষয়টি প্রকাশের ভয় দেখায়। একপর্যায়ে নাছিমাকে টেনে ঝোপে নিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সাথে থাকা অলঙ্কার খোলে নেওয়ার চেষ্টা করে হেলিম। এতে বাঁধা দেয় নাছিমা। সে আরো জানায় এ ঘটনা মানুষকে জানিয়ে দিবে। এসময় নাসিমার গলায় থাকা ওড়না দিয়ে তাকে গলায় পেচিয়ে ধরে এবং নজরুলকে টেনে ধরতে বলে হেলিম। পরে উভয়ে মিলে দুইপাশে টেনে ধরলে নাছিমা শ্বাসরোধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এসময় হেলিম নাছিমার বুকে কয়েকটি লাথি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এরপর হেলিমের কথামতো নজরুল বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে প্রথমে একটি গর্ত করার চেষ্টা করে। হেলিম তা নিষেধ করে ঝোপের ভিতরে গিয়ে আরেকটি গর্ত করে নিজেই। এরপর নজরুল কাঁধে করে নাছিমাকে নিয়ে সেখানে উভয়ে মিলে নাছিমাকে মাটিচাপা দেয়। এসময় সাথে থাকা অলঙ্কারও খোলে নেয় হেলিম।

এদিকে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উভয়ের জবানবন্দি গ্রহণকালে তারা দোষ স্বীকার করেছে। আমরা যতটুকু জানি, ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করার পর আদালতেও তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবনবন্দী প্রদান করেছে । পুলিশ এ ঘটনাটি গুরত্বসহকারে তদন্ত করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ