Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদগঞ্জের উটতলীতে শুরু হচ্ছে সেতু নির্মাণ

অ্যাপ্রোচ সড়ক নিয়ে স্থানীয়দের আপত্তি

মামুনুর রশীদ পাঠান, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত স্বপ্নের সেতু উটতলী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে এ মাসেই। ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজার এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ তা নিশ্চিত করেছে। ১৩টি স্প্যানের ওপর নির্মিতব্য দৃষ্টিনন্দন সেতুটি নির্মিত হলে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরবর্তন আসবে।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চল এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুলাইয়ে একনেক সভায় উটতলী খেয়াঘাটে সাড়ে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্য ১০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন হয়। ওই বছর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ পায় ঢাকার দোহার উপজেলার মো. আইয়ুব আলীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ। ২০২১-২২ অর্থবছরে কাজ শেষ করা কথা। কিন্তু গত দুই বছরে কাজ শুরু করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে সম্প্রতি সেতুটির অলিপুর অংশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসে সেতুর মালামাল আসা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে সেতুর এপ্রোচসড়কের জমি অধিগ্রহণ শুরু না হলেও সম্ভাব্য সড়কের দুই পাশে লাল নিশানা লাগিয়েছে সেতুর প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। যদিও এই বিষয়ে আপত্তি রয়েছে স্থানীয়দের। স্থানীয় বাছপাড় মিঝি বাড়ির হুমায়ুন কবির তার বাড়ি ও মসজিদের ওপর দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করে এর প্রতিকারে উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করেছেন। হুমায়ুন কবির জানান, কর্তৃপক্ষ সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য লাল নিশানা তার বাড়ির ছাদ এবং মসজিদের সম্পত্তির ওপর দিয়ে নিয়ে গেছে। অথচ রাস্তার উভয় পাশে সমান অধিগ্রহণ হলে এসব সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব।
সরেজমিন দেখা যায়, চাঁদপুর সেচপ্রকল্প বেড়িবাঁধ (সিআইপি) সড়কে মুন্সীরহাট বাজারের পাশ দিয়ে উটতলী সেতুর এপ্রোচসড়কের জন্য জমির দুই পাশে লাল নিশানা লাগানো হয়েছে। অন্যদিকে হাজীগঞ্জের অলিপুর অংশেও একইভাবে লালনিশানা টানানো হয়েছে।
উটতলী ঘাটে এলাকায় দেখা যায়, খেয়াঘাটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। প্রতিবার পার হওয়ার জন্য ইজারাদারকে ৫ টাকা ও নৌকার মাঝিকে ৫ টাকা করে দিতে হয়। এতে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারে যাতায়াতের সময় টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জের অলিপুরের শিক্ষার্থীদের মুন্সীরহাটে স্কুল-কলেজ, মাদরাসায় আসা-যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়ছে। শিক্ষার্থী আলমগীর, লায়লা আক্তার, অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা, নুর জাহানসহ একাধিক ব্যক্তি এ কথা বলেন।
সিএনজি চালক হানিফ, আরিফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, শাহপারান জানান, আমরা এখন অলিপুর থেকে কৈয়ারপুল পর্যন্ত যাত্রী আসা নেয়া করি। সেতুটি নির্মিত হলে যাত্রীও বাড়বে, আমাদের আয়ও বাড়বে।
মুন্সীরহাট গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, গত দুই বছর ধরে ধরে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। অবশেষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে কাজ শুরু করেছে দেখে ভাল লাগছে। মুল সেতুর কাজ শুরুর অপেক্ষা। সেতুর জন্য সাবেক সিনিয়র সচিব নূরুল মানিকের প্রতি কৃতজ্ঞ।
উটতলী খেয়াঘাটের ইজারাদার তাফাজ্জল হোসেন বলেন, একসময় এই ঘাট দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার লোক পারাপার করত। তখন ১ টাকা করে নিলেও অনেক টাকা হতো। এ বছর ২ লাখ টাকার ইজারা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
সুরমা এন্টারপ্রাইজের সাইট ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল বলেন, ১৩টি স্প্যানের ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজ যোগে মালামাল আসা শুরু হবে। এরপরই দ্রুত কাজ শুরু হবে মূল সেতুর। আমরা এখন সাইট নির্মাণ করছি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ জানান, চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই উদ্বোধনের মাধ্যমে সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলে এপ্রোচসড়কের টেন্ডারও দ্রুত করা হবে। এখন এপ্রোচসড়কের এলাইন্টমেন্টের কাজ চলছে। অন্যদিকে সংযোগ সড়ক বিষয়ে হুমায়ুন কবিরের আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার বলেন, এপ্রোচসড়ক এখনো চুড়ান্ত হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ