Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৪ মাস পরেও সৌদিতে নিহত কমলনগরের প্রবাসীর লাশ দেশে আনার উপায় পাচ্ছেননা পরিবার- রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চান পিতামাতা

কমলনগর(লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:০৯ পিএম

সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের নিকটতম আল হারমোলিয়াহ এলাকার একটি ছাগলের খামারে নিহত বাংলাদেশী যুবক আবদুর রহমানের লাশ দেশে আনার কোন উপায় পাচ্ছে না তার পরিবার। পিতামাতা জানে না লাশ আনতে কি করতে হবে? কোথায় যেতে হবে? ঘটনার পর অতিবাহিত হয়েছে ৪ মাস। বাবা মা পাগলের মতো ছুটছেন এদিক ওদিক। পরিবারের দাবী মালিকপক্ষের লোকেরা রহমানকে নির্যাতনে হত্যা করে। গত ১ মে সৌদি আরবের পুলিশ নিহতের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নিহতের বাবা মোঃ হানিফ ও ভাই আবুল কাশেম এ তথ্য জানায়। আবদুর রহমান লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডস্থ উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

সোমবার নিহত রহমানের ছোট বোনের স্বামী সৌদি প্রবাসী মোঃ ইউছুপ মোবাইল ফোনে জানায়, শালার লাশ দেশে পাঠানো এবং কিভাবে সে মারা গেছে তা জানার জন্য কয়েক বার সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন তিনি। কিন্ত দূতাবাস থেকে মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে ভালো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে তিনি সৌদি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ তাকে জানিয়েছে রহমানের মৃত্যুর প্রতিবেদন বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। লাশ বর্তমানে সৌদি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এখন যা জানাবে সব বাংলাদেশ দূতাবাস জানাবে। এদিন দুপুরে সৌদি দূতাবাসের একটি নাম্বারে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে নিহত রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়িতে মা বাবা আহজারি করছেন। তারা যে কোন ভাবে ছেলের লাশ দেশে আনতে চান এবং ছেলেকে হত্যার বিচার চান। সেজন্য তারা সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সরকারের সহযোগিতা চান।

পারিবারিক ভাবে জানা যায়, গত ১ মে সৌদি আরবের পুলিশ রহমানের রক্তাক্ত লাশ তার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করলেও পরিবার ৫ দিন পর সে খবর জানতে পারে পরিবার। সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানায়, আবদুর রহমানকে খুন করে তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি চাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে সেখানকার মালিকপক্ষ। তবে উক্ত ঘটনায় পুলিশ এক সৌদি নাগরিক ও একজন সুদানি নাগরিককে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানান নিহতের পরিবার।

জানাজানি হলে গত ১০ মে ছেলেকে হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে সৌদি সরকারের নিকট লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আবেদন করেছেন আবদুর রহমানের বাবা মোঃ হানিফ। ১৪ মে তারিখে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তাকে একটি প্রাপ্তি স্বীকার দিয়েছে। এরপর প্রশাসন বা অন্য কোন পক্ষ থেকে আর কোন তথ্য কেউ জানতে চায়নি বলে জানান, মোঃ হানিফ।

নিহতের মা লাকী বেগম জানায়, সংসারে অভাব অনটনের কারণে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশের এক আত্মীয়র মাধ্যমে ২০১৯ ছেলেকে সৌদি পাঠান। কিন্ত সৌদি গিয়ে জানতে পারে তার চাকুরী মরুভূমিতে উট চরানো। এ কাজ করা তারপক্ষে মোটে সম্ভব ছিল না। তবুও বহু কষ্টে তিনি ২ বছর কাটিয়েছেন। করোনার সময়ও তার কোন ছুটি ছিল না। এর মাঝে কারণে অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করতো। পরে অতি নির্যাতনে সে সেখান থেকে একদিন তিনি পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে। কিন্ত এখানে গিয়েও সে জানতে পারে তার কাজ মরুভূমিতে ছাগলের খামারের শ্রমিক। নতুন কর্মক্ষেত্রে সুদানি সহকর্মীদের সাথে তার প্রায় ঝগড়া হতো। পরে ১ মে তারিখে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখেছে বাবা-মা। অন্যদিকে ছেলের লাশ দেশে আনতে আহাজারি করছে অসহায় পরিবার।

লাকী বেগম জানায়, সৌদি আরবে ঈদের আগের দিন বিকেল বেলায় ছেলের সাথে তার শেষ কথা হচ্ছিল। কথা বলার এক ফাঁকে হঠাৎ করে আবদুর রহমান চিৎকার দিয়ে বলে উঠে মা আজরাইল আসে। এ কথা বলেই ফোন কেটে রেখে দেয়। এরপর এদিক থেকে বারবার ফোন দিয়েও আর তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাড়ি থেকে পর পর দুদিন তার ফোনে যোগাযোগ করে যখন কোন উত্তর পাওয়া যায়নি, তখন ঘটনাটি তিনি তার মেয়ের জামাই সৌদি প্রবাসী মোঃ ইউছুপকে জানায়। পরে ইউছুপ আল হারমোলিয়াহ এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আবদুর রহমানের সাথে তার সুদানি এক সহকর্মীর ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার একদিন পর রহমানের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। ইউছুপকে সেখানকার স্থানীয়রা জানায়, আবদুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। পরে ইউছুপ স্থানীয় হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার লাশ দেখে আসে।

বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদগস্যরা জানায়, সুদানি কোন একসহকর্মী এবং মালিকের একআত্মীয় রহমান কে খুন করে গাড়ি চাপায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার করে। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রহমানের লাশের মাথার পিছনে জখম রয়েছে। শরীরের বাকি অংশগুলো অক্ষত।

এঘটনায় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো” কামরুজ্জামান জানায়, নিহত রহমানের প্রকৃত ঘটনা জানতে ও লাশ দেশে আনতে পরিবার তার নিকট আবেদন করেছিল। তিনি সে আবেদন জেলা প্রশাসককে জানিয়েন। অন্যদিকে সোমবার রহমানের পরিবার স্থানীয় এক দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গেছেন।বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি পুলিশেকে নির্দেশ দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ